বেনজীর কি ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করতে পারবেন

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদছবি: বেনজীরের ফেসবুক থেকে নেওয়া

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেছেন, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের সম্পদের বিষয়টি এখন ফৌজদারি তথা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ কর দিলে তাঁর সম্পদ বৈধ হবে কি না—সেটা এখন আইনি প্রশ্নে পরিণত হয়েছে।

আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেট–উত্তর সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন এনবিআর চেয়ারম্যান।

জাতীয় সংসদে গতকাল ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। রীতি অনুযায়ী বাজেট ঘোষণার পরদিন এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এতে অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১০ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন।

বাজেট প্রস্তাবে আগামী জুলাই মাস থেকে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে বিনা প্রশ্নে এক বছরের জন্য কালোটাকা সাদা বা বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক। জানতে চান—বেনজীরের মতো ব্যক্তিরা সম্পদে ১৫ শতাংশ কর দিলে তাঁদের আয় বা সম্পদ বৈধ হয়ে যাবে কি না?

জবাবে আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘(বেনজীরের সম্পদের) বিষয়টি তো ফৌজদারি তথা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে কর দিলে সম্পদ কীভাবে বৈধ হবে—সেটা তো আইনি প্রশ্ন। তবে এত ঢালাওভাবে আমরা এটাকে দেখতে চাই না। বিভিন্ন কারণে মানুষের অপ্রদর্শিত কিছু সম্পদ থাকতে পারে। এ ধরনের অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধভাবে দেখানোর সুযোগ দিতে আমরা এমন প্রস্তাব দিয়েছি।’

সংবাদ সম্মেলনে আরেক সাংবাদিক জানতে চান, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদসহ সরকার ও প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে অনেক ব্যক্তি রয়েছেন, যাঁদের সম্পদের উৎস নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাঁরা সরকারের গোয়েন্দা চোখ ফাঁকি দিয়ে কীভাবে এমন পর্যায়ে গেলেন? এখন বেনজীরের মতো ব্যক্তিরা সম্পদে ১৫ শতাংশ কর দিলে তাঁদের সম্পদ বৈধ হবে কি না।

এর উত্তরে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান জানান, বেনজীর আহমেদের বিষয়ে দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে যে অধিকার তাঁর (বেনজীর) পাওয়ার কথা, তাঁকে সেটা দেওয়া হবে।

বেনজীর আহমেদের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে জানিয়ে মসিউর রহমান বলেন, ‘আপনারা কাগজে নিশ্চয়ই দেখেছেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ বিষয়ে তথ্য অনুসন্ধান করছে। অনুসন্ধান শেষে প্রচলিত আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে অনুসন্ধান প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।’ এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে হাজির হতে বেনজীর আহমেদ সময় চেয়েছেন। তাঁকে সময় দেওয়া হয়েছে।

মসিউর রহমান বলেন, ‘এটা বলা হয়নি যে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না; আবার এটাও আগাম বলা হয়নি যে তাঁকে আমরা জেলে নেব, ফাঁসি দেব। নাগরিক হিসেবে যে অধিকার তার পাওয়ার কথা, তাঁকে সেটা দেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, বেনজীর ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের নামে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, ঢাকাসহ কয়েকটি জেলায় ৬২১ বিঘা জমি, ঢাকার গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট, ৩৩টি ব্যাংক হিসাব, ১৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ৩টি বিও হিসাব (শেয়ার ব্যবসা করার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স হিসাব) এবং ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রের সন্ধান পেয়েছে দুদক। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এসব সম্পদ জব্দ করার আদেশ দেন আদালত।

আদালতের ওই আদেশ আসার আগেই গত ৪ মে বেনজীর আহমেদ দেশ ছেড়েছেন বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওই সূত্র জানিয়েছে।