চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসেই শুল্ক-কর আদায়ে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হয়েছে। গত জুলাই মাসে আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট ও শুল্ক খাতে সব মিলিয়ে ১৭ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। জুলাই মাসে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্য ছিল ২০ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। ঘাটতি হয়েছে ২ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা। তবে জুলাই মাসে রাজস্ব আদায়ে সার্বিকভাবে ১৫ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জুলাই মাসের রাজস্ব আদায়ের সাময়িক হিসাবে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এ দিকে গত বৃহস্পতিবার শুল্ক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিয়ে রাজস্ব পর্যালোচনা সভা করেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। সেগুনবাগিচায় এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভা সূত্রে জানা গেছে, রাজস্ব আদায়ে আরও কঠোর হওয়ার জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া করদাতাদের হয়রানি না করে তাঁদের কাছ থেকে সহজে কর আদায় করতে হবে। মাসভিত্তিক রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ ও কর্মকৌশল নির্ধারণ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ খাত বিশেষ করে এনবিআরের শুল্ক-কর আদায় বাড়ানোর জন্য সরকারের উচ্চ মহল থেকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত মাসেও রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি নিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান সব শুল্ক-কর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) এনবিআরকে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার বিশাল লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে, যা বিদায়ী অর্থবছরের চেয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি। বিদায়ী অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৩ লাখ ২ হাজার কোটি টাকার শুল্ক কর আদায় করেছে এনবিআর। লক্ষ্য অর্জনে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে প্রায় ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে হবে।
এবার জুলাই মাসে শুল্ক খাতে আগের বছরের জুলাই মাসের তুলনায় রাজস্ব আদায় বেশ বেড়েছে। শুল্ক খাতে প্রবৃদ্ধি প্রায় ৩৮ শতাংশ। মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক আদায় বেড়েছে। এ বছরের জুলাই মাসে শুল্ক আদায় হয়েছে ৬ হাজার ৭৬৬ কোটি টাকা, লক্ষ্য ছিল ৬ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা। এই খাতের পুরো লক্ষ্য অর্জন হয়েছে। গত বছরের জুলাই মাসের তুলনায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার মতো বেশি আদায় হয়েছে।
অন্যদিকে গত জুলাই মাসে ভ্যাট আদায়ে ঘাটতি প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার মতো। জুলাই মাসে ৬ হাজার ৭৬৬ কোটি টাকার ভ্যাট আদায় হয়েছে। জুলাই মাসে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৮ হাজার ২১৪ কোটি টাকা। আয়কর আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ৯৩৫ কোটি টাকা। জুলাই মাসে আয়কর ও ভ্রমণ কর আদায় হয়েছে ৪ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। এ সময়ে কর আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৫ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে ২০১৬-২০ পাঁচ বছরের কর-জিডিপির অনুপাত গড়ে ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ দেখানো হয়। পূর্বের হিসাবে যা ১০ দশমিক ২ শতাংশ ছিল। এই হার সার্ক দেশগুলোর মধ্যে তলানিতে, নেপালের অর্ধেকের চেয়ে কম। এমনকি যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের কর-জিডিপি অনুপাতও বাংলাদেশের চেয়ে ভালো। অথচ বিশ্বের উদীয়মান দেশ ও এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ হার বাংলাদেশের দ্বিগুণেরও বেশি অর্থাৎ ২৬ দশমিক ৭ শতাংশ। এমনকি সাব-সাহারা আফ্রিকার দেশগুলোর কর-জিডিপি হারও বাংলাদেশের চেয়ে বেশি অর্থাৎ ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ।