ভুল নীতির মাশুল অর্থনীতিতে
বিশ্ব অর্থনীতির সংকট তো ছিলই। তবে দেশের অর্থনীতিতে সংকট বেড়েছে নানা ভুল নীতির কারণেও।
টাকার মান কৃত্রিমভাবে ধরে রাখার খেসারত দিতে হচ্ছে গোটা অর্থনীতিকে। ডলারের বিনিময় হার বাংলাদেশ ব্যাংক ধরে রেখেছিল বহু বছর। কিন্তু অর্থনীতি যখন সংকটে পড়ল, কমে গেল ডলার আয়, তখন আর পরিস্থিতি সামাল দিতে পারল না বাংলাদেশ।
ডলার–সংকটের প্রভাব এখন পুরো অর্থনীতিতে। এর ফলে সরকারের লেনদেনে দেখা দিয়েছে রেকর্ড ঘাটতি, কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ঋণ পরিশোধের খরচ বেড়েছে, দেখা দিয়েছে জ্বালানিসংকট, অসহনীয় হয়ে উঠেছে মূল্যস্ফীতির চাপ।
ভুল অর্থনৈতিক নীতি সংকটকে আরও প্রকট করছে। ফলে যে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা দেশে উচ্চ প্রবৃদ্ধি দিয়েছে, তা–ও হুমকির মুখে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন সরকারের অগ্রাধিকার হতে হবে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। কিন্তু তা না করে প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর নীতিতেই আগ্রহ বেশি সরকারের। এতে সংকট আরও বাড়ছে।
এ রকম এক পরিস্থিতির প্রভাব পড়ে বাংলাদেশেও। ডলারের দাম বাড়ে, আয়ও কমে যায়। বেশি দামে পণ্য আমদানি করতে হয়। তীব্র হয় জ্বালানিসংকট। আমদানি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়িয়ে দেয়
যেভাবে সংকট শুরু
বিশ্ব অর্থনীতির সংকট শুরু হয় অতিমারি কোভিড-১৯ দেখা দেওয়ার পর। এই অতিমারি চলে টানা দুই বছর। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসা শুরু হয়। ২০২২ সালের শুরুতে যখন বিশ্ব প্রস্তুত হচ্ছিল অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে, তখনই রাশিয়া আক্রমণ করে ইউক্রেন। এতে সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, খাদ্য, সার, জ্বালানিসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যায়। বিশ্বে ডলারে কেনাবেচাই সবচেয়ে বেশি হয়। ফলে বাড়তে থাকে ডলারের দাম, দেখা দেয় মূল্যস্ফীতি। মূল্যস্ফীতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকব্যবস্থা দি ফেডারেল রিজার্ভ বা ফেড আগ্রাসীভাবে সুদহার বাড়াতে থাকে। ফলে ডলারের দর আরও বেড়ে যায়। এতে যাদের রপ্তানি পণ্যের তালিকায় জ্বালানি তেল নেই, তারা সবচেয়ে সংকটে পড়ে যায়।
এ রকম এক পরিস্থিতির প্রভাব পড়ে বাংলাদেশেও। ডলারের দাম বাড়ে, আয়ও কমে যায়। বেশি দামে পণ্য আমদানি করতে হয়। তীব্র হয় জ্বালানিসংকট। আমদানি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়িয়ে দেয়। এ রকম এক পরিস্থিতির মধ্যেও অর্থনীতির মৌলিক নীতি অনুসরণ না করে বাংলাদেশ মুদ্রানীতি অকার্যকর করে রেখেছে। ফলে মূল্যস্ফীতি এখন ১০ শতাংশ ছুঁই ছুঁই। এমন এক সময়ে ঋণমান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান মুডিস বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়ে দিয়েছে।
বিনিময় হারে নিয়ন্ত্রণ
বাংলাদেশ ২০০৩ সালে বিনিময় হার ভাসমান করার নীতি কার্যকর করলেও তা পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশে রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি। ফলে আমদানিকারকদের সুবিধা দিতেই বিনিময় হার ধরে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া টাকার মান শক্তিশালী দেখানোর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে।
