বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ
এক দরজায় সেবায় সাড়া কম
ব্যবসা সহজ করার জন্য এক জায়গা থেকে বিনিয়োগকারীদের সব সেবা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে সাড়া কম।
এক দরজায় সেবা বা ওয়ান–স্টপ সার্ভিস সেন্টারের (ওএসএস) মাধ্যমে আমদানি ও রপ্তানি নিবন্ধন সনদ দিতে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের (সিসিআইই) সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। ২ বছর ৯ মাস পর এসে দেখা যাচ্ছে, বিডার ওএসএসের মাধ্যমে এই সনদ নেওয়ার জন্য আবেদন হয়েছে মাত্র পাঁচটি।
শুধু আমদানি ও রপ্তানি নিবন্ধন সনদ নয়, এক দরজায় সেবাব্যবস্থার মাধ্যমে অন্যান্য লাইসেন্স ও অনুমতির আবেদন জমা পড়ছে খুবই কম। শুধু বিডা যেসব অনুমোদন দেয়, সেসব অনুমোদন নিতে বেশি আবেদন জমা পড়ছে।
২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিডা ঘটা করে ওএসএস পোর্টাল চালু করে। কথা ছিল, ব্যবসায়ীরা বিডার কাছে অনলাইনে বিনিয়োগসংক্রান্ত সব লাইসেন্স ও অনুমতির জন্য আবেদন করবেন। বিভিন্ন সরকারি দপ্তর এই ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। ফলে ব্যবসায়ীদের সেবা পেতে আলাদা আলাদা দপ্তরে যেতে হবে না।
দপ্তরগুলো চায় তাদের কাছে ব্যবসায়ীরা যেন সরাসরি যায়। অনেক সময় আর্থিক লেনদেনের বিষয়টিও এই প্রবণতার পেছনে অনুঘটক হিসেবে কাজ করে।আবুল কাসেম খান, সাবেক চেয়ারপারসন, বিল্ড
সরকারি বিভিন্ন সংস্থা যাতে এক দরজার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের সেবা দেয়, সে জন্য ২০১৮ সালে ওয়ান–স্টপ সার্ভিস আইন করা হয়। যদিও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিডার ওএসএস চালুর চার বছরের মাথায় উদ্যোগটি ব্যর্থতার মুখে পড়েছে।
বিডার কর্মকর্তাদের দাবি, বিনিয়োগকারীরা সেবা নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তাঁরা সেবার জন্য সরাসরি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে যেতেই পছন্দ করছেন। বিডার নতুন নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। এই সেবা পুরোপুরি কার্যকর করতে আরও সময় দিতে হবে।’
ব্যবসা সহজ ‘হলো না’
বিনিয়োগ বোর্ড ও বেসরকারীকরণ কমিশনকে একীভূত করে ২০১৬ সালে সরকার বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করে। এর প্রথম নির্বাহী চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ও বিশ্বব্যাংকের সাবেক বিকল্প নির্বাহী পরিচালক কাজী মো. আমিনুল ইসলামকে। বিডা শুরুতেই ব্যবসা সহজ করতে দুটি উদ্যোগ নেয়—১. বিশ্বব্যাংকের সহজে ব্যবসা সূচক বা ইজ অব ডুয়িং বিজনেসে উন্নতির জন্য সংস্কার করা। যদিও এই সূচক পরে স্থগিত করে বিশ্বব্যাংক। ২. এক দরজায় সেবা চালু করা।
বিডা এখন পর্যন্ত ১৯টি সংস্থার সঙ্গে ৫৮ ধরনের সেবা নিয়ে চুক্তি করেছে। কিন্তু বিডার হিসাবে দেখা গেছে, মাত্র আটটি সংস্থা থেকে ১০ ধরনের সেবা নিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। সংখ্যা খুবই কম। কোম্পানি নিবন্ধিত হয়েছে মাত্র চারটি। পরিবেশ ছাড়পত্র নিয়েছে মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠান। তবে বিডার নিজস্ব সেবাগুলো ওএসএসের মাধ্যমে দেওয়ার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।
বিডার সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম মনে করেন, ওএসএস আরও কার্যকর করতে ব্যবসায়ী নেতাদের এগিয়ে আসতে হবে। অন্য দপ্তরের সেবা নিতে আবেদন একদমই কম আসছে।
যেসব সংস্থার সঙ্গে বিডা চুক্তি করেছে, তার একটি আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রক কার্যালয় (সিসিআইই)। জানতে চাইলে সিসিআইইর প্রধান নিয়ন্ত্রক শেখ রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো আবেদন এলে আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই তা করে দেই। কিন্তু আবেদন তো আসে না।’
আগ্রহ নেই কেন
চুক্তির পরও কেন সেবা নিচ্ছে না ব্যবসায়ীরা, তা জানতে চাইলে বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) সাবেক চেয়ারপারসন আবুল কাসেম খান প্রথম আলোকে বলেন, বিডার এক দরজায় সেবা উদ্যোগটা ভালো। কিন্তু এটি পুরোপুরি ব্যবহারবান্ধব না। এটা নিয়ে প্রচারণাও কম। অনেক সংস্থা নিজেরাই অনলাইনে এখন দ্রুত ও ভালো সেবা দিচ্ছে। ফলে মানুষ সেখানে যাচ্ছে।
সরকারি দপ্তরগুলো নিজেদের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে বিডাকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা করছে না বলেও মনে করেন আবুল কাসেম খান। তিনি বলেন, দপ্তরগুলো চায় তাদের কাছে ব্যবসায়ীরা যেন সরাসরি যান। অনেক সময় আর্থিক লেনদেনের বিষয়টিও এই প্রবণতার পেছনে অনুঘটক হিসেবে কাজ করে।