নতুন উদ্যোগ
জুলাই থেকে পরীক্ষামূলক সর্বজনীন পেনশন চালু
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন করার পর অর্থ বিভাগ গত রোববার জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
দেশে সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা চালু করতে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন হওয়ার পর দ্রুতই জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।
অর্থ বিভাগ গত রোববার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩-এর আওতায় এ কর্তৃপক্ষ গঠন করে। যদিও সেটি গতকাল প্রকাশ করা হয়। প্রজ্ঞাপনে কর্তৃপক্ষ গঠন বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। শুধু বলা হয়েছে, সিদ্ধান্তটি অবিলম্বে কার্যকর হবে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম দিন অর্থাৎ আগামী ১ জুলাই থেকেই পরীক্ষামূলকভাবে সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। তার আগে তহবিল, কর্মসূচি ইত্যাদির জন্য বিধিমালা তৈরি করা হবে। সূত্রগুলো জানায়, পরীক্ষামূলক চালু করার আগে কর্তৃপক্ষের একজন চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হবে। এর মধ্যে কর্তৃপক্ষের জন্য একটি কার্যালয় নেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত রাতে মোবাইল ফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা চালু করা আমার প্রথম প্রতিশ্রুতি ছিল। সেটা রক্ষা করতে পারছি বলে ভালো লাগছে। আশা করছি, আগামী ১ জুলাই থেকেই পরীক্ষামূলকভাবে এটা চালু করা সম্ভব হবে।’
জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার পর গত ৩১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩-এর অনুমোদন দেন। তারপরই এটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।
সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা চালু করা আমার প্রথম প্রতিশ্রুতি ছিল। সেটা রক্ষা করতে পারছি বলে ভালো লাগছে। আশা করছি, আগামী ১ জুলাই থেকেই পরীক্ষামূলকভাবে এটা চালু করা সম্ভব হবে।
সবার জন্য পেনশন চালু করার বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে প্রতিবারই বাজেটে এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ‘সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা’ চালুর বিষয়ে একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে অর্থ বিভাগ।
সেই ধারাবাহিকতায় গত ২২ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল ২০২২ জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। বিলটি পাস হওয়ার পর পেনশনব্যবস্থা চালুর আইনি ভিত্তি তৈরি হয়।
আইনে যা রয়েছে
সরকার যতক্ষণ এটিকে সব নাগরিকের জন্য বাধ্যতামূলক না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সর্বজনীন পেনশন ঐচ্ছিক থাকবে। সর্বজনীন পেনশনে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়স থেকে ৫০ বছর বয়সী সব বাংলাদেশি নাগরিক অংশ নিতে পারবেন। পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিরাও বিশেষ বিবেচনায় সুযোগ পাবেন। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরাও পেনশনের আওতায় আসবেন। তবে আপাতত সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীরা সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থার আওতাবহির্ভূত থাকবেন।
বর্তমানে সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর্মচারীরা অবসরের পর পেনশন-সুবিধা পান। আইনে বলা হয়েছে, সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতিতে সরকারি, আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও অংশ নিতে পারবে। এ ক্ষেত্রে কর্মী ও প্রতিষ্ঠানের চাঁদার অংশ নির্ধারণ করবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। তবে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি না করা পর্যন্ত সরকারি ও আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীরা সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত থাকবেন না। চাঁদাদাতাকে ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিতে হবে।
চাঁদাদাতার বয়স ৬০ বছর পূর্তিতে পেনশন তহবিলে পুঞ্জীভূত মুনাফাসহ জমার বিপরীতে পেনশন পাবেন। একজন পেনশনধারী পেনশন পাবেন আজীবন। পেনশনে থাকাকালে ৭৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগে পেনশনধারী মারা গেলে বাকি সময়কালের জন্য মাসিক পেনশন পাবেন তাঁর নমিনি।
সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থায় মাসিক সর্বনিম্ন চাঁদার হার কত হবে, তা নির্ধারণ করবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। পেনশন তহবিলে জমা হওয়া অর্থ উত্তোলনের প্রয়োজন হলে চাঁদাদাতা ৫০% পর্যন্ত অর্থ ঋণ নিতে পারবেন। প্রত্যেক চাঁদাদাতার জন্য একটি পৃথক ও স্বতন্ত্র পেনশন হিসাব থাকবে। মাসিক পেনশন বাবদ পাওয়া অর্থ থাকবে আয়করমুক্ত।
কর্তৃপক্ষের লোকবল
আইন অনুযায়ী জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের একজন নির্বাহী চেয়ারম্যান ও চারজন সদস্য থাকবেন। এ ছাড়া ১৬ সদস্যের একটি পেনশন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হবে। পর্ষদের চেয়ারম্যান হবেন অর্থমন্ত্রী। সদস্য থাকবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, অর্থসচিব, এনবিআরের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বিভাগ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবেরা। এ ছাড়া বিএসইসির চেয়ারম্যান এবং এফবিসিসিআই, এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন ও উইমেন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সদস্য থাকবেন। পর্ষদের সদস্যসচিব থাকবেন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান।