মূল লেখা
বাজেটে বাস্তবতা কম, স্বস্তির চেয়ে চাপ বেশি
ব্যয় ৭,৬১,৭৮৫ কোটি টাকা
আয় ৫,০০,০০০ কোটি টাকা
ঘাটতি ২,৬১,৭৮৫ কোটি টাকা
একে দুঃসময়ের বাজেটই বলা যায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঠিক যেমনটি লিখেছিলেন, ‘যদিও সঙ্গী নাহি অনন্ত অম্বরে,/ যদিও ক্লান্তি আসিছে অঙ্গে নামিয়া,/ মহা আশঙ্কা জপিছে মৌন মন্তরে, /দিক্-দিগন্ত অবগুণ্ঠনে ঢাকা...।’ একদিকে অর্থনীতি নানা সংকটে। সরকারের আয় কম, ব্যয়ের চাপ বেশি। জ্বালানি ও ডলার–সংকটে ব্যবসায়ীরা বিপাকে, মূল্যস্ফীতির চাপে দিশাহারা সীমিত আয়ের মানুষ। ভূরাজনীতিও বিরূপ।
অথচ সামনেই নির্বাচন। বর্তমান মেয়াদেরও শেষ বাজেট। এখনই তো চমক দেখানোর কথা। অথচ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য যে বাজেটটি দিলেন, তাতে চমক নেই, সমস্যার স্বীকৃতি আছে, কিন্তু সুসময়ে ফেরার ব্যবস্থা নেই। আয়-ব্যয়ের প্রস্তাবিত বাজেটে বড় ব্যয়ের পরিকল্পনা আছে, কিন্তু আয় বাড়ানোর বড় ব্যবস্থা নেই। আয়-ব্যয়ের প্রস্তাবে কল্পনা আছে, অর্জনের বাস্তবতা কম। ফলে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে বাজেট ঘাটতি মেটানোর যে আয়োজন অর্থমন্ত্রী করেছেন, তাতে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়াবে বলেই আশঙ্কা আছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী অতীত চর্চাই বেশি করেছেন, ভবিষ্যতে স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরির গল্প শুনিয়েছেন, ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে নানা ধরনের কর অব্যাহতি কমানোর ঘোষণাও দিয়েছেন, কিন্তু বিদ্যমান সংকট উত্তরণের পথ দেখিয়েছেন কম।
তারপরও অর্থমন্ত্রী ধন্যবাদ পাবেন। সাধারণত নির্বাচনী বছরের বাজেটে জনতুষ্ট অনেক কর্মসূচি নেওয়া হয়। কম গুরুত্বপূর্ণ বা প্রয়োজনীয় নানা ধরনের প্রকল্পে ব্যয় বরাদ্দ থাকে, নানাভাবে মানুষের হাতে টাকা দেওয়ার পথ খুঁজে বের করা হয়, ব্যবসায়ীদের খুশি রাখার দৃশ্যমান প্রস্তাব রাখা হয়, দেওয়া হয় নানা করছাড়। কিন্তু এবারের বাজেটে এ রকম কিছু কম। বরং এই বাজেটে চাপ বাড়বে কমবেশি সবার ওপরে। আমদানি পণ্যে ব্যাপকভাবে সম্পূরক শুল্ক আরোপ, দুই হাজার টাকা ন্যূনতম কর দেওয়ার বিধান, জমি-ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ব্যয়ের অসহনীয় বৃদ্ধি, দ্বিতীয় গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে কর আরোপ—এর কোনোটিই জনপ্রিয় প্রস্তাব নয়। সুতরাং এই বাজেটকে অন্তত ভোটের বাজেট বলা যাবে না। আবার অর্থনীতির চরম এই দুঃসময় কাটিয়ে ওঠার মতো একটি বাজেট দিয়েছেন, তা–ও বলা যাচ্ছে না।
সব মিলিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত বাজেটে করের আওতা বাড়ানোর নানা উদ্যোগের কথা যেমন আছে, আয়করে কিছু স্বস্তির ঘোষণাও আছে। তবে সাধারণ মানুষের ওপরে চাপ বাড়ানোর প্রস্তাবও আছে অনেক। আবার স্থানীয় শিল্পকে সংরক্ষণ বাড়িয়েছেন অর্থমন্ত্রী, একই সঙ্গে অনেক আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ব্যবসায়ীদের বিপাকেও ফেলেছেন। প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী অতীত চর্চাই বেশি করেছেন, ভবিষ্যতে স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরির গল্প শুনিয়েছেন, ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে নানা ধরনের কর অব্যাহতি কমানোর ঘোষণাও দিয়েছেন, কিন্তু বিদ্যমান সংকট উত্তরণের পথ দেখিয়েছেন কম।
শেক্সপিয়ারের ম্যাকবেথ যেমন বলেছিলেন, ‘একমাত্র দয়ালু হওয়ার জন্যই আমাকে অবশ্যই নিষ্ঠুর হতে হবে।’ এই বাজেটে দয়া দেখা গেল আসলে কমই।
করের বোঝা কতটা চাপছে
