টেকসই উন্নয়নে দরকার পরিবেশবান্ধব প্রবৃদ্ধি কাঠামো: বিশ্বব্যাংক

২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হতে চায় বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংক মনে করে, এই লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন দরকার। সেটা নিশ্চিত করতে দরকার প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, নিয়মকানুনের সংস্কার, জলবায়ু সহনশীল সরকারি ও বেসরকারি অর্থায়ন ও সেই সঙ্গে নীতি কাঠামো কার্যকর করা।

ফ্রেমওয়ার্ক ফর ইমপ্লিমেন্টিং গ্রিন গ্রোথ ইন বাংলাদেশ–২০২৩ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছে। তারা বলেছে, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও পরিবেশগত কমপ্লায়েন্স বা নিয়মকানুন মান্য করার মধ্যে একধরনের ভারসাম্য দরকার। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ যেমন নিশ্চিত করতে হবে, তেমনি পরিবেশগত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে—এই দুটোর মধ্যে ভারসাম্য দরকার। খবর বিজ্ঞপ্তি
এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের তিনটি সামগ্রিক লক্ষ্য অর্জনে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক, যেমন পরিবেশগত কার্যকর শাসনব্যবস্থা, নতুন জ্বালানি ব্যবহার, পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের নতুন চালিকাশক্তি খোঁজা ও সর্বোপরি পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যকর সমাজ নির্মাণ। নীতিগত যেসব দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে আছে পরিবেশ আইনকানুন শক্তিশালী করা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবসার সম্প্রসারণ, পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ও মানবসম্পদে বিনিয়োগ আর জনস্বাস্থ্য ও মানবকল্যাণের মানোন্নয়ন। বিশ্বব্যাংকের সুপারিশ হলো, ঈপ্সিত ফল পেতে এসব নীতি একযোগে বাস্তবায়ন করা।

ভুটান ও বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের প্রধান আব্দুল্লায়ে সেক বলেছেন, বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, প্রবৃদ্ধির যে ধরনের কারণে পরিবেশের ক্ষতি হয়, তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। অন্যদিকে দেখা যায়, পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের মাধ্যমে যেমন খুবই কার্যকরভাবে দারিদ্র্য বিমোচন করা যায়, তেমনি পরিবেশও সুরক্ষিত রাখা যায়। বাংলাদেশ সরকার যে বিশ্বব্যাংকের নতুন লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের অঙ্গীকার করেছে, তাতে তিনি খুশি।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের ক্ষেত্রে সামগ্রিক মনোভাব থাকা দরকার। নির্মল বায়ু, পানি, ভূমি, মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান, চলমানতা, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও মানব পুঁজিতে বিনিয়োগ—এসব কিছু উন্নয়ন মনোভঙ্গিতে থাকা দরকার। এ ছাড়া পরিবেশবান্ধব উন্নয়নে অর্থায়ন নিশ্চিত করা ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ আমলে নেওয়া দরকার। বিভিন্ন খাতে পরিবেশবান্ধব দক্ষতা ও সরকারি-বেসরকারি খাতের মধ্যে অংশীদারি গড়ে তোলা দরকার।

প্রতিবেদনের সহ-লেখক জু অ্যালিসন য়ু বলেন, পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকারি-বেসরকারি খাত ও অন্যান্য অংশীদারের মধ্যে সমন্বয় ও অংশীদারি গড়ে তোলা জরুরি। তিনি আরও বলেন, পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের জন্য অগ্রাধিকার নিশ্চিত করা ও তা বাস্তবায়ন দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ভূমিকা পালন করবে।

পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন নিশ্চিতে শাসনকাঠামো নিশ্চিত করাসহ প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও পরিবেশবান্ধব বাজারব্যবস্থা উন্নয়নে মিশ্র প্রণোদনা দেওয়া দরকার বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। দেশের অর্থনৈতিক ও বিভিন্ন খাতের অগ্রাধিকারের সঙ্গে খাপ খাইয়ে কীভাবে পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন নিশ্চিত করা যায়, এই কাঠামো তার ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে পারে। পরিবেশবান্ধব, জলবায়ু সহনশীল ও আরও টেকসই বাংলাদেশ নির্মাণে তা ইতিবাচক পদক্ষেপ হতে পারে।