দেশের ৭০% পরিবার এখন স্মার্টফোন ব্যবহারকারী

স্মার্টফোনফাইল ছবি: রয়টার্স

বর্তমানে দেশের ৭০ শতাংশ বা দুই–তৃতীয়াংশের বেশি পরিবার অন্তত একটি স্মার্টফোন ব্যবহার করে। বিভিন্ন সুবিধার কারণে দেশে স্মার্টফোনের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। তবে স্মার্টফোন থাকলেও নানা কারণে অনেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না। আবার অনেকের কাছে ইন্টারনেট–সেবা পৌঁছায়নি। সব মিলিয়ে দেশের প্রায় অর্ধেক পরিবার এখনো সরাসরি ইন্টারনেট–সেবার বাইরে রয়েছে।

গত বুধবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই–সেপ্টেম্বর) আইসিটির প্রয়োগ ও ব্যবহারবিষয়ক জরিপ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বর্তমানে ৮-১০ হাজার টাকায় সাধারণ মানের স্মার্টফোন পাওয়া যায়। এ ধরনের ফোন দিয়ে ভিডিও কল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুক্ত থাকা কিংবা অনলাইনে পড়াশোনার মতো বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যায়। এ কারণে পরিবারনির্বিশেষে অন্তত একটি হলেও স্মার্টফোন রাখার চিন্তা থাকে। তবে নানা কারণে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে বাড়েনি।

দেশে প্রথমবারের মতো জেলাভিত্তিক ব্যক্তি ও খানা পর্যায়ে আইসিটি ব্যবহারের সুযোগ ও প্রয়োগ নিয়ে এ জরিপ করেছে বিবিএস। তারই অংশ হিসেবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিক জরিপের তথ্য প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। এতে দেশের ২ হাজার ৫৬৮টি এলাকার ৬১ হাজার ৬৩২টি পরিবার থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

বিবিএস জানিয়েছে, জরিপে শহর ও গ্রাম এলাকায় খানা পর্যায়ে পাঁচ বছর ও তার বেশি বয়সীদের থেকে তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা ও এ–সংক্রান্ত উপকরণ ব্যবহারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে একদিকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে খানার জনতাত্ত্বিক ও আর্থসামাজিক অবস্থা জানা যাবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ) ও এসডিজি ট্র্যাকারসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যাবে। জরিপে যেসব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়, তার মধ্যে রয়েছে—এলাকাভেদে খানা পর্যায়ে রেডিও, টেলিভিশন, কম্পিউটার, মুঠোফোন, স্মার্টফোন, ইন্টারনেট অ্যাকসেস এবং ব্যক্তি পর্যায়ে মুঠোফোন, কম্পিউটার, ইন্টারনেট ব্যবহার, মুঠোফোনের মালিকানা প্রভৃতি।

ইন্টারনেট–সেবার বাইরে অর্ধেক মানুষ

বিবিএসের জরিপের তথ্য অনুসারে, দেশের প্রায় অর্ধেকসংখ্যক পরিবারে (খানা) এখনো ইন্টারনেট–সেবা পৌঁছায়নি। শহর-গ্রামনির্বিশেষে খানা পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের হার এখন ৫০ দশমিক ৪ শতাংশ। খানা পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহারে শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষ পিছিয়ে রয়েছেন। শহরের ৬০ শতাংশ খানার মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, গ্রামে এ হার ৪৬ শতাংশ। অন্যদিকে ব্যক্তি পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের হার আরও কম। শহর-গ্রামনির্বিশেষে এ হার প্রায় ৪৬ শতাংশ। এর মধ্যে শহরের প্রায় ৭১ শতাংশ লোক তাদের প্রয়োজনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। গ্রামের এ হার মাত্র সাড়ে ৩৬ শতাংশ।

দেশে প্রতিবছর ইন্টারনেট ব্যবহারের হার বাড়ছে। সর্বশেষ প্রান্তিকে খানা পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের হার দাঁড়ায় ৫০ দশমিক ৪ শতাংশে, যা ২০২২ সালে ছিল ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ। অর্থাৎ দুই বছরের ব্যবধানে খানায় ইন্টারনেট ব্যবহারের হার বেড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ। একইভাবে দুই বছরের ব্যবধানে ব্যক্তি পর্যায়েও ইন্টারনেট ব্যবহারের হার সাড়ে ৬ শতাংশ বেড়েছে।

স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়ছে

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের ৯৮ শতাংশ পরিবারের কাছে কমপক্ষে একটি মুঠোফোন রয়েছে। গত বছর এই হার ছিল ৯৭ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থাৎ সার্বিকভাবে খানা পর্যায়ে মুঠোফোন ব্যবহারের হার প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে অনেক পরিবারে একটি মুঠোফোন একাধিক সদস্য ব্যবহার করেন, কিংবা পরিবারে মুঠোফোন থাকলেও কেউ কেউ তা ব্যবহারের সুযোগ পান না। এ কারণে ব্যক্তি পর্যায়ে মুঠোফোনের মালিকানা ও ব্যবহারের হার কিছুটা কম।

গত দুই বছরে পরিবার পর্যায়ে স্মার্টফোনের ব্যবহারও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সর্বশেষ প্রান্তিকের তথ্য অনুসারে, দেশের ৭০ শতাংশ পরিবারের কাছে স্মার্টফোন রয়েছে। ২০২২ সালে এই হার ছিল ৫২ শতাংশ। শহর-গ্রাম উভয় জায়গাতেই স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়ছে; তবে গ্রাম এলাকার তুলনায় শহরে স্মার্টফোন ব্যবহারের প্রবণতা বেশি।

তবে স্মার্টফোন ব্যবহারের এই পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ‘ডিজিটাল অগ্রগতি ও প্রবণতা প্রতিবেদন ২০২৩’-এ বলা হয়েছে, দেশে মুঠোফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে স্মার্টফোন ব্যবহারের হার প্রায় ৫২ শতাংশ। গত অক্টোবরে প্রকাশিত গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশনস অ্যাসোসিয়েশনের (জিএসএমএ) জরিপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে শহরের ৪১ শতাংশ এবং গ্রামের ২৬ শতাংশ মানুষ স্মার্টফোন
ব্যবহার করেন।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা ও বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম মাশরুর বলেন, সাধারণ মানুষ দুই বছর ধরে আর্থিক চাপের মধ্যে রয়েছেন। এ সময়ে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে স্মার্টফোনের দাম বেড়েছে; পরিবারের অন্যান্য ব্যয়ও বেড়েছে। এ জন্য অনেকের পক্ষেই স্মার্টফোন কেনা সম্ভব হচ্ছে না। এসব বিবেচনায় বর্তমানে ৭০ শতাংশ স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি বলে মনে হয়। আর স্মার্টফোন থাকলেও অনেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না। এর অন্যতম কারণ, ইন্টারনেট ডেটার খরচ বেশি।