সুশাসিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত

শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদফাইল ছবি: প্রথম আলো

শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ‘সুশাসিত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় উত্তরণ ঘটাতে পারি, এটাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত। সংস্কার বলি, নির্বাচন বলি, আসল লক্ষ্য হলো ভালো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত যাতে প্রস্তুত হয়।’

আজ বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের এ কথাগুলো বলেন। জনমিতির সুবিধা প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি এমন অভিমত দেন। তিনি বলেন, ‘কোভিড থেকে শুরু করে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান পর্যন্ত এক অস্থির সময়ের মধ্য দিয়ে গেছে আমাদের তরুণসমাজ। তাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করতে পারেনি। এতে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতি হয়েছে।’ এ জন্য তিনি সুশাসিত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় উত্তরণের কথা বলেন।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে একনেক সভা হয়।

দেশের সার্বিক অর্থনীতি সম্পর্কে শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) সংকুচিত হবে। কিন্তু সম্প্রসারিত হয়েছে। ওই সময়ে শিল্প খাত বিশৃঙ্খল অবস্থায় ছিল। রপ্তানিতে আবার গতি ফিরে এসেছে। রেমিট্যান্সের প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় অর্থনীতিতে কর্মকাণ্ড বাড়ছে।’

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, সবাই বলছে যে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। যেটুকু কমেছে, এটাকে কিন্তু কম বলে না। মূল্যস্ফীতি এখনো বাড়তিই আছে। এর ফলে দিনমজুরদের ওপর চাপ পড়ছে। মধ্যবিত্তরাও চাপে আছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চাঙা হচ্ছে। এতে অর্থের প্রবাহ বাড়ছে। অর্থনীতি কিছুটা চাঙা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

প্রসঙ্গ পাঠ্যপুস্তক

এক প্রশ্নের জবাবে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘২০১০ সাল থেকে কোনো বছরেই মার্চের আগে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বই যায়নি। কোনো কোনো বছর বই গেছে জুন-জুলাইয়ে। আমরা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে দেওয়ার চেষ্টা করছি।’ তিনি বলেন, এবার এখনই পাঠ্যপুস্তকের পিডিএফ কপি অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘৫০ বছর ধরে বাংলাদেশের ইতিহাস বিতর্কিত হয়েছে, সেটি নিয়ে গণমাধ্যমে কোনো সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয় ছাপা হয়নি। অথচ রংপুরের আবু সাঈদের মৃত্যুর তারিখ ভুল হওয়া নিয়ে ব্যাপক সংবাদ হয়েছে। আমরা বলেছি, ভুলভ্রান্তি হতে পারে। সেগুলো সংশোধন করা হবে।’

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘অভিভাবকশূন্য হয়ে যাওয়া ৫৫টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ দিতে হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে মৃদুভাবে দলীয় শিক্ষকদের নিয়োগ দিতে হয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দলীয় ফোরাম ছাড়া পাওয়া কঠিন। এই ৫৫টি বিশ্ববিদ্যালয় শান্ত করেছি।’

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমস্যা শুরু হয়েছে। আইন অনুসারে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিদের মনোনয়নের ভিত্তিতে ভিসি ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। যদি ট্রাস্টিদের বের করে দেওয়া হয়, ভিসি-কোষাধ্যক্ষরা চলে যান। তাহলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কিছু করার থাকে না। এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন সংকট চলছে। তিনি বলেন, ‘সবকিছু নিয়ে মাথা ঘামালে আমি তো পাগল হয়ে যাব।’