খরচ বেড়েছে ’নগদ‘ লেনদেনে, মাশুল বসলো টাকা পাঠাতে

মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’

মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (এমএফএস) ‘নগদ’–এর মাধ্যমে লেনদেনে খরচ বেড়েছে। এখন টাকা উত্তোলনে আগের চেয়ে বেশি মাশুল দিতে হচ্ছে এবং নগদের অন্য হিসাবে টাকা পাঠাতেও খরচ দিতে হচ্ছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে এই নতুন মাশুল কার্যকর হয়েছে। তবে গ্রাহক পর্যায়ে বিষয়টি অবহিত করা হয়নি। প্রচার–প্রচারণায়ও আগের মাশুলের বিষয়টি উল্লেখ করছে নগদ কর্তৃপক্ষ।

নগদ তাদের অ্যাপের মাধ্যমে অর্থ পাঠাতে পাঁচ টাকা মাশুল আরোপ করেছে। আগে অ্যাপের মাধ্যমে বিনা মূল্যে অর্থ পাঠানো যেত। এ ছাড়া অ্যাপে লেনদেনের পর টাকা তুলতে বা ক্যাশ আউট করতে মাশুল প্রতি হাজারে ১১ টাকা ৪৯ পয়সা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ১২ টাকা এবং ইউএসএসডি কোড সেবার গ্রহীতাদের জন্য ১৪ টাকা ৯৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৫ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া নগদ থেকে ব্যাংকে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রতি হাজারে দেড় শতাংশ মাশুল আরোপ করা হয়েছে।

তবে নগদ এখনো টাকা উত্তোলনের জন্য প্রতি হাজারে ৯ টাকা ৯৯ পয়সা খরচ বলে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে বলে দেখা গেছে। যদিও বাস্তবে এত কম খরচে টাকা উত্তোলনের কোনো সুযোগ নেই।

২০২০ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ ব্যাংক এক প্রজ্ঞাপনে বিভিন্ন এমএফএসকে নির্দেশনা দিয়েছিল যে কোন সেবায় ভ্যাটসহ ঠিক কী পরিমাণ টাকা কাটা হচ্ছে, তা নির্দিষ্ট করে গ্রাহকদের জানাতে হবে। পাশাপাশি মাশুল পরিবর্তন হলে গ্রাহকদের অগ্রিম জানাতে হবে।

ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যেকোনো পরিষেবা প্রদানের পূর্বে পরিষেবার ধরন, পরিষেবার জন্য প্রযোজ্য সেবা মাশুলের পরিমাণ এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সেবা মাশুলের তালিকা গ্রাহকদের যথাযথভাবে অবহিত করার উদ্দেশ্যে নিজস্ব ওয়েবসাইট ও অ্যাপে প্রদর্শন করতে হবে। এ ছাড়া গ্রাহকদের অবগতির জন্য কিছু বিষয় প্রশ্ন–উত্তর আকারে ওয়েবসাইটে রাখতে হবে।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, পরিষেবার ধরন বা সেবা মাশুলের হার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের আগেই নোটিফিকেশন প্রেরণের মাধ্যমে অবহিত করতে হবে। সেবা মাশুলের হারসংক্রান্ত বিভ্রান্তি পরিহারের জন্য বিভিন্ন গণযোগাযোগ (সংবাদপত্র, পত্রিকা, রেডিও, টেলিভিশন, ইউটিউব চ্যানেল ইত্যাদি) ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, লিঙ্কডইন ইত্যাদি) প্রচারসহ সব ক্ষেত্রে ভ্যাটসহ সেবা মাশুলের হার উল্লেখ করতে হবে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘টাকা পাঠাতে মাশুল আরোপ করা হলেও তা গ্রাহককে সঙ্গে সঙ্গে ফেরত দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া টাকা উত্তোলনে ১ টাকা পর্যন্ত খরচ বাড়ানো হয়েছে; কারণ, নতুন প্রযুক্তি আসায় সেবার মান বেড়েছে। এ জন্য খরচ সমন্বয় করা হয়েছে। আমরা মাশুল বাড়ানোর বিষয়টি আরোপের আগেই বাংলাদেশ ব্যাংক ও ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছি।’

জানা যায়, এমএফএস খাতে ১৩টি প্রতিষ্ঠান থাকলেও ৯০ শতাংশ লেনদেন হয় বিকাশ, নগদ ও রকেটের মাধ্যমে। লেনদেনের পরিমাণের দিক দিয়ে শীর্ষে থাকা বিকাশ গ্রাহকদের পছন্দের পাঁচটি নম্বরে (প্রিয়) বিনা মূল্যে টাকা পাঠানোর সুযোগ আছে। বিকাশের অ্যাপ থেকে পাঠানো অর্থের পরিমাণ ১০০ টাকার কম হলে কোনো মাশুল নেওয়া না। প্রতিষ্ঠানটি একটি প্রিয় এজেন্ট থেকে প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্যাশআউটের জন্য হাজারে ১৪ টাকা ৯০ পয়সা মাশুল নেয়। ‘প্রিয় এজেন্ট’ থেকে মাসে ২৫ হাজার টাকার বেশি তোলা হলে প্রতি হাজারে সাড়ে ১৮ টাকা চার্জ দিতে হয়। এটি সাধারণ এজেন্টের কাছ থেকে ক্যাশআউট করার সমান চার্জ। বিকাশ বলছে, গ্রাহকদের ৯৫ শতাংশ মাসে ২৫ হাজার টাকার বেশি উত্তোলন করেন না। এ ছাড়া প্রায় ১৫টি ব্যাংকের এটিএম থেকে টাকা উত্তোলনে প্রতি হাজারে খরচ হয় ১৪ টাকা ৯০ পয়সা।

এদিকে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম এমএফএস প্রতিষ্ঠান রকেটের গ্রাহকেরা ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করলে প্রতি হাজারে ৯ টাকা মাশুল দিতে হয়। এটি এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন মাশুল। তবে এজেন্টদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলনে গ্রাহকদের প্রতি হাজারে ১৮ টাকা খরচ দিতে হয়।