২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

সরকারি হিসাবের চেয়ে দাম বেশি

করোনার সময় অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সরকারের ঋণের সুবিধা ঠিকভাবে পাননি বলে মনে করে সিপিডি।

সরকার খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির যে হার প্রকাশ করেছে, বাজারে পণ্যমূল্য তার চেয়ে অনেক বেশি বলে জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু এই মানুষদের সুরক্ষা দিতে সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তা অপর্যাপ্ত বলে মনে হয়েছে সংস্থাটির কাছে।

গতকাল রোববার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, তা নিয়ে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করে সিপিডি। সেখানে খাদ্যমূল্যস্ফীতির অবস্থা বোঝাতে গত বছরের ২০ জুলাই থেকে চলতি বছরের ২০ জুলাইয়ের মধ্যে ১১টি ভোগ্যপণ্যের বর্তমান বাজারদর তুলে ধরা হয়।

সিপিডি জানায়, গত এক বছরের ব্যবধানে আটার দাম ৩৪ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫১ টাকা ও ময়দার দাম ৪৪ থেকে বেড়ে ৬৬ টাকা হয়েছে। অর্থাৎ ৫০ শতাংশের বেশি দাম বেড়েছে এই দুটি নিত্যপণ্যের। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে প্রতি লিটার সয়াবিন ১৪৫ থেকে বেড়ে ১৯০ টাকা হয়েছে। প্রতি কেজি মসুর ডাল ৭৫ থেকে বেড়ে ১০৫ টাকা ও পেঁয়াজ ৪৩ থেকে বেড়ে ৪৮ টাকা হয়েছে। আর এক হালি ডিমের দাম ৭ টাকা বেড়ে হয়েছে ৩৯ টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২২ সালের জন্য ৫ দশমিক ৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতির যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে, সেটা কীভাবে অর্জিত হবে, তা বোধগম্য নয়।
ফাহমিদা খাতুন, নির্বাহী পরিচালক, সিপিডি

বেড়েছে চাল ও মাংসের দামও। সিপিডির হিসাবে, এক বছরের ব্যবধানে প্রতি কেজি মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে ৭ টাকা। আগে ৬৩ টাকায় যে চাল কেনা যেত সেই চাল এখন ৭০ টাকা দরে কিনছেন গ্রাহকেরা। প্রতি কেজি খাসির মাংসের দাম ৮৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৯৫০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির দাম ১২৮ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪৫ টাকা।

সিপিডি বলছে, শুধু এই ১১টি পণ্যই নয়, বাজারের প্রায় সব ধরনের পণ্যের দামই প্রতিনিয়ত বাড়ছে। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির প্রকাশিত হারের চেয়ে বাস্তবে দাম অনেক বেশি। ভোগ্যপণ্যের যে তালিকা ধরে খাদ্যমূল্যস্ফীতি গণনা করা হয়, তা ২০০৫ সালে তৈরি। এত বছরের ব্যবধানে মানুষের ভোগ্যপণ্যের ধরন অনেকটা পরিবর্তিত হয়েছে। তাই খাদ্যমূল্যস্ফীতি গণনায় ভোগ্যপণ্যের তালিকা হালনাগাদ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই মানুষদের সুরক্ষা দিতে হবে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপ পর্যাপ্ত নয় বলে মত দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। বলেন, সরকারি তথ্যানুসারে, জুন মাসে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এই হিসাবের সঙ্গে কিন্তু বাস্তবতার অনেকখানি ফারাক রয়েছে। তিনি আরও বলেন, কোনো কোনো পণ্যের মূল্য ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। বাজারের এই পরিস্থিতি কিন্তু সরকারি মূল্যস্ফীতির তথ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২২ সালের জন্য ৫ দশমিক ৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতির যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে, সেটা কীভাবে অর্জিত হবে, তা বোধগম্য নয়। এ পরিস্থিতিতে অর্থের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ ও মুদ্রানীতি কার্যকর করার পরামর্শ দেন তিনি।

মূল্যস্ফীতি মোকাবিলা ও দরিদ্র মানুষের সুরক্ষায় পাঁচটি সুপারিশ দিয়েছে সিপিডি। সংস্থাটি বলছে, নীতি সুদহার বাড়িয়ে অর্থের (ঋণের) প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা ও মুদ্রানীতি কার্যকরের মাধ্যমে সুদের হার বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়া প্রয়োজন। বর্তমানে সবচেয়ে সংকটে আছে দরিদ্র জনগণ। এ জন্য সামাজিক সুরক্ষার আওতা বাড়িয়ে তাদের পর্যাপ্ত সহায়তা দেওয়া। করোনার সময় অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সরকারের ঋণের সুবিধা ঠিকভাবে পায়নি বলে মনে করে সিপিডি। এ জন্য এই শ্রেণির ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। সর্বোপরি সরকার যে কৃচ্ছ্রসাধনের পদক্ষেপ নিয়েছে, সেটা অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।