বিধিনিষেধের প্রভাব
আবারও ‘মার’ খেল ঈদের ব্যবসা
ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসা করার যে সময়, তার অনেকটাই ইতিমধ্যে চলে গেছে। তাই বড় লোকসানের মুখে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
পবিত্র ঈদুল আজহার ব্যবসা ধরতে কমবেশি সব ব্যবসায়ীই দুই মাস ধরে পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন। তবে করোনা সংক্রমণের রাশ টানতে দুই সপ্তাহ ধরে সারা দেশে কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। দোকানপাট, বিপণিবিতান সবই বন্ধ। ফলে ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য থমকে গেছে। বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কায় আছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ ও গ্রামে ফেরার ভোগান্তি কমাতে চলমান কঠোর বিধিনিষেধ এক সপ্তাহের জন্য শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ফলে বৃহস্পতিবার থেকে দোকানপাট ও বিপণিবিতান খুলবে। এতে করে ঈদের আগে ছয় দিন ব্যবসা করার সুযোগ পাবেন ব্যবসায়ীরা।
কয়েকজন ব্যবসায়ী বললেন, সাধারণত কোরবানির ঈদ উপলক্ষে ব্যবসা-বাণিজ্য দুই থেকে তিন সপ্তাহ আগে শুরু হয়। এবার বিধিনিষেধের কারণে সেই সময়ের বড় অংশই পার হয়ে গেছে। শেষ ছয় দিন ব্যবসার সুযোগ মিললে কর্মীদের বেতন-ভাতা দেওয়ার মতো অর্থ পাওয়া যেতে পারে। মুনাফার আশা নেই। তবে দেশে করোনার প্রকোপ যে হারে বাড়ছে, তাতে ব্যবসা আদৌ হবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। এদিকে বহু মানুষ এরই মধ্যে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন।
পবিত্র ঈদুল আজহায় সারা দেশে কয়েক হাজার কোটি টাকার কোরবানির পশু বেচাবিক্রি হলেও তৈরি পোশাক, জুতা, রেফ্রিজারেটর, মোবাইল, আসবাবসহ অন্য অনেক পণ্যের বিক্রিও মন্দ হয় না। সেই ব্যবসা ধরতে এসব খাতের ব্যবসায়ীরা বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে থাকেন।
সারা বছর যে পরিমাণ তৈরি পোশাক বিক্রি হয়, তার বড় অংশ অবশ্য পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে হয়। আর কোরবানির ঈদে ২০ শতাংশের মতো ব্যবসা হয়। ঈদের দুই থেকে তিন সপ্তাহ আগেই ফুটপাত থেকে শুরু করে বিপণিবিতান, ব্র্যান্ডের শোরুমে ভিড় করতে শুরু করেন ক্রেতারা। যদিও বিধিনিষেধের কারণে এবার এখন পর্যন্ত সবকিছু থেমে আছে। ঈদের আগে সেভাবে ব্যবসা হবে কি না, তা নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছেন ব্যবসায়ীরা। তবে অনলাইনে কেনাকাটা আগের চেয়ে বেড়েছে।
জানতে চাইলে দেশীয় ফ্যাশন প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফ্যাশন উদ্যোক্তা সমিতির (এফইএবি বা ফ্যাশন উদ্যোগ) সাবেক সভাপতি আজহারুল হক প্রথম আলোকে বলেন, কোরবানির ঈদের ব্যবসার জন্য পোশাক তৈরি যখন শেষ পর্যায়ে, তখনই বিধিনিষেধের ঘোষণা আসে। ইতিমধ্যে ঈদের ব্যবসার বেশির ভাগ দিনই চলে গেছে।
আজহারুল হক আরও বলেন, কোরবানির ঈদের ঠিক আগের সপ্তাহে রাজধানীতে পোশাক কেনাবেচা তেমন জমজমাট থাকে না। এ সময় গরুর হাট ও গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার দিকেই বেশি ঝোঁক থাকে মানুষের। করোনা সংক্রমণ যেহেতু বাড়ছে, তাই শেষ দিকে দোকানপাট খুললেও খুব বেশি যে সুবিধা হবে, সেই আশা করা যাচ্ছে না।
পশু কোরবানির কারণে ঈদুল ফিতরের আগে রেফ্রিজারেটর বিক্রি ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। গতবারও করোনার মধ্যে বিপুলসংখ্যক রেফ্রিজারেটর বিক্রি হয়েছিল। ব্যবসায়ীরা জানান, বিধিনিষেধের কারণে চলতি বছর পণ্যটির মৌসুমি বিক্রিতে ধস নেমেছে। তা ছাড়া কোপা আমেরিকার ফাইনালে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের ফুটবল খেলা আর ইউরো উপলক্ষে টিভি বিক্রির সুযোগও এবার নষ্ট হয়েছে।
জানা যায়, সারা বছর প্রায় ২০ লাখ রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার (ডিপ ফ্রিজ) বিক্রি হয়। এর মধ্যে ৬০-৬৫ শতাংশ রেফ্রিজারেটর বিক্রি হয় কোরবানির আগে। এই সময়ে ফ্রিজার বিক্রি হয় ৮০-৮৫ শতাংশ।
জানতে চাইলে সনি-র্যাংগসের মহাব্যবস্থাপক জানে আলম প্রথম আলোকে বলেন, কোরবানির ঈদের এক মাস আগে থেকে রেফ্রিজারেটর বিক্রি শুরু হয়। এবার বিধিনিষেধের কারণে সেটি হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়াকড়ির কারণে অনলাইনেও গতবারের মতো বিক্রি হচ্ছে না। শেষ মুহূর্তে দোকানপাট খোলার অনুমতি দেওয়ার ফলে গতবারের তুলনায় ৪০-৪৫ শতাংশ বিক্রি হতে পারে।
পোশাক ও রেফ্রিজারেটরের মতো না হলেও কোরবানির ঈদের আগে আসবাবের বিক্রিও বাড়ে। তবে বিধিনিষেধের কারণে সেই ব্যবসা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না এই খাতের ব্যবসায়ীরা। বিক্রি না থাকায় ইতিমধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানই উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে।
শীর্ষ আসবাব ব্র্যান্ড হাতিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম এইচ রহমান প্রথম আলোকে বলেন, যেকোনো উৎসবেই আসবাবের বিক্রি বাড়ে। কোরবানির ঈদে সামর্থ্যবানেরা আসবাব কেনেন। শেষ মুহূর্তে দোকানপাট খুললেও খুব একটা বিক্রির আশা নেই। কারণ, আসবাব কিনতে ক্রেতারা একটু সময় নেন। তা ছাড়া করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি ভালো নয়। অপর এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, অনলাইনে বিক্রি বেড়েছে। তবে সেটি বিক্রয়কেন্দ্রের বিক্রির ধারেকাছেও নয়।
সামগ্রিক বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বিধিনিষেধের কারণে ঈদের ব্যবসা করতে না পেরে ৫০-৬০ হাজার অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ব্যবসা থেকে ছিটকে যাবেন। ঈদের আগের কয়েক দিন ব্যবসা করার সুযোগ পেলেও বড় ধরনের লোকসান এড়ানোর সুযোগ নেই।