অর্থমন্ত্রী হয়েই ২০১৯ সালে দেওয়া প্রথম বাজেটে আ হ ম মুস্তফা কামাল করদাতাদের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে দেবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি সে সময় ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুই-এর অর্থমন্ত্রীর একটি উক্তি ব্যবহার করে বলেছিলেন, ‘রাজহাঁস থেকে পালক ওঠাও যতটা সম্ভব ততটা, তবে সাবধান রাজহাঁসটি যেন কোনোভাবেই ব্যথা না পায়।’ বর্তমান মেয়াদে অর্থমন্ত্রীর শেষ বাজেটে অনেকে ব্যথা ঠিকই পাবেন। মূল্যস্ফীতির বিবেচনায় অর্থমন্ত্রী ব্যক্তিশ্রেণির ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা ৫০ হাজার টাকা বাড়িয়েছেন। অর্থাৎ ন্যূনতম করের সীমা হবে সাড়ে তিন লাখ টাকা। আবার সরকারি সেবা নিতে হলে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা কর দিতেই হবে, করযোগ্য আয় না থাকলেও। এর কারণ হিসেবে অবশ্য অর্থমন্ত্রী বলেছেন, রাষ্ট্রের একজন নাগরিকের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্র কর্তৃক প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধার বিপরীতে সরকারকে ন্যূনতম কর দিয়ে সরকারের জনসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। এ দুই প্রস্তাব পরস্পরবিরোধী এবং প্রচলিত আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন।
শেক্সপিয়ারের ম্যাকবেথ যেমন বলেছিলেন, ‘একমাত্র দয়ালু হওয়ার জন্যই আমাকে অবশ্যই নিষ্ঠুর হতে হবে।’ এই বাজেটে দয়া দেখা গেল আসলে কমই। বলে রাখা ভালো, নানা ধরনের গৃহস্থালি সামগ্রী, আমদানি করা বাদাম, খেজুর, এলপিজি সিলিন্ডারের গ্যাস, এমনকি টিস্যু বা ন্যাপকিনের মতো পণ্যেরও দাম এবার বাড়বে।
অদৃশ্য আইএমএফ
জর্জ অরওয়েলের উপন্যাসে ‘বিগ ব্রাদার’–এর কাজ ছিল সর্বদা নজরে রাখা। কথাটা ছিল ‘বিগ ব্রাদার ওয়াচিং ইউ’। অর্থমন্ত্রীর জন্য এবারের বাজেটে ‘বিগ ব্রাদার’ হচ্ছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটি বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে। এরই মধ্যে প্রথম কিস্তি দেওয়া হয়েছে। পরের কিস্তি দেওয়া হবে চলতি বছরের শেষের দিকে। পরের কিস্তি পাওয়া নির্ভর করছে শর্ত পূরণের ওপরে। আর সেই শর্ত পূরণের প্রতিফলন ছিল প্রস্তাবিত বাজেটে। ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে জিডিপির হিসাব প্রকাশ, সেপ্টেম্বরের মধ্যে ফর্মুলাভিত্তিক জ্বালানির মূল্য নির্ধারণের পদ্ধতি চালু, ভর্তুকি হ্রাস, সুদের হার ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা, কর অব্যাহতি ক্রমান্বয়ে কমানো—এসবই আইএমএফের শর্তপূরণ।
অর্থমন্ত্রীর জন্য এবারের বাজেটে ‘বিগ ব্রাদার’ হচ্ছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় তিনবার আইএমএফের নাম উচ্চরণ করেছেন। দুবার বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ও মূল্যস্ফীতি বিষয়ে আইএমএফের প্রাক্কলন নিয়ে। আর আরেকবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাম্প্রতিক বৈঠক প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আইএমএফের কথা বলেছেন। অথচ তাদের সঙ্গে ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঋণচুক্তির মধ্যে বাংলাদেশ ঢুকেছে চলতি অর্থবছরেই। কিন্তু এ কথা উল্লেখই করেননি অর্থমন্ত্রী। বাজেটে অর্থমন্ত্রীর ‘বিগ ব্রাদার’ অদৃশ্যই থেকে গেলেন।
কত বড় বাজেট
নতুন অর্থবছরের জন্য অর্থমন্ত্রী ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছেন। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। একই সময়ে আয়ের প্রাক্কলন হচ্ছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এতে সামগ্রিক ঘাটতি হবে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ঘাটতির হার ৫ দশমিক ২ শতাংশ।
বাজেট ঘাটতি পূরণে অর্থমন্ত্রী বৈদেশিক উৎস থেকে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা ঋণ পাবেন বলে আশা করছেন। বাকি ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নিতে হবে সরকারকে। এর মধ্যে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে নেওয়া হবে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র বিক্রির মতো ব্যাংকবহির্ভূত ব্যবস্থা থেকে নেওয়া হবে বাকি ২৩ হাজার কোটি টাকা।
গতকালের বাজেট ছিল অর্থমন্ত্রীর জন্য পঞ্চম বাজেট। তবে এবারের বাজেট উপস্থাপনায় তাঁর ভূমিকা ছিল অনেকটাই সূত্রধরের মতো। শুরুতে বাজেট পেশের অনুমতি নিয়েছেন, তারপর তা উপস্থাপনার ভার ছেড়ে দিয়েছেন যন্ত্রের ওপর, যাকে বলা হয়েছে ‘অডিও–ভিজ্যুয়াল পদ্ধতি।’ পুরো বাজেট বক্তৃতা অন্যের কণ্ঠে রেকর্ড করে তা উপস্থাপন করা হয়।
