এবার জমিয়ে ব্যবসা করেছে কিছু ব্র্যান্ড

ঈদের কেনাকাটায় অনেকেই বড় ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতে ভিড় করেন। এখন চলছে শেষ মুহুর্তের কেনাকাটা। গতকাল রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং মলে একটি ব্র্যান্ডের শোরুমেছবি: জাহিদুল করিম

চলতি সপ্তাহেই পবিত্র ঈদুল ফিতর। তাই ফুটপাত থেকে শুরু করে বিপণিবিতানে সর্বত্রই চলছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা। যদিও ক্রেতাদের ভিড় তুলনামূলক কম। কারণ, ঈদের লম্বা ছুটি শুরু হওয়ায় ঢাকা ফাঁকা হতে শুরু করেছে। এর মানে, ঢাকায় ঈদের বেচাবিক্রির বড় অংশই গত সপ্তাহে শেষ। তবে মফস্‌সলে এখন জমজমাট কেনাবেচা চলছে।

ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসায়ে এবার ভালো করছে নামীদামি কিছু ব্র্যান্ড। তাদের বিক্রি গতবারের চেয়ে ১০ শতাংশ বা তারও বেশি। তবে কোনো কোনো ব্র্যান্ডের ব্যবসা অবশ্য গতবারের চেয়ে খানিক কমেছে। সে জন্য তারা শেষ মুহূর্তে বড় মূল্যছাড় দিয়ে বিক্রি বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

একাধিক ব্র্যান্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে বলেন, দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তন ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে উদ্বেগ ছিল। তারপরও ক্রেতারা কেনাকাটা করেছেন। ব্যবসা যা হয়েছে, সেটি সন্তোষজনক।

গত শতকে দেশে আড়ং, অঞ্জনস, রঙসহ হাতে গোনা কয়েকটি পোশাকের ব্র্যান্ড ছিল। দেশের অর্থনীতি বড় হওয়ায়, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং ব্র্যান্ডের পোশাকের চাহিদা থাকায় গত দুই দশকে বেশ কিছু ব্র্যান্ড গড়ে উঠেছে। পোশাকে পাশ্চাত্যের সঙ্গে দেশি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মিশেলে নতুন একটি ধারা সংযোজন করতে পারায় ক্রেতাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছে ব্র্যান্ডগুলো।

বর্তমানে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে আড়ং, সেইলর, লা রিভ, টুয়েলভ, ইয়েলো, সারা লাইফস্টাইল, জেন্টল পার্ক, ক্যাটস আই, এক্সটাসি, রিচ ম্যান, লুবনান, ইলিয়ান, ক্লাব হাউস, ইজি ফ্যাশন ইত্যাদি। অন্যদিকে শুধু দেশি পোশাকের জন্য সাদাকালো, ক্রে ক্র্যাফট, রঙ বাংলাদেশ, দেশাল, বিবিয়ানা, যাত্রা, নিপুণসহ কয়েকটি ফ্যাশন হাউস বেশ জনপ্রিয়।

রঙ বাংলাদেশের স্বত্বাধিকারী সৌমিক দাশ গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, রোজার প্রথম ৮–১০ দিন ক্রেতাদের উপস্থিতি কম ছিল, তারপর বেড়েছে। দিন দুয়েক ধরে আবার কমছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত বিক্রিতে ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আশা করছি, শেষ পর্যন্ত ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। কারণ, ঈদের আগের কয়েক দিন মফস্‌সলে ভালো ব্যবসা হয়। তিনি জানান, ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় রঙ বাংলাদেশের ২০টি বিক্রয়কেন্দ্র আছে।

নব্বইয়ের দশক থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানির সঙ্গে জড়িত ইপিলিয়ন গ্রুপ। ১০ বছর আগে যমুনা ফিউচার পার্ক ও ধানমন্ডিতে দুটি বিক্রয়কেন্দ্র দিয়ে সেইলর নামে পোশাকের ব্র্যান্ড গড়ে তোলে গ্রুপটি। বর্তমানে তাদের বিক্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ২৩। চলতি বছর ভোলা ও নরসিংদীতে নতুন বিক্রয়কেন্দ্র খুলেছে তারা। গত ২৫ রমজান পর্যন্ত তাদের বিক্রি গতবারের চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি হয়েছে। নতুন দুই বিক্রয়কেন্দ্র ছাড়া হিসাব করলে ব্যবসা গতবারের চেয়ে ৩২ শতাংশের মতো বেড়েছে।

