রাজধানীতে গৃহকর্মীদের বেশির ভাগই মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) ব্যবহার করে পারিশ্রমিক নিতে আগ্রহী নন। বর্তমানে রাজধানীতে এমএফএস হিসাবধারী গৃহকর্মীর সংখ্যা মাত্র ১৯ শতাংশ। গৃহকর্মীরা এই সেবা ব্যবহার না করার কারণ হিসেবে বলেছেন, এ সেবা ব্যবহারে অনভ্যস্ততা এবং স্বামীর কর্তৃত্বের কারণে নগদ টাকা গ্রহণ করতেই তাঁরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) উদ্যোগে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে গতকাল বুধবার আয়োজিত ‘ডিএফএস (ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস) ব্যবস্থা চালুকরণের মাধ্যমে গৃহকর্মীদের ক্ষমতায়িত করা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। সভাপতিত্ব করেন এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম।
অনুষ্ঠানে ইনস্টিটিউশনাল সোশ্যাল বিজনেসের (আইএসবি) একটি সমীক্ষা তুলে ধরা হয়। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় এমজেএফের ‘সূচনা’ প্রকল্পের মাধ্যমে সমীক্ষাটি করা হয়েছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর, মিরপুর, গোড়ান, কেরানীগঞ্জ ও কামরাঙ্গীরচর এলাকার চার হাজার গৃহকর্মী এবং সাড়ে তিন হাজার নারী চাকরিদাতা গত বছরের নভেম্বর থেকে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এ সমীক্ষায় অংশ নেন।
সমীক্ষা অনুযায়ী, গৃহকর্মীর ৯৯ শতাংশ সরাসরি বেতন গ্রহণ করেন। যদিও তাঁদের ৬৭ শতাংশের নিজস্ব মোবাইল ফোন আছে। তবে মাত্র ১৯ শতাংশ গৃহকর্মীর এমএফএস হিসাব আছে। তাঁদের মধ্যে ৩৬ শতাংশ এমএফএস হিসাব পারিশ্রমিক নেওয়ার কাজে ব্যবহার করেন না।
সমীক্ষায় অংশ নেওয়া গৃহকর্মীদের ৯২ শতাংশ জানিয়েছে, পারিশ্রমিক তাঁরা নগদ টাকায় পেতে আগ্রহী। এ ছাড়া গৃহকর্ত্রী বা চাকরিদাতারাও তাঁদের গৃহকর্মীদের বেতন নগদ টাকায় দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তবে গৃহকর্মীরা এমএফএস পদ্ধতি গ্রহণ করলে শতকরা ৮১ জন চাকরিদাতা সেই খরচ বহন করতে রাজি আছেন বলে সমীক্ষায় জানা গেছে।
এমএফএসে পারিশ্রমিক না নেওয়ার কারণে গৃহকর্মীদের কাজ অর্থনীতির হিসাবের বাইরে থেকে যাচ্ছে। ফলে ব্যাপকসংখ্যক কর্মজীবী নারীর নিজস্ব আয়ের ওপর কর্তৃত্ব থাকছে না। পাশাপাশি তাঁরা ক্ষমতায়িতও হতে পারছেন না।
এমএফএসে বেতন না নেওয়ার কারণ হিসেবে গৃহকর্মীরা বলেন, ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাঁদের কারিগরি জ্ঞানের অভাব রয়েছে। আবার জরুরি প্রয়োজনে টাকা তুলতে না–পারা এ সেবা ব্যবহারে তাঁদের অনাগ্রহের কারণ। আবার এমএফএসে লেনদেনের খরচ বহনের দুশ্চিন্তাও রয়েছে তাঁদের। এ ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বামীরা টাকার হিসাব ও ফোন ব্যবহারের কাজটি করে দেন বলে জানান গৃহকর্মীরা।
অনুষ্ঠানে এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, গৃহকর্মী ও গৃহকর্ত্রী দুজনের বয়স এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার কথা চিন্তায় রেখে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে গৃহকর্মীদের বেতন-ভাতা ডিজিটাল পদ্ধতির আওতায় আনা সম্ভব হবে। এতে করে নিজেদের আয়ের ওপর যেমন তাঁদের কর্তৃত্ব তৈরি হবে, অন্যদিকে তাঁদের সঞ্চয় বাড়বে।