দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য কর্মসংস্থান বড় চ্যালেঞ্জ। যে হারে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, তাতে বিদ্যমান শ্রমিকদের কর্মসংস্থানেও বড় ধাক্কা আসতে পারে। তাই নতুন কর্মসংস্থান তৈরি ও বিদ্যমান শ্রমিকদের কীভাবে কাজে টিকিয়ে রাখা যাবে, তা নিয়ে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে।
গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এ অভিমত তুলে ধরেন। রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে গতকাল বৃহস্পতিবার আয়োজিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রানজিস্কা ওনসর্গ। তিনি সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত বাংলাদেশ উন্নয়ন হালনাগাদ প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে কর্মসংস্থানের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, বর্তমানে দেশে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেছে। তাতে নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে না। আবার যেসব কর্মসংস্থান হচ্ছে, সেগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাই শুধু কর্মসংস্থান তৈরি করলেই হবে না, মানসম্মত কর্মসংস্থান তৈরিতে বিশেষ নজর দিতে হবে। এ জন্য বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে আলোচক ছিলেন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের (এইউডব্লিউ) উপাচার্য রুবানা হক, বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ বার্নার্ড হেভেন ও সানেমের গবেষণা পরিচালক সায়মা হক বিদিশা।
মূল প্রবন্ধে ফ্রানজিস্কা ওনসর্গ বলেন, উদীয়মান বাজার এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোর তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা ভালো। তবে তা অনেকটাই ভারতের শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি এবং সরকারি খাতের ওপর অতিনির্ভরতার কারণে। তিনি আরও বলেন, কৃষকদের কৃষি খাত থেকে অকৃষি খাতে অভিবাসন ঘটছে। কিন্তু অকৃষি খাতে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। শুধু ন্যূনতম কর্মসংস্থান পর্যাপ্ত নয়; ক্রমবর্ধমান শ্রমশক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করার মতো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।
প্যানেল আলোচকের বক্তব্যে রুবানা হক বলেন, ‘কেন দেশের অর্থনীতিতে এত দিন ধরে পোশাক খাত নির্ভর, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। এই খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে, আর কত দিন শ্রমিকেরা কাজে টিকবে, সেটাও বড় প্রশ্ন। তাই ভবিষ্যতে টিকে থাকার জন্য এখনই শ্রমিকদের প্রস্তুত হতে হবে। এখনকার ডিজিটাল দুনিয়ায় কাজ করতে কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন নেই। ঘরে বসে অনলাইনে কাজের সুযোগ মিলছে। আমাদের এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।’
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ বার্নার্ড হ্যাভেন বলেন, বাংলাদেশের বহু মানুষ বেকার, চাকরি পাচ্ছেন না। তাঁদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। শুধু কর্মসংস্থান তৈরি করলেই হবে না, মানসম্মত কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে চাকরিদাতা মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান ও চাকরি দুটোই দরকার। বাংলাদেশে বিনিয়োগ কমে গেছে। অথচ কর্মসংস্থানের সঙ্গে বিনিয়োগ ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
সানেমের গবেষণা পরিচালক সায়মা হক বলেন, দুই বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে ভুগছে দেশ। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান পড়েছে, মুদ্রা বিনিময় হারে অস্থিতিশীলতা চলছে। বৈষম্য প্রকট হয়েছে। এ অবস্থায় শুধু কর্মসংস্থান সৃষ্টি করলেই হবে না, কর্মসংস্থানের মানও বাড়াতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে সেলিম রায়হান বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমাদের জন্য সবচেয়ে জরুরি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা। অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা না এলে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে না। আর সরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়ানো জরুরি।’