বেশি মুনাফা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের

সঞ্চয়পত্রপ্রতীকী ছবি

সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বাড়ানো হয়েছে। মেয়াদ পূরণ সাপেক্ষে সঞ্চয়পত্রের ধরন অনুসারে এ হার বেড়ে হয়েছে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত। সর্বোচ্চ এই মুনাফা পাবেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁদের পেনশনার সঞ্চয়পত্রে।

 গতকাল বুধবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বাড়িয়ে নতুন আদেশ জারি করেছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি)। অর্থ বিভাগের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আইআরডি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাতে সবচেয়ে বেশি মুনাফা পেনশনার সঞ্চয়পত্রে। নতুন হারে কোনো সঞ্চয়পত্রেই মুনাফার হার ১২ শতাংশের কম হবে না। আবার বিনিয়োগ সীমার ভিত্তিতেও মুনাফার হারে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন থেকে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মুনাফার হার হবে একরকম। আর সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফার হার হবে কম। অর্থাৎ কম বিনিয়োগে তুলনামূলক বেশি মুনাফা আর বেশি বিনিয়োগে কিছুটা কম মুনাফা।

এদিকে মুনাফার হার বৃদ্ধির বিষয়ে আইআরডি সচিব মো. আবদুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বাড়ানো হয়েছে। এতে কত টাকা বাড়তি ব্যয় হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ হিসাব আইআরডি করেনি। তবে অর্থ বিভাগ করে থাকতে পারে।

আইআরডি সূত্রে জানা গেছে, এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে যাঁরা সঞ্চয়পত্র কিনেছেন, তাঁরাই নতুন হারে মুনাফা পাবেন। যাঁদের এরই মধ্যে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ রয়েছে, তাঁরা আগের হারেই মুনাফা পাবেন।

কোন সঞ্চয়পত্রে কত মুনাফা

আগের মতো এবারও যেকোনো সঞ্চয়পত্রে মেয়াদের প্রথম বছরে মুনাফার হার কম রাখা হয়েছে। যেকোনো সঞ্চয়পত্রে নির্ধারিত সর্বোচ্চ মুনাফা পাওয়া যাবে মেয়াদ পূর্তিতে।

দেশে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের অধীনে যত ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় পরিবার সঞ্চয়পত্র। এ ধরনের সঞ্চয়পত্রে পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর এত দিন মুনাফার হার ছিল ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। এখন এই সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মেয়াদ পূর্তিতে মুনাফার হার বাড়িয়ে করা হয়েছে সাড়ে ১২ শতাংশ। আর সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে এই মুনাফার হার কিছুটা কম, ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

এখন থেকে পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে পঞ্চম বছর শেষে অর্থাৎ মেয়াদ পূর্তিতে মুনাফা মিলবে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। আর সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার হবে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এত দিন এই সঞ্চয়পত্র কিনলে পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর মুনাফার হার ছিল ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

অন্যদিকে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হারও বেড়েছে। এত দিন এই সঞ্চয়পত্রে মেয়াদ পূর্তিতে মুনাফার হার ছিল সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। এখন থেকে এই সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মেয়াদ পূর্তিতে মুনাফার হার হবে ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ। আর সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফার হার হবে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

এ ছাড়া তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলেও বেশি মুনাফা পাবেন ক্রেতারা। এত দিন এই সঞ্চয়পত্র কিনে তিন বছর পর মেয়াদ পূর্তির বছরে মুনাফার হার ছিল ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। এখন এই সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মেয়াদ পূর্তিতে মুনাফার হার হবে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই মুনাফার হার হবে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ।

এর বাইরে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে মেয়াদি হিসাবেও মুনাফার হার বাড়িয়েছে সরকার। তিন বছর মেয়াদ পূর্ণ হলে এবং সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে ডাকঘর সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার হবে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই হার ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ।

ট্রেজারি বন্ডের সুদের হারের পাশাপাশি ব্যাংকে আমানতের সুদের হারও এখন বেশি। সরকার তাই সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বৃদ্ধির বিষয়ে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আবার ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার বাড়ানোরও উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। শিগগিরই এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

গত জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলন; ক্ষমতার পটপরিবর্তন; রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় ব্যবসা-বাণিজ্যে শ্লথগতি থাকায় চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে রাজস্ব আদায়ে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি আছে। তাই বাজেটের অর্থের জোগান বাড়াতে সম্প্রতি শতাধিক পণ্য ও সেবায় শুল্ক ও ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে এখন মুনাফার হার বাড়িয়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়াতে
চায় সরকার।