সোনালী লাইফের প্রশাসক বদলের সিদ্ধান্ত দেবেন আদালত

একদিকে সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির সাবেক দুই চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ও কাজী মনিরুজ্জামান। তাঁরা দুজন আবার বন্ধু। আরেক দিকে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চার সদস্য বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য, দলিল উদ্দিন, মো. নজরুল ইসলাম ও কামরুল হাসান। আর মাঝখানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আবদুর রহমান খান, যিনি এখন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডেরও (এনবিআর) চেয়ারম্যান।

আজ সোমবার এ তিন পক্ষ মিলে সচিবালয়ে বৈঠক করেছে। আলোচনার বিষয়বস্তু: ‘সোনালী লাইফের প্রশাসক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এস এম ফেরদৌসকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন কোনো প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া’। এই প্রশাসককে চার মাস আগে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

বৈঠক থেকে কী সিদ্ধান্ত এসেছে জানতে চাইলে সচিব আবদুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, সোনালী লাইফের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে আদালতের মাধ্যমে।

তিন সপ্তাহ আগে অর্থ আত্মসাতের দায়ে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা করে। সোনালী লাইফ থেকে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ১৮৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মামলার অন্য অভিযুক্তরা হচ্ছেন মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের স্ত্রী ফজলুতুন নেসা, মেয়ে ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া, ছেলে মোস্তফা কামরুস সোবহান, পুত্রবধূ শাফিয়া সোবহান চৌধুরী এবং আরেক মেয়ে তাসনিয়া কামরুন আনিকা।

এ ছয়জনের বাইরেও দুজন আসামি আছেন। তাঁরা হলেন কোম্পানির বিদায়ী মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মীর রাশেদ বিন আমান এবং পদত্যাগকারী পরিচালক নূর-ই-হাফজা।

এর আগে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদাভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানির প্রতিবেদনে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসসহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা হয়। মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস পোশাক খাতের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি। তাঁর ছক অনুযায়ীই সোনালী লাইফের তহবিল তছরুপের অভিযোগ উঠলে গত ৩১ ডিসেম্বর হুদাভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানিকে নিরীক্ষক নিয়োগ করে আইডিআরএ।

হুদাভাসি গত এপ্রিলে নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেয় আইডিআরএর কাছে। সংস্থাটি বিমাকারী ও বিমা গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষার্থে কোম্পানিটির পর্ষদ ভেঙে দিয়ে তখনই প্রশাসক বসায়। তার পর থেকে কোম্পানিটি প্রশাসকের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। অন্যদিকে কোম্পানিটির ওপর পূর্ণাঙ্গ ও নিবিড় নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরির কাজও চলমান আছে।

প্রশাসক নিয়োগের ঘটনার জের ধরে এক সপ্তাহ আগে ১১ আগস্ট কোম্পানিটির পক্ষে এক দল লোক আইডিআরএর প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে সংস্থাটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারীর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। পরে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা পরিস্থিতি সামাল দেন। তার আগে সোনালী লাইফের কর্মকর্তারা প্রশাসকের ডিওএইচএসের বাসভবনে গিয়ে জোরপূর্বক ৩২ কোটি টাকার চেক অনুমোদন করিয়ে নেন বলে অভিযোগ আছে।

যোগাযোগ করলে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রশাসক বসার পর থেকে কোম্পানির ব্যবসা ৫৪ শতাংশ কমেছে। আমাদের দাবি ছিল তাঁর বদল। কিন্তু আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব বিষয়টিকে আদালতের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন।’

আইডিআরএ চেয়ারম্যানের পদত্যাগ নিয়ে কারা দাবি তুলেছেন, সে ব্যাপারে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস কিছু জানেন না বলে উল্লেখ করেন। প্রশাসকের কাছ থেকে জোরপূর্বক ৩২ কোটি টাকার চেক লিখে নেওয়ার কথাও তিনি প্রথমে অস্বীকার করেন। পরে অবশ্য বলেন, ‘৩২ কোটি টাকার বিষয়টা আমি জানি না। সচিবের কাছে প্রথম শুনলাম। হলেও হতে পারে। কারণ, কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী ও উন্নয়ন কর্মকর্তাদের চার মাসের বেতন-ভাতা বাকি ছিল। সেই টাকা হতে পারে এটা।’