২০১২ সালের জুন শেষে দেশে ১ ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৮১ দশমিক ৮৭ টাকা। ২০২১ সালের জুন শেষে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৮৪ দশমিক ৮০ টাকা। এই ৯ বছরে টাকার অবমূল্যায়ন হয় মাত্র ৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। একই সময়ে ভারতের রুপির অবমূল্যায়ন করা হয় ৩২ শতাংশ। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করলে রপ্তানির বাজার ধরে রাখতে চীন ইউয়ানের বড় অবমূল্যায়ন করে। বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা এই নীতি অনুসরণ করলেও বাংলাদেশ তখনো টাকার মান কৃত্রিমভাবে ধরে রেখেছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। অর্থনীতির কঠিন এক সময়ে বড় হারে ঠিকই অবমূল্যায়ন করতে হয়।
ডলারের বিনিময় মূল্য এখন ১০৮ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবেই ২০২১-২২ অর্থবছরে টাকার অবমূল্যায়ন করা হয়েছে ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। একই সময়ে রুপির অবমূল্যায়ন হয়েছে যথাক্রমে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং ৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ফলে ভারতকে ডলারের দর ও মূল্যস্ফীতি নিয়ে বড় সংকটে পড়তে হয়নি।
এরপরও বিনিময়ের হারের অসংগতি দূর হয়নি। দেশে এখন বিনিময় হারের চারটি দর রয়েছে। এতে সমস্যার কিছু সমাধান হয়েছে, পুরোটা না। ফলে হুন্ডি কমছে না, আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে অর্থ পাচারও কমেনি।
সংকট সরকারের আর্থিক হিসাবে
ডলার–সংকটের প্রথম ধাক্কায় ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি ব্যয়ে প্রবৃদ্ধি হয় প্রায় ৩৬ শতাংশ। একই সময়ে প্রবাসী আয় হ্রাস পায় ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ। এতে চলতি হিসাবে ঘাটতি দেখা দেয় ১ হাজার ৮৬৯ কোটি ডলার, যা ছিল দেশের ইতিহাসে রেকর্ড। একই সময়ে সামগ্রিক লেনদেনে ঘাটতি হয় ৬৩৮ কোটি ডলার। ২০০৯ সালের পরে বাংলাদেশে এত বড় ঘাটতি আর কখনো হয়নি। চলতি অর্থবছরের গত মার্চ পর্যন্ত সামগ্রিক লেনদেনে ঘাটতি আরও বেড়ে হয়েছে ৮১৬ কোটি ডলার।
আবার স্বল্প বিদেশি বিনিয়োগ এবং বেসরকারি খাতের নেওয়া বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ ও স্বল্পমেয়াদি ঋণ নবায়ন না হওয়ার কারণে সরকারের আর্থিক হিসাবে এখন পর্যন্ত ২২১ কোটি ডলার ঘাটতি হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে যত ডলার বাইরে চলে যাচ্ছে, সে তুলনায় দেশে ডলার আসছে কম। সাধারণত আর্থিক ঘাটতি দেখা যায় না। দেশে সর্বশেষ আর্থিক হিসাবে ঘাটতি ছিল ২০১১-১২ অর্থবছরে, ৯৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। সুতরাং এ ক্ষেত্রেও নতুন রেকর্ড হতে যাচ্ছে। এই আর্থিক হিসাবের ঘাটতি বন্ধ করতে না পারলে রিজার্ভ কমতেই থাকবে।
মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে—এই ভয়ে ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়নি, সেই মূল্যস্ফীতি তো বাড়লই, ডলার–সংকটও কাটেনি। অর্থাৎ দুই কূলই গেল।
এদিকে সরবরাহ ঠিক রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংককে বাজারে ডলার ছেড়ে দিতে হয়েছে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে ছেড়েছে ৭৮১ কোটি ১৭ লাখ ডলার, চলতি অর্থবছরে এপ্রিল পর্যন্ত বিক্রি করেছে আরও ১ হাজার ১৭৩ কোটি ডলার। সব মিলিয়েই এতে দেশের রিজার্ভ নেমে এসেছে ২ হাজার ৯৯১ কোটি ৭৩ লাখ ডলারে, এক বছর আগেও যা ছিল ৪ হাজার ২২০ কোটি ২০ লাখ ডলার। অর্থাৎ এক বছরেই রিজার্ভ কমেছে ২৯ শতাংশ।
অথচ দাম কমছে বিশ্ববাজারে
