ভোজ্যতেল, চিনি ও পেঁয়াজসহ কয়েকটি নিত্যপণ্যে রোজার প্রস্তুতি ভালো নয়

নিত্যপণ্যপ্রতীকী ছবি

আগামী পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে কয়েকটি নিত্যপণ্যের আমদানি ও মজুত পরিস্থিতি তত ভালো নয়। ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজসহ কয়েকটি পণ্যের আমদানি ও মজুত গতবারের চেয়ে কম। এসব পণ্যের ঘাটতি মেটাতে যে পরিমাণ ঋণপত্র (এলসি) খোলার দরকার ছিল, তা–ও হচ্ছে না। অথচ স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় পবিত্র রোজায় এসব পণ্যের বাড়তি চাহিদা থাকে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এখন থেকে উদ্যোগ না নিলে আগামী মার্চে শুরু হওয়া পবিত্র রোজার মাসে কিছু পণ্যের সংকট দেখা দিতে পারে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চলতি সপ্তাহে এমন পর্যবেক্ষণ ও শঙ্কার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)।

স্থানীয় চাহিদা, রমজানের চাহিদা, স্থানীয় উৎপাদন, বার্ষিক আমদানি, মাসিক চাহিদা, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বিটিটিসি এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। প্রতিবেদনে ২০২৩ সালের জুলাই-অক্টোবরের সঙ্গে ২০২৪ সালের একই সময়ের আমদানি, এলসি ও মজুত পরিস্থিতির তুলনা করা হয়েছে।

বিটিটিসির প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, গতবারের তুলনায় এবার সবচেয়ে বেশি ঘাটতি রয়েছে অপরিশোধিত চিনির। গত বছরের জুলাই–অক্টোবরের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৫৯১ টন কম আমদানি হয়েছে চিনি। একইভাবে এই সময়ে ২ লাখ ৪০ হাজার ৫৮০ টন কম পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। পেঁয়াজের এলসি খোলাও কমেছে ১ লাখ ৯৪ হাজার ১৪২ টনের। পাম তেল আমদানি কম হয়েছে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৩৮৬ টন। আর পাম তেলের এলসি খোলা কমেছে ৭৭ হাজার ৯৩০ টন। এ ছাড়া ছোলা, খেজুর ও পরিশোধিত চিনির এলসিও কম খোলা হয়েছে। প্রকৃত আমদানি কম হয়েছে সয়াবিন বীজের। যদিও অপরিশোধিত চিনি ৮৮ হাজার টন এবং সয়াবিন বীজ আমদানির জন্য ৮ হাজার টনের বেশি এলসি খোলা হয়েছে আগের বছরের তুলনায়।

বিটিটিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সয়াবিন বীজ, মসুর ডাল ও অপরিশোধিত চিনি ছাড়া সব পণ্যের এলসিই এবার কম খোলা হয়েছে। এদিকে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত—দুই ধরনের চিনির দামই এক বছরে বিশ্ববাজারে কমেছে ২১ শতাংশ। তবে দেশীয় বাজারে দাম একই রয়েছে অর্থাৎ কমেনি। বাজার–বিশ্লেষকেরা বলছেন, এলসি কম খোলা হলে আমদানি কম হবে, আমদানি কম হলে সরবরাহ–সংকট হবে, আর সরবরাহ–সংকট দেখা দিলে বাজারে দামেও তার প্রভাব পড়বে। তাই সরকারের উচিত আমদানি ও মজুত পরিস্থিতি বিবেচনায় আগেভাগে সংকট মোকাবিলার প্রস্তুতি নেওয়া।

এদিকে বাজারে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দাম স্থিতিশীল রাখতে পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল ও চিনির আমদানি পর্যায়ে শুল্ক-কর কমিয়েছে সরকার। এর বাইরে চাল, ডিম ও আলু আমদানিতেও শুল্ক-কর কমানো হয়েছে। মসুর ডাল ও ছোলা আমদানিতে শুল্ক-কর নেই। বিটিটিসির প্রতিবেদনে সরকারি এসব পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরা হয়।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন গত বুধবার কারওয়ান বাজারে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) উদ্যোগে সাশ্রয়ী দামে আলু বিক্রি কার্যক্রম উদ্বোধন শেষে নিত্যপণ্যের সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে ভোক্তাদের মধ্যে স্বস্তি আসতে শুরু করেছে। বাজারে পণ্যের সরবরাহ আরও বাড়ানো গেলে দ্রব্যমূল্যে স্থিতিশীলতা আসবে শিগগিরই।

সুদের হার কমানোসহ ৭ সুপারিশ

ভোজ্যতেল, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ ও খেজুর আমদানিতে ব্যাংকের সুদের হার কম রাখার পক্ষে বিটিটিসি। সংস্থাটি এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য সরকারকে সুপারিশ করেছে। সংস্থাটি বলেছে, এসব পণ্যের বড় আমদানিকারকদের সঙ্গে বৈঠক করে এলসি খোলার পরিমাণ বৃদ্ধির অনুরোধ জানাতে হবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে।

ভোজ্যতেল, চিনি ও ডালকলগুলোয় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে এবং আমদানি–সংশ্লিষ্ট শুল্ক স্টেশনগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাতে এসব পণ্য খালাস করে, সে জন্য এনবিআরকে অনুরোধ করার সুপারিশও করেছে বিটিটিসি।

খেজুরসহ খাদ্যপণ্যের বিশ্ববাজারদর বিবেচনায় নিয়ে প্রকৃত শুল্কায়নযোগ্য মূল্য নির্ধারণ ও শুল্কায়নের জটিলতা দূর করতে এনবিআর যেন শুল্ক স্টেশনগুলোকে নির্দেশনা দেয়—এমন সুপারিশও করা হয়েছে। এসব পণ্যের অবাধ পরিবহন নিশ্চিত করতে জননিরাপত্তা বিভাগ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগকে অনুরোধ করার সুপারিশও করা হয় বিটিটিসির পক্ষ থেকে।

সংস্থাটির সুপারিশের মধ্যে আরও রয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনগুলোকে বাজার তদারকির ব্যবস্থা জোরদার করার নির্দেশনা দেওয়া।

বাণিজ্যসচিব মোহাং সেলিমউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিটিটিসির সব সুপারিশ বাস্তবায়নের ব্যাপারে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে এরই মধ্যে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছি। তবে সুদের হার কমানোর বিষয়ে কিছু করা হয়নি।’

সুদের হার কমানো নিয়ে কিছু না করার কারণ জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব বলেন, ‘এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত ব্যবসায়ী মহল থেকে কোনো দাবি আসেনি। দাবি এলে আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ বা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সুপারিশ করব।’