ইলেকট্রনিক পণ্য
ফ্রিজ–এসির চাহিদা ও বিক্রি বাড়ছে
দেশের বাজারে এসি ও ফ্রিজের বিক্রি বাড়লেও অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্যের বেচাকেনা নিম্নমুখী প্রবণতায় রয়েছে বলে দাবি কোম্পানিগুলোর।
সাধারণত গরমের মৌসুমে দেশের বাজারে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) এবং ফ্রিজের চাহিদা ও বিক্রি বেড়ে যায়। এবারের গ্রীষ্মে তো প্রচণ্ড দাবদাহ চলছে। যে কারণে এসি বিক্রি প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশি বেড়েছে। পাশাপাশি ফ্রিজ এবং ফ্যানের বিক্রিও ভালো বলে জানিয়েছে কোম্পানিগুলো।
অন্যদিকে কয়েক মাস ধরে বাজারে অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্যের বেচাকেনা নিম্নমুখী প্রবণতায় রয়েছে। এসব পণ্য বিক্রি প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। বেশ কয়েকটি ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানান।
এসির তেজি ভাব, ফ্রিজ বিক্রিও ঊর্ধ্বমুখী
মূলত দুই ঈদের সময় গৃহস্থালিতে ব্যবহার্য ইলেকট্রনিকসামগ্রী সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। তবে গত রোজার ঈদে প্রায় সব কোম্পানিরই এসি বিক্রি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ঈদের ঠিক আগমুহূর্তে কয়েক দিনের প্রচণ্ড দাবদাহ ছিল এর প্রধান কারণ। দেশীয় কোম্পানি ওয়ালটন লক্ষ্যমাত্রার আড়াই গুণ ও সিঙ্গার দ্বিগুণ পরিমাণে এসি বিক্রি করেছে। ট্রান্সকম ও ভিশন ইলেকট্রনিকস জানিয়েছে, ঈদের আগে তাদের এসির মজুত প্রায় শেষের দিকে চলে গিয়েছিল। ইলেকট্রা ও ইলেকট্রোমার্টসহ অন্যান্য কোম্পানিও মোটামুটি একই ধরনের কথা বলেছে।
জানতে চাইলে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের রেফ্রিজারেটর ইউনিটের প্রধান ব্যবসা কর্মকর্তা (সিবিও) তোফায়েল আহমেদ জানান, ‘এসির জন্য এত চাহিদা অতীতে দেখা যায়নি। গ্রাহক চাহিদা মেটাতে আমরা সে সময় রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছিলাম।’
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ভিশন ইলেকট্রনিকসের নির্বাহী পরিচালক নুর আলম বলেন, এসির জন্য যে ব্যাপক চাহিদা ছিল, তা এখন কিছুটা কমেছে। তবে বিক্রির ধারাবাহিকতা এখনো সন্তোষজনক।
ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকসের বিপণন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. মাহবুব হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই মৌসুমের ফ্রিজ বিক্রি বাড়তে শুরু করেছে। কোরবানির আগে তা আশানুরূপ জায়গায় পৌঁছাতে পারে।’
বিশ্ববাজারে এখন আবার কাঁচামালের চাহিদা ও দাম বাড়ছে। এটা অব্যাহত থাকলে কয়েক মাস স্থানীয় বাজারে পণ্যের দাম আবার বাড়তে পারে।
ডলারের দামের প্রভাব বাজারে
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ইলেকট্রনিক হোম অ্যাপ্লায়েন্স বা গৃহস্থালিতে ব্যবহার্য ইলেকট্রনিক পণ্যের প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি বাজার রয়েছে। ২০২২ সালের হিসাব অনুসারে প্রতিবছর এই বাজার ২০ থেকে ২৫ শতাংশ করে বাড়ছে। একসময় শতভাগ আমদানিনির্ভর ছিল গৃহস্থালিতে ব্যবহার্য ইলেকট্রনিক পণ্যের বাজার। তবে বর্তমানে বেশির ভাগ পণ্যই স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বা সংযোজিত হচ্ছে। বৈশ্বিক একাধিক কোম্পানি দেশে তাদের কারখানা স্থাপন করেছে।
ইলেকট্রনিক পণ্য প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো কাঁচামালের জন্য আমদানির ওপর নির্ভরশীল। এই কাঁচামাল আমদানির ব্যয় অনেক দিন থেকেই বাড়তি। করোনার কারণে ২০২০ সালে বৈশ্বিক বাজারে ইলেকট্রনিক পণ্যের কাঁচামালের দাম দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া পরিবহন খরচও কয়েক গুণ বাড়ে। তবে ২০২১ সালের শেষে দাম আবার কমতে শুরু করে। কিন্তু গত বছর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে কাঁচামালের মূল্য আবার বৃদ্ধি পায়। এর ওপর রয়েছে ডলার–সংকটের প্রভাব। কারণ, ডলারের বিনিময় হার অনেক বেড়ে যাওয়ায় কাঁচামাল আমদানির খরচ ৩০ শতাংশ বেড়েছে।
সিঙ্গারের কনজ্যুমার ইলেকট্রনিকস বিভাগের হেড অব প্রোডাক্ট ফারহান আজহার বলেন, করোনার সময়ে বৈশ্বিক বাজারে কাঁচামালের যে দাম বেড়েছিল তা কমেছে। কিন্তু এখন আবার কাঁচামালের চাহিদা ও দাম বাড়ছে। এটা অব্যাহত থাকলে কয়েক মাস পরে স্থানীয় বাজারে পণ্যের দাম আবার বাড়তে পারে।
ঋণপত্রের সমস্যা কমেনি
এদিকে ডলার–সংকট শুরু হলে গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে আমদানিকারকেরা ঋণপত্র (এলসি) খোলা নিয়ে সমস্যায় পড়েন। এ সমস্যা এখনো রয়েছে বলে জানায় কোম্পানিগুলো। ভিশন ইলেকট্রনিকসের নির্বাহী পরিচালক নুর আলম জানান, নির্দিষ্ট সময়ে ঋণপত্র নিষ্পত্তি না হওয়ায় উৎপাদনপ্রক্রিয়ায় বেশি সময় লাগছে। এতে খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই কথা জানিয়েছেন ট্রান্সকম, ওয়ালটন ও সিঙ্গারের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
ইলেকট্রা ইন্টারন্যাশনালের বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মোবারক হোসেন বলেন, ‘ডলারের দাম কমলে পণ্যের দাম হয়তো কিছুটা কমে আসতে পারে। তবে তা আগের জায়গায় আর ফেরত যাবে বলে মনে হচ্ছে না।’