হোম টেক্সটাইল রপ্তানিতে হোঁচট
তৈরি পোশাকের পর দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানি খাত হলো হোম টেক্সটাইল। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে এই খাতের রপ্তানি কমেছে ৮%।
করোনার প্রথম ঢেউয়ের পর পণ্য রপ্তানিতে চমক দেখাতে শুরু করে হোম টেক্সটাইল খাত। দুই বছরের ব্যবধানে এই খাতের রপ্তানি দেড় গুণ বেড়ে যায়। তাতে সর্বশেষ ২০২১–২২ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো বিলিয়ন ডলারের (১০০ কোটি) রপ্তানির মাইলফলকে পৌঁছায় হোম টেক্সটাইল। বদৌলতে তৈরি পোশাকের পর দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানির জায়গাটি পায় খাতটি। যদিও চলতি ২০২২–২৩ অর্থবছরের প্রথম চার মাসেই হোঁচট খায় হোম টেক্সটাইল। এই সময়ে রপ্তানি কমেছে ৮ শতাংশ।
হোম টেক্সটাইল খাতের রপ্তানিকারকেরা বলছেন, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের কারণে আগস্টের পর অনেক কারখানাই চাহিদা অনুযায়ী পণ্য রপ্তানি করতে পারেনি। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণেও মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় ক্রয়াদেশেও ভাটা পড়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, করোনার আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছর ৮৫ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি হয়। পরের বছর করোনা মহামারির কারণে তা কমে ৭৬ কোটি ডলারে নামে। এর পরের দুই বছরে অবশ্য রপ্তানি দ্রুতগতিতে বেড়েছে। এর মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি ৪৯ শতাংশ বেড়ে ১১৩ কোটি ডলারে ওঠে। ২০২১–২২ অর্থবছরে রপ্তানি আরও বেড়ে ১৬২ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয় ৪৩ শতাংশ।
হঠাৎ করে হোম টেক্সটাইলের রপ্তানিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানান, করোনার প্রকোপ কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর গত বছর প্রচুর ক্রয়াদেশ পান বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। তখন করোনার কারণে সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় চীন থেকেও প্রচুর ক্রয়াদেশ স্থানান্তরিত হয়। রাজনৈতিক অস্থিরতা, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট ও পাকিস্তানি রুপির টালমাটাল অবস্থার কারণে সেই দেশের ব্যবসাও পায় বাংলাদেশ।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের প্রথম চার মাস জুলাই-নভেম্বরে ৫১ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৫৬ কোটি ডলার। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রপ্তানি কমেছে ৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল্লাহ জোবায়ের প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমাদের মূল বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি ব্যাপক হারে বেড়েছে। সেখানকার ভোক্তারা নিত্যপণ্যের বাইরে অন্যান্য পণ্যের কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছেন। এর প্রভাব ক্রয়াদেশে পড়েছে। তাতে আগামী দিনে ২০-২৫ শতাংশ রপ্তানি কমে যেতে পারে।’
হোম টেক্সটাইল পণ্যের মধ্যে রয়েছে বিছানার চাদর, বালিশের কভার, দরজা-জানালার পর্দা, কুশন ও বিভিন্ন ধরনের টেরিটাওয়েল। বর্তমানে বিশ্বের ১২৫টি দেশে বাংলাদেশের হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। তবে আমেরিকা, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নই (ইইউ) হচ্ছে বড় বাজার। হোম টেক্সটাইল খাতে দেড় শতাধিক প্রতিষ্ঠান থাকলেও বর্তমানে পণ্য রপ্তানি করছে ৫০-৬০টি।
বাংলাদেশ টেরিটাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিটিএলএমইএ) চেয়ারম্যান এম শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট আমাদের পিছিয়ে দিয়েছে। আগস্টে আমাদের কারখানায় ১১ থেকে সাড়ে ১১ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকত না। গ্যাসের চাপও দিনের একটা বড় অংশে থাকত না। ফলে পণ্য উৎপাদন কমে যায়। অনেক কারখানাই সব ক্রয়াদেশের পণ্য উৎপাদন করে ক্রেতাদের পাঠাতে পারেনি।’
শাহাদাৎ হোসেন আরও বলেন, ‘ক্রয়াদেশ আবার আসতে শুরু করেছে। আশা করছি, আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চ থেকে হোম টেক্সটাইলের রপ্তানি ঘুরে দাঁড়াবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘হোম টেক্সটাইলে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে পাকিস্তান। তবে দেশটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত। আমাদের দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ, সুতার দাম সহনীয় থাকলে দু-তিন বছরেই হোম টেক্সটাইলের রপ্তানি ৩০০-৪০০ কোটি ডলারে তোলা দুরূহ কাজ হবে না।’