বাজারদর
গুঁড়া দুধের দাম আরও বাড়ল
২০২১ সালের শুরু থেকে গুঁড়া দুধের দাম বাড়ছে।
বিদেশি ব্র্যান্ডের এক কেজি দুধের দাম ৬০০ টাকার নিচে ছিল, যা এখন ৯০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে।
তরল দুধের লিটার ৯০-১০০ টাকা।
বাজারে গুঁড়া দুধের দাম আরেক দফা বাড়ল। খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, দুই সপ্তাহে দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০ থেকে ৬০ টাকা। নতুন করে মূল্যবৃদ্ধির ফলে বিদেশি ব্র্যান্ডের এক কেজি গুঁড়া দুধের দাম দাঁড়িয়েছে ৮২০ থেকে ৯০০ টাকা। আর দেশি ব্র্যান্ডের গুঁড়া দুধ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকার আশপাশে।
সব মিলিয়ে এখন বাজারে তরল ও গুঁড়া দুধের দাম চড়া। বাজারে পাস্তুরিত তরল দুধের লিটার এখন ৯০ থেকে ১০০ টাকা, যা ছয় মাস আগেও ৭৫ টাকার আশপাশে ছিল। দুধের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক পরিবার এখন তা কিনতে পারছে না। শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের প্রাণিজ আমিষের অন্যতম উৎস এই দুধ।
গত এক বছরে দুধের দাম যেভাবে বেড়েছে, তা আগে কখনো দেখা যায়নি। সাধারণত রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে দুধের চাহিদা ভালো থাকে। তবে এবার বাজারে সব জিনিসের দাম বাড়তি। মানুষ দুধ কিনতে পারে কম। ব্যাংকও অনেক যাচাই-বাছাই করে ঋণপত্র খুলছে।
বাংলাদেশের মানুষ মাথাপিছু দুধ গ্রহণে আগে থেকেই পিছিয়ে ছিল। এখন দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় দুধের প্রাপ্যতা আরও কমবে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। যেমন দুধ বিপণনকারী শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএলের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় খুচরায় দাম সমন্বয় করতে হয়েছে। এতে বেচাবিক্রিও কমেছে। দাম বেড়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যে অনেকেই গুঁড়া দুধ কেনা কমিয়েছেন।
দেশে তরল দুধ খামারিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে পাস্তুরিত অবস্থায় বাজারে বিক্রি করা হয়। গুঁড়া দুধের চাহিদার বড় অংশ মেটানো হয় আমদানির মাধ্যমে।
বিপণনকারীরা বলছেন, দুধের মূল্যবৃদ্ধির কারণ বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া এবং ডলারের মূল্যবৃদ্ধি। মূলত ২০২১ সালের শুরু থেকে গুঁড়া দুধের দাম বাড়ছে। তখন বিদেশি ব্র্যান্ডের এক কেজি দুধের দাম ৬০০ টাকার নিচে ছিল, যা এখন ৯০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে।
বাজারে এখন তরল ও গুঁড়া দুধের দাম চড়া। নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর নাগালের বাইরে চলে গেছে পুষ্টির উৎস দুধ।
গ্লোবাল ডেইরি ট্রেড নামের একটি ওয়েবসাইটের হিসাব বলছে, ২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর প্রতি টন দুধের গড় দাম ছিল ৯৭০ মার্কিন ডলার, যা গত ১ মার্চ ১ হাজার ৫৯৩ ডলারে ওঠে। এরপর অবশ্য দাম কমেছে। ১ নভেম্বর দাম নামে ১ হাজার ৬৯ ডলারে। যদিও বাংলাদেশের বাজারে দাম কমেনি। কারণ হিসেবে আমদানিকারকেরা বলছেন, ৮৬ টাকার ডলার এখন ১০৬ টাকা। এ কারণেই দাম কমছে না।
মৌলভীবাজারের দুধ আমদানিকারক রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গত এক বছরে দুধের দাম যেভাবে বেড়েছে, তা আগে কখনো দেখা যায়নি। সাধারণত রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে দুধের চাহিদা ভালো থাকে। তবে এবার বাজারে সব জিনিসের দাম বাড়তি। মানুষ দুধ কিনতে পারে কম। ব্যাংকও অনেক যাচাই-বাছাই করে ঋণপত্র খুলছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, এক বছরে ডানো ব্র্যান্ডের গুঁড়া দুধের দাম ৩১, ডিপ্লোমা (নিউজিল্যান্ড) ২৭, ফ্রেশ ৪৩ ও মার্কস ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। বাজার ঘুরে জানা গেছে, অন্যান্য কোম্পানির গুঁড়া দুধের দামও বেড়েছে।
সমবায়ভিত্তিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মিল্ক ভিটা তিন মাস আগে তাদের গুঁড়া দুধের দাম বাড়িয়েছে কেজিতে ১০০ টাকা। এখন মিল্ক ভিটার এক কেজি ননিযুক্ত গুঁড়া দুধের দাম ৭৫০ টাকা, আর ননিবিহীন গুঁড়া দুধের দাম ৬৫০ টাকা। যদিও বাজারের সাধারণ দোকানে এই দুধ পাওয়া কঠিন।
বাজারে এখন চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটাসহ বেশির ভাগ নিত্যপণ্য ও নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম চড়া। মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ব্যাপকভাবে। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ পুষ্টিকর খাবার কিনতে পারছে না। এতে পুষ্টি পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা আছে।
রাজধানীর মালিবাগ বাজারে গুঁড়া দুধ কিনতে আসা আলমাস আলী প্রথম আলোকে বলেন, ব্যয় কমানোর জন্য তিনি দুধ কেনা অনেকটা বাদ দিয়েছেন।