এক দিনেই ৬ হাজার কোটি টাকা ধার করেছে সরকার
সরকারের খরচ চালানোর বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে ট্রেজারি বিল ও বন্ড। কারণ, রাজস্ব আদায় কাঙ্ক্ষিত হারে হচ্ছে না। তা ছাড়া সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিবর্তে এখন ভাঙানোই হচ্ছে বেশি। আবার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে ঋণ নেওয়াও বন্ধ করেছে সরকার। এ জন্য ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে টাকা ধার করছে সরকার, যা দিন দিন বাড়ছে। এতে ট্রেজারি বিলের সুদহার বাড়ছে।
আজ বৃহস্পতিবার সাড়ে ১১ শতাংশ পর্যন্ত সুদে টাকা ধার করেছে সরকার, যা বিদায়ী বছরের জুনে ৮ শতাংশের নিচে ছিল। ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি বিমা, করপোরেট প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিপর্যায়েও ট্রেজারি বিল ও বন্ড কেনা যায়।
জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকে আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত নিলামে ৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছিল সরকার। শেষ পর্যন্ত নিতে পেরেছে ৬ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা। এদিন বিভিন্ন মেয়াদি বিলের সুদহার ১১ দশমিক ১৫ শতাংশ থেকে ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ওঠে।
এখন ট্রেজারি বিলের ওপর নির্ভর করে ব্যাংকঋণের সুদহার নির্ধারিত হয়। ফলে নতুন বছরের শুরুতে ট্রেজারি বিলের গড় সুদহার আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যে পদ্ধতিতে ঋণের সুদহার নির্ধারিত হচ্ছে, সেটাকে বলা হয় স্মার্ট বা সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল। প্রতি মাসের শুরুতে ব্যাংকগুলোকে এই হার জানিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। নভেম্বর মাসে স্মার্ট রেট ছিল ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ, যা ডিসেম্বরে বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ। স্মার্ট সুদহারের সঙ্গে ব্যাংকগুলো ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ যোগ করতে পারে। ফলে সুদহার বেড়ে হয়েছে ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশ। সুদহার নির্ধারণে বেশির ভাগ ব্যাংক কিছুদিন অপেক্ষা করলেও এখন তা পরিবর্তন করছে। কারণ, ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ঋণের সুদহার বেড়ে প্রায় ১২ শতাংশ ছুঁই ছুঁই করছে।
বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের খরচ কত হবে, তার ওপরই নির্ভর করছে ঋণের সুদহার। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি যা, তাতে সরকার আরও বেশি টাকা তুলবে। ফলে সুদের হার আরও বাড়বে।
জানা গেছে, আজ বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত নিলামে ৯১ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহার ছিল ১১ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা গত বছরের জুনে ছিল ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এ ছাড়া ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহার হয়েছে ১১ দশমিক ২০ শতাংশ, যা গত জুনে ছিল ৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। এ ছাড়া ৩৬৪ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহার হয়েছে ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ, যা গত জুনে ছিল ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
গত ডিসেম্বর মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে চেয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য সম্প্রতি নীতি সুদহার বা রেপো রেট একবারে দশমিক ৭৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়ানো হয়েছে। ফলে নতুন রেপো রেট দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। ৫ অক্টোবর থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর রয়েছে। এর পর থেকে সব ধরনের সুদের হার বাড়ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে, দেশে গত নভেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। এই মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশে নেমেছে। তবে এই হার গত সাত মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি ছিল যথাক্রমে ৯ দশমিক ৬৩ ও ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এখন তাঁদের প্রধান লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। এ জন্য সুদহার আরও বাড়বে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের জমি ক্রয়, কর্মকর্তাদের গাড়ি ক্রয় ও তাঁদের বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি টাকা ছাপানোও এখন বন্ধ রয়েছে। তবে এসব উদ্যোগ কতটা কাজে দেবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।