ব্যাংকঋণের সুদের হার বৃদ্ধি নয়, বরং সিন্ডিকেট সামলাতে পারলেই দেশে মূল্যস্ফীতি কমবে বলে মনে করেন সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘সুদের হার ৯ থেকে বেড়ে এখন ১৫ শতাংশ হয়েছে। অনেকে মনে করেন, সুদের হার বাড়ালেই মূল্যস্ফীতি কমবে। এটা ঠিক নয়। কারণ, আমাদের দেশে ঋণ নেন প্রধানত ব্যবসায়ীরা। আর যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ বেশি ঋণ নেয় বাড়ি-গাড়ি কেনার জন্য। সুতরাং তাদের মতো উচ্চ সুদের নীতি এখানে খাটবে না। এখানে সিন্ডিকেট সামলাতে পারলেই মূল্যস্ফীতি কমবে।’
আজ বুধবার ঢাকার একটি হোটেলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির স্বাধীন পর্যালোচনা: ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের বিশ্লেষণ’ শীর্ষক এক সংলাপে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এসব কথা বলেন। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর সঞ্চালনায় সংলাপে মূল পর্যালোচনা তুলে ধরেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
সংলাপে আরও বক্তব্য দেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান ও রাশেদা কে চৌধূরী, সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, শ্রমিকনেতা রাজেকুজ্জামান রতন, বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ প্রমুখ।
বর্তমান সময়ের মতো অর্থনীতিতে এমন দুর্বলতর অবস্থা নিজের পুরো রাজনৈতিক জীবনে আর কখনো দেখেননি বলে উল্লেখ করেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, চুরি-ডাকাতি-খুন করে আয় করা টাকা অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে না। তাঁর প্রশ্ন, ‘তারা কি চুরির টাকা দেশের উন্নয়নে আনবে? আমি যদি ট্যাক্স না দিয়ে পরের বছর ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ পাই, তাহলে আমি কেন টেক্স দেব। এ বোকামি কেন করব?’
আনিসুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা শুনছি, কানাডা, মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশে কারও কারও বাড়ি আছে, সেই তালিকা করা হয়। তাহলে তাদের চিহ্নিত করে ধরা হচ্ছে না কেন?’
শুধু নিত্যপণ্য নয়, বিদেশে লোক পাঠানোর ক্ষেত্রেও সিন্ডিকেট রয়েছে উল্লেখ করে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন হয়েছে। ১৭ হাজার কর্মী মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি। দেখা যাচ্ছে, সিন্ডিকেটের ভেতরে আরেক সিন্ডিকেট আছে।
বিরোধীদলীয় উপনেতা খেলাপি ঋণ নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে ১ লাখ ৮৪ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। আর সব হিসাব করলে সেটি সাড়ে চার লাখ কোটি টাকা হবে। অথচ এ টাকা উদ্ধারে তেমন কিছুই করা হচ্ছে না।
অনুষ্ঠানে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, ‘আমরা যদি ফিরে তাকাই ২০০৯ সালে, তাহলে দেখতে পাব যে আমরা কোথায় ছিলাম। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল ছিল বিএনপি–জামায়াতের দুঃশাসন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আমরা দেখলাম শিল্প উৎপাদনের জন্য, শিক্ষার জন্য, স্বাস্থ্যসেবার জন্য, বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তখন প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ছিল না, যোগাযোগব্যবস্থাও সে অর্থে ছিল না। বাংলাদেশের তখন বার্ষিক বাজেট ছিল মাত্র ৬২ হাজার কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে।’
কাজী নাবিল আহমেদ আরও বলেন, ‘সিপিডির সংলাপে যে উপস্থাপনা দেওয়া হয়েছে এবং সুধীজনেরা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাঁদের বলব, তাঁরা যেন গ্লাসটি অর্ধেক খালি না দেখে অর্ধেক ভর্তি আছে সেটাও দেখার চেষ্টা করেন।’