দেড় কোটি টাকার গাড়ি কিনতে পারবেন শীর্ষ সরকারি চাকরিজীবীরা
নতুন গাড়ি কেনা বন্ধের সিদ্ধান্তের এক মাস না যেতেই কৃচ্ছ্রসাধনের নীতি থেকে সরে এসেছে সরকার। গতকাল সোমবার নতুন নির্দেশনার মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের জন্য গাড়ি কেনার পথ খুলে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। এর আগে গত ২ জুলাই অর্থ বিভাগ এক পরিপত্রের মাধ্যমে নতুন যানবাহন কেনা বন্ধের কথা জানিয়েছিল।
সরকারি কর্মচারীদের জন্য গাড়ি কেনার পথ খুলে দেওয়ার পাশাপাশি গাড়ির বাজেটও বাড়ানো হয়েছে। তাতে সরকারে শীর্ষ কর্মচারীরা পাবেন আগের চেয়ে বেশি দামি গাড়ি। এত দিন গাড়িবাবদ সর্বোচ্চ বরাদ্দ ছিল ৯৪ লাখ টাকা। এখন তা বাড়িয়ে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা করা হয়েছে। অর্থ বিভাগ রেজিস্ট্রেশন, শুল্ক-করসহ গাড়ির দাম নির্ধারণ করে গত সোমবার নতুন নির্দেশনাটি দিয়েছে।
নির্দেশনা অনুযায়ী, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরের গ্রেড ১ ও ২ পর্যায়ের কর্মচারীদের জন্য মূলত ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা দামের গাড়ি কেনার এখতিয়ার রয়েছে। এ গাড়ি ২ হাজার ৭০০ সিসির ইঞ্জিনক্ষমতার বেশি হবে না, যা আগেও বলা ছিল।
অর্থ বিভাগ বলেছে, গ্রেড ৩ বা তার চেয়ে নিম্ন পর্যায়ের কর্মচারীদের জন্য কেনা যাবে ৬৫ লাখ টাকা দামের গাড়ি। এত দিন তাঁদের ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বসীমা ছিল ৫৭ লাখ টাকা।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিভিন্ন কোম্পানির কার, জিপ, পিকআপ, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, অ্যাম্বুলেন্স, কোস্টার মিনিবাস (এসি ও নন-এসি) ও ট্রাকের বাজারদর বিবেচনা করে যানবাহনের নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যানবাহন কেনার অনুমতি বা বরাদ্দ দেওয়ার সময় এই মূল্য অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
অর্থ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ শওকত উল্লাহ স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়, সরকারি কর্মচারীদের ব্যবহারের জন্য সর্বোচ্চ ৫২ লাখ টাকার মাইক্রোবাস কেনা যাবে, যা আগে ছিল ৪৪ লাখ টাকা। এ ছাড়া ৪৪ লাখ টাকার অ্যাম্বুলেন্সের বরাদ্দ বাড়িয়ে ৫৪ লাখ, ৩৫ লাখ টাকার প্রাইভেট কারের বরাদ্দ বাড়িয়ে ৪৫ লাখ এবং ৬৯ লাখ টাকার শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) কোস্টার বা মিনিবাস বাবদ বরাদ্দ বাড়িয়ে ৭৫ লাখ টাকা করা হয়েছে।
২৮ লাখ টাকার সিঙ্গেল কেবিন পিকআপের ক্ষেত্রে দাম বাড়িয়ে ৩৮ লাখ টাকা, ৪৯ লাখ টাকার ডাবল কেবিন পিকআপের ক্ষেত্রে ৫৫ লাখ টাকা, ৪২ লাখ ২৯ হাজার টাকার নন-এসি বড় বাস কেনার ক্ষেত্রে দাম বাড়িয়ে ৪৬ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে চার শ্রেণির যানবাহনবাবদ বরাদ্দ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নন-এসি মিনিবাস ৩২ লাখ টাকা, ৫ টনের ট্রাক ৩৯ লাখ টাকা, ৩ টনের ট্রাক ৩১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং মোটরসাইকেল ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ‘পরিবহন সরঞ্জামাদি’ খাতে যে ৬ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে, তা থেকেই এসব গাড়ি কেনা হবে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাতে ৮ হাজার ৮০ কোটি টাকার বরাদ্দ থাকলেও সরকারের কৃচ্ছ্রনীতির কারণে সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৪ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা করা হয়।
অর্থ বিভাগের নির্দেশনায় উল্লেখ না থাকলেও বিভাগটির শীর্ষ পর্যায়ের কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১০ বছরের পুরোনো গাড়ির বদলে নতুন গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে নির্দেশনাটি কার্যকর হবে।
অর্থ বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, অর্থ বিভাগ থেকে নতুন দায়িত্ব পেয়ে আরেকটি দপ্তরের প্রধান কর্মকর্তা পদে কাজ করছেন এমন এক কর্মকর্তা আগের গাড়িতে আর চড়তে চাইছেন না। তাঁর জন্যই নতুন গাড়ি কেনার এ কৌশল বের করেছে অর্থ বিভাগ।
সূত্রগুলো আরও জানায়, আর গাড়ির মূল্য বৃদ্ধি অমূলক নয়। ডলারের তুলনায় বাংলাদেশি টাকার অবমূল্যায়ন হওয়া এবং বিশ্ববাজারে গাড়ির দাম বেড়ে যাওয়া—উভয় কারণ বিবেচনায় রেখেই নতুন দর নির্ধারণ করা হয়েছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকনোমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিদ্ধান্তটি যৌক্তিক হল না। সময়টা এখন অস্বাভাবিক। ফলে সব ক্ষেত্রেই কৃচ্ছ ৶ সাধন দরকার। নতুন গাড়ি কেনার জন্য সরকার আরেকটা বছর অপেক্ষা করতে পারত।’