এডিপিতে বরাদ্দ ২৯২ কোটি টাকা, অথচ ১ টাকাও খরচ হয়নি
চার মাসে খরচ হয়েছে ২১,০৯৭ কোটি টাকা, যা এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা কম।
উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে জুলাই-আগস্টের আন্দোলন, ক্ষমতা পরিবর্তন এবং ঠিকাদার ও প্রকল্প পরিচালকদের অনুপস্থিতির প্রভাব পড়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাতটি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। পাকিস্তান, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ভুটান, ব্রুনেই ও সৌদি আরবে সাতটি চ্যান্সারি কমপ্লেক্স তৈরির জন্য আলাদাভাবে এসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরে এই সাত প্রকল্পে মোট ১৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু অর্থবছরের প্রথম চার মাসে, অর্থাৎ জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১ টাকাও খরচ করা সম্ভব হয়নি।
একইভাবে আইন ও বিচার বিভাগ তাদের চারটি প্রকল্পে ১৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে গত চার মাসে ১ টাকাও খরচ করতে পারেনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন ও বিচার বিভাগের ১১টি প্রকল্পে মোট ২৯২ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে ১ টাকাও খরচ হয়নি। মূলত ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর নানামুখী ঝাপটায় উন্নয়ন প্রকল্পে স্থবিরতা চলছে বলে মনে করা হয়।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্রে জানা গেছে, গত চার মাস জুলাই-অক্টোবরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) খরচ হয়েছে ২১ হাজার ৯৭ কোটি টাকা, যা এর আগের ২০২৩–২৪ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা কম। আগের অর্থবছরের একই সময়ে খরচ হয়েছিল ৩১ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের এডিপির মোট আকার ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা।
আইএমইডির নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, গত ১৫ বছরের মধ্যে চলতি অর্থবছরেই প্রথম চার মাসে সর্বনিম্ন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে। ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছর পর্যন্ত চার মাসের হিসাবে আর কখনোই এত কম এডিপি বাস্তবায়ন হয়নি। প্রতিবারই প্রথম চার মাসে এডিপির ১০ থেকে ১৫ শতাংশের মতো বাস্তবায়ন হয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলন; ক্ষমতার পটপরিবর্তন এবং ঠিকাদার ও প্রকল্প পরিচালকদের খুঁজে না পাওয়া—সবকিছুর প্রভাব পড়েছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে। ফলে গত দেড় দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে এগোতে হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনা করে প্রকল্প নেওয়া উচিত। ব্যাংক থেকে বিরাট অঙ্কের অর্থ ঋণ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা উচিত নয়। তিনি আরও বলেন, বর্তমান এডিপিতে বহু প্রকল্প রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। আবার কিছু প্রকল্প শুরুর দিকে আছে, যদিও সেগুলোর তেমন একটা প্রয়োজন নেই। এ ধরনের প্রকল্প এডিপি থেকে বাদ দেওয়া উচিত। বরং বিদেশি সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প ও শেষের দিকে থাকা প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত।
৩৮ মন্ত্রণালয় ১০ শতাংশ টাকা খরচ করেনি
এডিপিতে সব মিলিয়ে ৫৬ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ১ হাজার ৩৫২টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত আছে। এর মধ্যে ৩৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বরাদ্দের ১০ শতাংশও খরচ করতে পারেনি গত জুলাই–অক্টোবর সময়ে। অর্থাৎ ৬৮ শতাংশ মন্ত্রণালয়ের পারফরম্যান্স দুর্বল।
এ তালিকায় থাকা মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অন্যতম হলো সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ; প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়; নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়; স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ; মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ; পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়; সেতু বিভাগ; বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়; স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ; জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ; কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়; বাণিজ্য মন্ত্রণালয়; নির্বাচন কমিশন সচিবালয়।
সরকার যা করছে
অন্তর্বর্তী সরকার এখন খরচ বাড়িয়ে অর্থনীতি চাঙা রাখার চেষ্টা করছে। গত সোমবার নীতিনির্ধারক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে অগ্রাধিকারমূলক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। সেই অনুসারের সংশোধিত এডিপিতে ওই সব প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হবে। এ ছাড়া বিদেশি সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন অগ্রাধিকার পাবে।
সরকার এখন প্রকল্প যাচাই–বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্য রয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে অতিমূল্যায়িত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া এ ধরনের বেশ কিছু প্রকল্প এডিপি থেকে বাদ দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।