বড় উৎপাদকেরা নিয়মিত ডিম সরবরাহ করলে দাম সহনীয় থাকবে, বললেন ব্যবসায়ীরা

ডিমফাইল ছবি

দেশের শীর্ষস্থানীয় উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিতভাবে সরকার নির্ধারিত দরে ঢাকার তেজগাঁও ও কাপ্তানবাজারে ডিম সরবরাহ করলে এটির দাম সহনীয় থাকবে বলে মনে করেন আড়তদারেরা। তাঁরা বলেন, বৃহৎ উৎপাদকদের প্রতিদিন তেজগাঁও ও কাপ্তানবাজারে ১৫ লাখ করে ৩০ লাখ ডিম সরবরাহ করতে হবে। তার বাইরে প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে যে পরিমাণ ডিম থাকবে, সেগুলোও সরকার নির্ধারিত দরে বিক্রি নিশ্চিত করা উচিত।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তেজগাঁও ও কাপ্তানবাজারের ডিমের আড়তদারেরা। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই ভবনে অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় সভায় ফেডারেশনের প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান সভাপতিত্ব করেন।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে গত মঙ্গলবার ডিমের দাম ও সরবরাহ নিয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সিদ্ধান্ত হয়, ডিম উৎপাদনকারী বড় কোম্পানি ও ছোট খামারিরা সরকার নির্ধারিত দামে সরাসরি পাইকারি আড়তে ডিম পাঠাবে। তারপর পোলট্রিশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ কো-অর্ডিনেশন কমিটির (বিপিআইসিসি) সভায় সিদ্ধান্ত হয়, প্রতিদিন ঢাকার দুই পাইকারি বাজার তেজগাঁও ও কাপ্তানবাজারের আড়তে সরাসরি ১০ লাখ করে ২০ লাখ ডিম সরবরাহ করবে ১৫টি প্রতিষ্ঠান।

এফবিসিসিআইয়ের আজকের সভায় তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি আমানত উল্লাহ বলেন, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো গতকাল (বুধবার) রাতে কাপ্তানবাজারে ডিম সরবরাহ করেছে। প্রতিটি ডিমের পাইকারি দাম পড়েছে ১১ টাকা। তাহলে খুচরায় ১২ টাকায় বিক্রি সম্ভব। আজ বৃহস্পতিবার রাতে তেজগাঁও আড়তে সরাসরি ডিম দেবে করপোরেটরা। ফলে কাল থেকে ডিমের দাম কমবে। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে শীতের সবজি চলে এলে ডিমের ওপর চাপ কমবে।

তখন এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ডিমের দাম সহনীয় রাখতে তেজগাঁওয়ের ব্যবসায়ীদের বড় অবদান রয়েছে। সবাইকেই ভোক্তার সুবিধা-অসুবিধা দেখতে হবে। ভোক্তারা যদি বলে সাত দিন ডিম খাবে না, তাহলে আপনারা (ব্যবসায়ীরা) কী করবেন? ফলে আপনাদের সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামে ডিমের কিছু আড়তদার দোকান বন্ধ রেখেছিলেন। এটা দুঃখজনক, শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দেশের সংকটে দোকান বন্ধ রেখে মানুষের শত্রু হলেন এই ব্যবসায়ীরা।’

কাপ্তানবাজার ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান বলেন, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর খামারে দিনে ১ কোটি ২০ লাখ ডিম উৎপাদিত হয়। তারা সরকার নির্ধারিত দরে সরাসরি আড়তে ২০ লাখ ডিম দেবে। বাকি ডিম যদি তারা একই দরে বিক্রি না করে বা বেশি দাম নেয়, তাহলে ডিমের বাজার স্থিতিশীল হবে না। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো তেজগাঁও ও কাপ্তানবাজারে প্রতিদিন ৩০ লাখ ডিম সরবরাহ করলে দাম নিয়ে সমস্যা হবে না।

মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের আড়তদারদের প্রতিটি ডিমে ১০ পয়সা মুনাফা থাকলেই হয়। আগামী ১৫ দিন আমরা কোনো মুনাফা করব না। তারপর আমাদের মুনাফার সুযোগ করে দিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, দাম সহনীয় রাখতে হলে উৎপাদন পর্যায় ঠিকঠাক রাখা জরুরি। ৫৬ টাকার মুরগির বাচ্চা ৯০-৯৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এখানেও তদারকি দরকার।

বাংলাদেশ রুটি, বিস্কুট ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা বেকারি ব্যবসায়ীরা যদি এক সপ্তাহ ডিম ব্যবহার না করি, তাহলে ফেলে দিতে হবে। কারণ, ১৫-১৬ টাকায় ডিম কিনে আমাদের পড়তা হয় না।’

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, ভোক্তাদের রক্ষা করতে হবে। নীতিকৌশলে পরিবর্তন আনতে হবে। উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কেন্দ্রে বাধ্যতামূলকভাবে ডিম বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া গেলে ভোক্তারা স্বস্তি পাবেন।

আলুসহ নিত্যপণ্যের দামও বেশি বেড়েছে

এদিকে আলুর দাম নিয়ে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক ফেরদৌসী রহমান বলেন, কয়েকজন ব্যবসায়ী মিলে আলুর দাম বাড়িয়েছেন। মুন্সিগঞ্জ ও রংপুরের হিমাগার খুলে দিলেই আলুর দাম কমে যাবে।

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘উৎপাদন কম হওয়ায় চলতি বছর মাঠেই আলুর কেজি ৩০-৩২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে হিমাগারের গেটেই দাম ৪২-৪৩ টাকা। সে জন্য খুচরায় দাম বেশি। হিমাগারে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলু আছে। হিমাগারের আলুমালিক কৃষক ও ব্যবসায়ীদের প্রতিনিয়তই আমরা পণ্য বিক্রি করতে পরামর্শ দিচ্ছি। কারণ, ফেব্রুয়ারিতে বাজারে নতুন আলু আসবে।’

নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে ব্যবসায়ীদের যৌক্তিক মুনাফা করার আহ্বান জানান এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, অসৎ ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নিত্যপণ্যের সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। তবে সমস্যার তুলনায় পণ্যমূল্য বেশি বেড়েছে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবদুল জব্বার মণ্ডল, এফবিসিসিআইয়ের মহাসচিব মো. আলমগীর, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের পরিচালক উর্মি বিনতে সালাম, শ্যামবাজার কৃষিপণ্য আড়ত বণিক সমিতির সহসভাপতি মো. মাজেদ, কারওয়ান বাজার পাইকারি কাঁচাবাজার আড়ত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।