এখনকার প্রায় ১০ শতাংশ গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই মূল্যস্ফীতি কমানোর কথা সরকার বলছে ঠিকই, কিন্তু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর তেমন পদক্ষেপ নেই।
ইউক্রেন যুদ্ধের পর জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি ছিল মূল্যস্ফীতির বড় কারণ। ২০২০ সালের এপ্রিলে যে তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ছিল ২০ ডলার, ২০২২ সালের মে মাসে তা বেড়ে হয় ১২৩.২১ ডলার। আবার বাংলাদেশ যখন গত বছরের আগস্টের প্রথম সপ্তাহে জ্বালানি তেলের দর ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়, তখন বিশ্ববাজারে তেলের দর ছিল ১০০ দশমিক শূন্য ৩ ডলার। সেই তেলের দর এখন কমে হয়েছে ৭৬ দশমিক ২৯ ডলার।
অন্যদিকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএই) গত ২ জুন বলেছে, গত এক বছরে বিশ্ববাজারে খাদ্যসূচক কমেছে ২০ শতাংশের বেশি। এই সূচক সর্বোচ্চ উঠেছিল গত বছরে মে মাসে। মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেছে, মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর গভর্নররা হাতে আরেকটি অস্ত্র পেলেন। আগের অস্ত্রটি ছিল ঋণের সুদহার কমানো। বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতিকে সরকার আমদানি করা বললেও, বিশ্ববাজারে দাম কমার সুফল এখানে নেই। ভুল নীতি গ্রহণ এর অন্যতম কারণ।
সরকার ডলার–সংকট মোকাবিলায় চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করেছে। এই কৌশল সাময়িক সময়ের জন্য কাজ করতে পারে। কিন্তু চাহিদাকে মাসের পর মাস নিয়ন্ত্রণ করলে কী হয়, তা আমরা এখন বুঝতে পারছি।
মূল্যস্ফীতি কমবে কীভাবে
২ জুন বাজেট–উত্তর সংবাদ সম্মেলনে মূল্যস্ফীতি কমানো নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার আসন্ন মুদ্রানীতির কথা জানান। তিনি বলেন, সেখানেই ব্যবস্থা থাকবে।
যেসব দেশ মুদ্রানীতি সফলভাবে প্রয়োগ করতে পেরেছে, তারাই মূলত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে। প্রায় সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নররা মৌলিক অর্থশাস্ত্রকে মেনে নিয়ে মুদ্রা সরবরাহ কমিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে প্রধান অস্ত্র হচ্ছে সুদহার বৃদ্ধি। এ জন্য তারা নীতি সুদহার বাড়িয়ে বাজারে সংকেত দিয়েছে যে ঋণকে ব্যয়বহুল করতে হবে, যাতে অর্থ সরবরাহ কমে। বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়ালেও এর সঙ্গে ঋণের সুদহারের কোনো সম্পর্ক নেই। সুদহার ৯ শতাংশ রাখা হয়েছে মূলত ব্যবসায়ীদের খুশি করতেই। বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে ডলার বিক্রি করে সমপরিমাণ টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নিলেও তার প্রভাব তেমন নেই; বরং সরকার মুদ্রা সরবরাহ কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা মানতেই চাচ্ছে না। ফলে বাজারে এ জাতীয় কোনো সংকেতও নেই। সুতরাং নতুন মুদ্রানীতি এলেও তা কার্যকর কিছু হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন না। ঋণের সুদের তুলনায় এখন মূল্যস্ফীতি বেশি। ফলে সস্তা ঋণ ব্যাংকের খেলাপি বাড়াচ্ছে, মূল্যস্ফীতিও ঘটাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মেনে বাংলাদেশ সুদহার ও বিনিময় হার ব্যবস্থার ওপর ছেড়ে দেওয়ার কথা বলছে। কিন্তু ইতিমধ্যে অনেক বিলম্ব হয়ে গেছে বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
