যমুনা গ্রুপের ১ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ পাচ্ছে ইভ্যালি
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালিতে এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে যমুনা গ্রুপ। প্রাথমিকভাবে তারা ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। বাকি বিনিয়োগ করবে ধারাবাহিকভাবে। আজ মঙ্গলবার ইভ্যালি এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এমন বিনিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছেন ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ রাসেল। তিনি বলেছেন, দেশীয় উদ্যোগ হিসেবে গড়ে ওঠা ইভ্যালির পাশে আরেকটি দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে পেয়ে আমরা আনন্দিত। যমুনা গ্রুপের এই বিনিয়োগ ইভ্যালির ভবিষ্যৎ উন্নয়ন এবং ব্যবসায়ের পরিধি বৃদ্ধিতে ব্যয় করা হবে।
গ্রাহকদের পুরোনো ক্রয় আদেশ নিয়ে মোহাম্মদ রাসেল বলেন, যে ক্রয় আদেশগুলোর সরবরাহ অপেক্ষমাণ, সেগুলোর ব্যাপারে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে আরও বিনিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যমুনা গ্রুপের এমডি শামীম ইসলাম বলেছেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উন্নয়নে আমরা দেখছি যে স্থানীয় ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে আমাজন, চীনের ক্ষেত্রে আলিবাবা। তেমনি বাংলাদেশে ইতিমধ্যে নিজের একটি অবস্থান তৈরি করেছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি এবং দেশের সাধারণ মানুষের স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাচ্ছে। যমুনা ৫০ বছর ধরে দেশ ও দেশের জনগণের কল্যাণে কাজ করছে। এখন থেকে ইভ্যালি এবং যমুনা গ্রুপ সেই স্বপ্নপূরণে একে অপরের অংশীদার হলো।’
ইভ্যালি ও যমুনা গ্রুপের এই অংশীদারত্বকে স্বাগত জানিয়ে যমুনা গ্রুপের পরিচালক মনিকা ইসলাম বলেন, ‘দেশের বাজারে মানসম্পন্ন পণ্য ও সেবা নিয়ে যমুনা গ্রুপ ব্যবসা করে আসছে। দেশের সবচেয়ে বড় অফলাইন মার্কেটপ্লেস যমুনা ফিউচার পার্ক। আর এখন সবচেয়ে বড় অনলাইন মার্কেটপ্লেস গড়ে তোলার জন্য ইভ্যালির সঙ্গে থাকবে যমুনা। ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং দেশের ই-কমার্স খাতকে একটা মজবুত অবস্থানে এগিয়ে নিয়ে যেতে ইভ্যালির সৎ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যের প্রতি আমাদের বিশ্বাস আছে। করোনার এই দুঃসময়ে দেশের অর্থনীতিকে চাঙা রাখতে আমরা তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি।’
যমুনা গ্রুপের পরিচালক (হিসাব) শেখ ওয়াদুদ বলেন, ‘করোনার এই সময়ে আমরা দেশীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে চাই। এই বিনিয়োগ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য আমরা ধাপে ধাপে প্রকাশ করব।’
বিনিয়োগের ব্যাপারে যমুনা গ্রুপের কার্যালয়ে উভয় প্রতিষ্ঠানের চুক্তি হয়েছে আজ মঙ্গলবার। চুক্তিতে সই করেছেন যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শামীম ইসলাম এবং ইভ্যালির এমডি মোহাম্মদ রাসেল। আজ রাতে মুঠোফোনে মোহাম্মদ রাসেলের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
যমুনা গ্রুপ ইভ্যালির কত শতাংশ মালিকানা পাবে—এমন প্রশ্নের জবাবে কোম্পানিটির এমডি মোহাম্মদ রাসেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না।’
গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে পণ্য না দেওয়া এবং মার্চেন্টদের কাছ থেকে পণ্য এনে বিল পরিশোধ না করার অভিযোগ রয়েছে ইভ্যালির বিরুদ্ধে।
গ্রাহক ও মার্চেন্টদের সুরক্ষা এবং ডিজিটাল কমার্স খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব প্রতিরোধের লক্ষ্যে ইভ্যালির বিরুদ্ধে কেন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে গত ঈদের আগে ইভ্যালিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় পাশাপাশি কোম্পানিটির ব্যবসাপদ্ধতিও জানতে চেয়েছে। ইভ্যালিকে নোটিশের জবাব ও ব্যবসাপদ্ধতি জানানোর সময় দেওয়া হয়েছে আগামী ১ আগস্ট পর্যন্ত।
জানতে চাওয়া হয়েছে, গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছে মোট ৪০৭ কোটি টাকা দায়ের বিপরীতে ইভ্যালির কাছে মাত্র ৬৫ কোটি টাকা চলতি সম্পদ থাকার কারণ কী? বাকি টাকা ইভ্যালির কাছে আছে কি না। থাকলে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে, না থাকলে দিতে হবে পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা।
বলা হয়েছে, ১৫ জুলাই পর্যন্ত গ্রাহকের কাছে মোট দায়ের পরিমাণ কত, গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া অর্থের বিনিময়ে যে পণ্য দেওয়ার কথা, সেগুলোর বর্তমান অবস্থা কী এবং এ বিষয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? একই সময় পর্যন্ত মার্চেন্টদের কাছে দায়ের পরিমাণ কত এবং তা পরিশোধের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
এ ছাড়া ব্যবসা শুরুর পর থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত গ্রাহকদের কাছ থেকে ইভ্যালি কত টাকা নিয়েছে, মার্চেন্টদের কত অর্থ পরিশোধ করেছে এবং প্রশাসনিক ও অন্যান্য খাতে কী পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ জানাতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৬ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে যে প্রতিবেদন দিয়েছে, সে অনুযায়ী গ্রাহকের কাছে ২১৪ কোটি এবং মার্চেন্টের কাছে ১৯০ কোটি টাকার দায় রয়েছে ইভ্যালির। এ দায়ের বিপরীতে ইভ্যালির মোট সম্পদ ৯২ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৬৫ কোটি টাকা মাত্র চলতি মূলধন।
এ প্রেক্ষাপটেই নতুন বিনিয়োগের জন্য চুক্তি করল ইভ্যালি। প্রতিষ্ঠানটির এমডি মোহাম্মদ রাসেল কিছুদিন ধরেই নতুন অংশীদার খোঁজার কথা বলছিলেন।