— ঈদের বেচাবিক্রি এখন ঢাকায় কম, তবে মফস্‌সলে বেশ জমজমাট।
— যাদের বিক্রি কম, তারা শেষ মুহূর্তে বড় মূল্যছাড় দিয়ে পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
— ব্র্যান্ডের পোশাকের চাহিদা থাকায় দিন দিন নতুন নতুন ব্র্যান্ড গড়ে উঠছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সেইলরের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) রেজাউল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকা ও ঢাকার বাইরে প্রায় সব বিক্রয়কেন্দ্রেই আমরা ক্রেতাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পেয়েছি। পোশাকের মান ও নকশার উন্নয়নে আমরা বেশ আগে থেকেই বিনিয়োগ করেছি। সেটির ব্যবসায়িক সুফল আমরা এবার বেশ ভালোভাবে পেয়েছি।’

দেড় দশক আগে ঢাকার উত্তরা ও বনশ্রীতে ছোট্ট দুটি বিক্রয়কেন্দ্র নিয়ে পোশাকের ব্র্যান্ড লা রিভের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে তাদের বিক্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ২৬। এর মধ্যে চলতি বছরে নতুন পাঁচটি বিক্রয়কেন্দ্র চালু করেছে তারা। ঈদে লা রিভের আগের ২১ বিক্রয়কেন্দ্রের বেচাকেনায় এবার প্রবৃদ্ধি ১০ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে থাকবে। সামগ্রিকভাবে প্রবৃদ্ধি আরেকটু বেশি হবে।

এমন তথ্য দিয়ে লা রিভের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মন্নুজান নার্গিস প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের কেনাকাটায় উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাব কিছুটা হলেও পড়েছে। গতবারের চেয়ে বড় বিল কম হয়েছে। আগে যাঁরা দু–তিনটি পোশাক কিনতেন, তাঁরা একটি করে কিনেছেন।

তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক টিম গ্রুপের দেশি পোশাকের ব্র্যান্ড হচ্ছে টুয়েলভ। বর্তমানে তাদের বিক্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ৪৮। তাদের বিক্রি গত বছরের তুলনায় ৮ শতাংশ বাড়তি। গতবার যতগুলো বিক্রয়কেন্দ্র ছিল, সেগুলো হিসাবে নিলে বাড়বে ১১ শতাংশের মতো।

এমন তথ্য দিয়ে টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, ‘কিছু ক্যাটাগরিতে আমরা বেশ ভালো করেছি। দুই–একটিতে ভালো হয়নি। সব মিলিয়ে আমরা আমাদের লক্ষ্যমাত্রা থেকে কিছুটা পিছিয়ে আছি। তারপরও ব্যবসা সন্তোষজনক।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা পণ্যের মান উন্নয়নে বেশ জোর দিয়েছি। আগামী দুই বছরে সেটির সুফল আরও বেশি মিলবে।’

শীর্ষস্থানীয় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক স্নোটেক্স গ্রুপের পোশাকের আরেক ব্র্যান্ড সারা লাইফস্টাইলের বিক্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বর্তমানে ১৫। সব মিলিয়ে এবারের ঈদে তাদের বিক্রি গতবারের চেয়ে ১০ শতাংশ বেড়েছে। তবে গতবার যতগুলো বিক্রয়কেন্দ্র ছিল, সেটি আমলে নিয়ে ব্যবসায়ে প্রবৃদ্ধি হবে ৭ শতাংশ।

সারা লাইফস্টাইলের হেড অব অপারেরশন মতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের ম্যানস, লেডিস ও গার্লস—এই তিন শ্রেণির পোশাক ভালো বিক্রি হয়েছে।’ বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ছুটি শুরু হওয়ায় ঢাকার বেচাবিক্রি কমে গেছে। মফস্‌সলে চলছে।

শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু হয় ইজি ফ্যাশনের। বর্তমানে তাদের বিক্রয়কেন্দ্র আছে ৯১। গত এক বছরে তাদের বিক্রয়কেন্দ্র বেড়েছে পাঁচটি। তবে এবারের ঈদে গতবারের চেয়ে বেচাবিক্রি প্রায় ১০ শতাংশ কম হয়েছে তাদের।

এমন তথ্য দিয়ে ইজি ফ্যাশনের পরিচালক তৌহিদ চৌধুরী বলেন, ‘গত বছর ব্যবসা অনেক ভালো হয়েছিল। সেই তুলনায় এবার কিছুটা কম হয়েছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে অনেকের মতো আমাদেরও বিক্রি কম হয়েছে। তবে যতটুকু খারাপ হওয়ার আশঙ্কা ছিল তার চেয়ে বেশ ভালো হয়েছে ব্যবসা।’