দেশে জ্বালানিসংকটও এখন প্রকট। এতেও আছে ভুল নীতি। ২০১৫ সালে সরকারি পর্যায়েই বলা শুরু হয় যে দেশে গ্যাসের মজুত ফুরিয়ে আসছে। এরপরই তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির কথা জোরেশোরে প্রচার শুরু হয়। বিদ্যুৎ খাতকে এভাবেই পুরোপুরি আমদানিনির্ভর করা হয়।
উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা
সরকার নিয়ন্ত্রণ করায় আমদানি কমেছে। বিশ্বব্যাংক গতকাল বুধবারই প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, এতে কাঁচামালের সরবরাহ কমে গেছে। বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ সাদিক আহমেদ এক গবেষণায় দেখিয়েছেন, ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হওয়ার বড় কারণ ৮ শতাংশ হারে আমদানি বৃদ্ধি। এখন আমদানি কমে যাওয়ায় সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিও কমবে।
দেশে জ্বালানিসংকটও এখন প্রকট। এতেও আছে ভুল নীতি। ২০১৫ সালে সরকারি পর্যায়েই বলা শুরু হয় যে দেশে গ্যাসের মজুত ফুরিয়ে আসছে। এরপরই তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির কথা জোরেশোরে প্রচার শুরু হয়। বিদ্যুৎ খাতকে এভাবেই পুরোপুরি আমদানিনির্ভর করা হয়। ফলে ইউক্রেন যুদ্ধের পর যখন সব ধরনের জ্বালানির দাম বেড়ে যায়, তখনই শুরু হয় বিপদ। ডলারের অভাবে কয়লা কিনতে পারেনি, ডিজেল চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হয়েছে, দামের কারণে এলএনজি বাজারে অনেক দিন ঢোকা যায়নি, গ্যাসের মূল্য পরিশোধ করতেও ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। অথচ এরই মধ্যে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে, বেড়েছে গ্যাসের দাম। এতে উৎপাদ খরচ বেড়েছে, আবার বেশি দাম দিয়েও তা পাওয়া যাচ্ছে না।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মৌলিক সংকট হলো ডলার–সংকট। ডলার থাকলে জ্বালানি কেনা যেত। কাঁচামাল আমদানি করে উৎপাদন চালু রাখা যেত। এতে মূল্যস্ফীতির চাপ কমত। তাই ডলারের ওপর বাকি দুটির সংকট উত্তরণ মূলত নির্ভর করছে।
তাহলে কীভাবে ডলার–সংকটের উত্তরণ—এ প্রসঙ্গে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘সরকার ডলার–সংকট মোকাবিলায় চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করেছে। এই কৌশল সাময়িক সময়ের জন্য কাজ করতে পারে। কিন্তু চাহিদাকে মাসের পর মাস নিয়ন্ত্রণ করলে কী হয়, তা আমরা এখন বুঝতে পারছি।’
জাহিদ হোসেন আরও বলেন, মুদ্রা বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ করে রাখার ফলে কী হলো। গত কয়েক মাসে রপ্তানি খারাপ হয়নি। কিন্তু সেই অনুযায়ী রপ্তানির পুরো ডলার আসেনি। আবার প্রবাসে যত লোক গেছে, সেই অনুযায়ী রেমিট্যান্স আসেনি। প্রবাসীরা কি ডলার পাঠাননি? অবশ্যই পাঠিয়েছেন। হুন্ডিতে ১১৪-১১৫ টাকা দরে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। অন্যদিকে রপ্তানিকারকেরা দেখেছেন, এক মাস অপেক্ষা করলেই এক টাকা দর বেশি পাওয়া যায়। এতে ১০ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় আনলে এক কোটি টাকা বেশি পাওয়া যায়। সরকার নিয়মিত ডলারের দাম বাড়ানোর ফলে রপ্তানিকারকদের মধ্যে একধরনের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে তাঁদের এই প্রত্যাশা তৈরি হতো না, রপ্তানির পর পরই ডলার দেশে আনতেন তাঁরা।
জাহিদ হোসেনের মতে, ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে—এই ভয়ে এটি করা হয়নি। সেই মূল্যস্ফীতি তো বাড়লই। আবার ডলার–সংকটও কাটেনি। অর্থাৎ দুই কূলই গেল। ডলার বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে মূল্যস্ফীতি ও জ্বালানিসংকটের সমাধানের পথ খুলে যাবে। না করলে সমাধান খুঁজে পাওয়া মুশকিল হবে।