বাজেট: এবার রপ্তানি খাতসহ কিছু ক্ষেত্রে করপোরেট কর বাড়তে পারে
আগামী অর্থবছরের করপোরেট করহার কমছে না। বরং কিছু ক্ষেত্রে করহার বাড়ানো হতে পারে। যেসব খাত দাঁড়িয়ে গেছে, সেসব খাতকে আগের চেয়ে বেশি কর দিতে হবে। কিংবা এত দিন ধরে করছাড় পেয়েও যারা ভালো করছে না, তেমন খাতের সুবিধা উঠিয়ে দেওয়া হতে পারে।
এনবিআরের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, এখন কোন কোন খাত এই তালিকায় রাখা হবে, তা নিয়ে যাচাই-বাছাই চলছে।
কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, রপ্তানি খাতের করপোরেট করের সুবিধা কমতে পারে। বর্তমানে পোশাক খাতসহ সব রপ্তানি খাতের করপোরেট করহার ১২ শতাংশ। পরিবেশবান্ধব কারখানা হলে এই হার ১০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের আগে শুধু পোশাক খাত এই সুবিধা পেত। চলতি অর্থবছর থেকে সব রপ্তানি খাত এই সুবিধা পাচ্ছে। তবে এখন করহার বাড়ানোর চিন্তাভাবনা চলছে।
এনবিআরের সূত্রগুলো বলছে, করপোরেট করহার ১৫ শতাংশে উন্নীত করা হতে পারে। দুই বছর আগেও এই করের হার ২০ শতাংশ ছিল।
কর্মকর্তারা বলছেন, এখন পোশাক খাতসহ রপ্তানি খাতের উৎসে কর কাটা হয় রপ্তানিমূল্যের ওপর। উৎসে করহার ১ শতাংশ। বছর শেষে উৎসে কর সমন্বয় করতে হলে রপ্তানিকারকদের অন্তত ১০ শতাংশের মতো মুনাফা করতে হয়। করপোরেট কর বাড়ানো হলে করহার সমন্বয় করার কাজটি সহজ হবে। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৩০ জুন যেসব কর ছাড়ের মেয়াদ শেষ হবে, এর মেয়াদ আর নাও বাড়ানো হতে পারে।
এ বিষয়ে এনবিআরের আয়কর বিভাগের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, করছাড় যৌক্তিক করার জন্য এনবিআর যাচাই-বাছাই করছে। যেসব খাতের সামর্থ্য বেড়েছে, সেসব খাতের কিছু ক্ষেত্রে করছাড় ধীরে ধীরে তুলে নেওয়া হবে। আগামী বাজেট থেকেই এর প্রতিফলন দেখা যাবে। পোশাক, চামড়াসহ বেশ কিছু রপ্তানি খাতের অবস্থান বেশ শক্ত। আবার যেসব প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে কর সুবিধা নিয়েও এগিয়ে যেতে পারছে না, সেসব খাতের সুবিধাও থাকবে না।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে। তবে এ ক্ষেত্রে এনবিআরকে বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। যেমন আগামী অর্থবছরে স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির অতিরিক্ত শুল্ক-কর আদায় করতে হবে। এর পরিমাণ হবে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫০ শতাংশ। এ ছাড়া শুল্ক-কর ছাড় যৌক্তিক করার উদ্যোগ নিতে হবে।
বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে প্রথম কর অব্যাহতি সুবিধা চালু করা হয়। প্রায় পাঁচ দশকে দুই শর বেশি প্রজ্ঞাপন দিয়ে করছাড় দেওয়া হয়েছে।
২০২০ সালে এনবিআরের তৈরি করা এক হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকার কর অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ওই বছর কাঁচামাল, যন্ত্রাংশ, পণ্য আমদানির বিপরীতে ৪৬ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার কর অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া বন্ড সুবিধার আওতায় শুল্ক-কর ছাড় দেওয়া হয় ১ লাখ ৫১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার মতো। এ ছাড়া আয়কর ও ভ্যাট খাতে আরও প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো ছাড় দেওয়া হয়।