১৭ দেশের মধ্যে মাথাপিছু খাবারের ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে
বিশ্বের উন্নয়নশীল ১৭টি দেশের মধ্যে ক্রয়ক্ষমতার সমতা (পিপিপি) অনুসারে বার্ষিক মাথাপিছু জিডিপিতে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এর বিপরীতে দেশগুলোর মধ্যে পরিবার পর্যায়ে খাবারের পেছনে সবচেয়ে বেশি মাথাপিছু খরচ হয় বাংলাদেশে।
বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বাংলাদেশের অর্থনীতির হালনাগাদ পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মাথাপিছু জিডিপি ও খাবারের পেছনে মাথাপিছু খরচের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ঢাকার ধানমন্ডিতে সিপিডির কার্যালয়ে গতকাল রোববার এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত সিপিডির প্রতিবেদনে দেখা যায়, ওই ১৭ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু জিডিপি সবচেয়ে কম, ৭ হাজার ৮০৫ ডলার। অথচ ওই ১৭ দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাথাপিছু খরচ করেন বাংলাদেশের নাগরিকেরা, যার পরিমাণ ৯২৪ ডলার। এই হিসাব ২০২২ সালের। তবে এখানে ২০২১ সালের ক্রয়ক্ষমতার সমতা (পিপিপি) অনুসারে ডলারের হিসাবে ধরা হয়েছে।
এই তালিকায় বাংলাদেশ ছাড়া অন্য ১৬টি দেশ হলো, ইরান, ভারত, লাওস, শ্রীলঙ্কা, উজবেকিস্তান, আলজেরিয়া, ভিয়েতনাম, তিউনিসিয়া, বলিভিয়া, মরক্কো, ইরাক, ইন্দোনেশিয়া, কলম্বিয়া, ব্রাজিল, জর্ডান ও দক্ষিণ আফ্রিকা।
এসব দেশের মধ্যে খাবারের পেছনে সবচেয়ে কম মাথাপিছু খরচ হয় ইরানে। দেশটির নাগরিকেরা খাবারের জন্য বছরে মাথাপিছু ৪৩৫ ডলার খরচ করেন। মাথাপিছু খাবারের খরচে ইরানের পরেই রয়েছে বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারত। দেশটির নাগরিকেরা বছরে ৪৯৭ ডলার খরচ করে খাবারের পেছনে। দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ শ্রীলঙ্কার নাগরিকদের বার্ষিক মাথাপিছু খরচ হয় ৫৮৮ ডলার।
অন্য দেশগুলোতে বছরে মাথাপিছু খাবার ব্যয় এ রকম—ভিয়েতনামে ৬৫৫, ইরাকে ৭৯৫, ইন্দোনেশিয়ায় ৮৩৪, কলম্বিয়ায় ৮৭৪, ব্রাজিলে ৮৮২ ও দক্ষিণ আফ্রিকায় ৯১৭ ডলার।
ক্রয়ক্ষমতার সমতা (পিপিপি) অনুসারে বার্ষিক মাথাপিছু জিডিপিতে ১৭টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে কলম্বিয়া। দেশটিতে মাথাপিছু জিডিপি ১৮ হাজার ৭৩৩ ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিলের জনগণের মাথাপিছু জিডিপি ১৭ হাজার ৮৭৪ ডলার। ইরানের নাগরিকদের মাথাপিছু জিডিপি হচ্ছে ১৫ হাজার ৫০০ ডলার। তালিকার অন্য দেশগুলোতে মাথাপিছু জিডিপি হচ্ছে—দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৪ হাজার ৩২২, ইন্দোনেশিয়ায় ১৩ হাজার ৪৯৬, শ্রীলঙ্কায় ১৩ হাজার ১৭২, ভিয়েতনামে ১৩ হাজার ১০২ ও ভারতে ৮ হাজার ৫৬৯ ডলার।
সিপিডি বলেছে, বাংলাদেশে এখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোর চেয়ে বেশি দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে। গত সাড়ে পাঁচ বছরে দেশে চিনির দাম ১৫২ শতাংশ বেড়েছে। বর্তমানে এক কেজি চিনির দাম ১৩০ টাকা। অন্যদিকে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রতি কেজি চিনি ইইউতে ৩৯ টাকা ও যুক্তরাষ্ট্রে ৯৬ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এভাবে অন্য অনেক নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে বাংলাদেশে।
সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির গবেষণা পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, মূল্যস্ফীতি সহনশীল পর্যায়ে রাখতে না পারা সরকারের বড় ব্যর্থতা। নিত্যপণ্য এখন বিলাসী পণ্যে পরিণত হয়েছে।