অর্থমন্ত্রী একই সঙ্গে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটও সংশোধন করেছেন। মূল বাজেট ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার। কিন্তু এ থেকে ১৭ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। তবে রাজস্ব আয় কমানো হয়নি। অর্থমন্ত্রীর প্রত্যাশা, এই আয় ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৬৩ কোটি টাকাই থাকবে। ফলে ঘাটতিও কমে হবে জিডিপির ৫ দশমিক ১ শতাংশ।
কতটা কল্পনা, কতটা বাস্তব
অর্থমন্ত্রী নতুন যে বাজেট দিয়েছেন, তা সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ১৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি। আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্য দিয়েছেন, তা ১৬ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি। অথচ গত এপ্রিল পর্যন্ত চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে মোট লক্ষ্যের মাত্র ৬১ শতাংশ। আর বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, গত মার্চ পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি মাত্র ৮ দশমিক ৯ শতাংশ। বিদ্যমান ডলার–সংকট এবং আমদানিতে নানা ধরনের বিধিনিষেধ থাকায় এই রাজস্ব আদায় নতুন অর্থবছরে কী করে বাড়বে, তা পরিষ্কার নয়।
আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির হাল তো আরও খারাপ, বাস্তবায়নের হার গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন—মাত্র ৫০ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আবার নতুন অর্থবছরে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ করার যে লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে, তা প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি। সুতরাং সুদ পরিশোধের চাপও বাড়বে।
বাজেটের সঙ্গে দেওয়া অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে জিডিপির তুলনায় বেসরকারি বিনিয়োগের হার ২৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরে ছিল ২৪ দশমিক ৫২ শতাংশ। ডলার–সংকট, আমদানি হ্রাস, উৎপাদন কম ইত্যাদি কারণে বেসরকারি বিনিয়োগ কমে গেছে। তারপরও অর্থমন্ত্রী বলেছেন, নতুন অর্থবছরে বেসরকারি বিনিয়োগ বেড়ে ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ হবে। এ রকম অলীক প্রত্যাশা অবশ্য আরও আছে। যেমন মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা, যা এখন ৯ শতাংশের বেশি। একই সময়ে অর্থমন্ত্রীর আরেকটি প্রত্যাশা হচ্ছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ৭ শতাংশ।
বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ
জিডিপির তুলনায় কর আহরণের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে প্রায় সর্বনিম্নে। নিম্ন কর-জিডিপি অনুপাতের বিপদ বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের সময় অর্থমন্ত্রী বেশ ভালোভাবেই উপলব্ধি করেছেন। কারণ, চাইলেও অনেক ক্ষেত্রেই তিনি ব্যয় করতে পারেননি। ফলে অর্থ ধার করতে হয়েছে। ফলে বাজেটের প্রায় ২০ শতাংশ ব্যবহার করতে হচ্ছে সুদ পরিশোধে। এ ছাড়া বেশি অর্থ ব্যয় হয় ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে—সাড়ে ২০ শতাংশ। ব্যয়ের আরেকটি বড় খাত হচ্ছে সরকারি খাতে বেতন ও ভাতা—এর হার প্রায় ১৭ শতাংশ।
এ অবস্থায় অর্থমন্ত্রীকে বাজেটে বারবার কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর কথা বলতে হয়েছে। অন্য সময় হলে হয়তো অর্থমন্ত্রী নির্বাচনী বছরে এ বিষয়ে কিছুটা ছাড় দিতেন। কিন্তু আইএমএফের কারণে তা–ও পারেননি। সুতরাং রাজস্ব বাড়িয়ে বাজেট বাস্তবায়ন বড় চ্যালেঞ্জ হয়েই থাকবে। তবে অর্থমন্ত্রীর জন্য নতুন অর্থবছরের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জ হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান একবার বলেছিলেন, ‘মূল্যস্ফীতি হচ্ছে ছিনতাইকারীর মতো হিংস্র, সশস্ত্র ডাকাতের মতো ভয়ংকর এবং খুনির মতোই প্রাণঘাতী।’ সুতরাং এ থেকে রক্ষা পেতেই হবে।
যেভাবে বাজেট উপস্থাপন
গতকালের বাজেট ছিল অর্থমন্ত্রীর জন্য পঞ্চম বাজেট। তবে এবারের বাজেট উপস্থাপনায় তাঁর ভূমিকা ছিল অনেকটাই সূত্রধরের মতো। শুরুতে বাজেট পেশের অনুমতি নিয়েছেন, তারপর তা উপস্থাপনার ভার ছেড়ে দিয়েছেন যন্ত্রের ওপর, যাকে বলা হয়েছে ‘অডিও–ভিজ্যুয়াল পদ্ধতি।’ পুরো বাজেট বক্তৃতা অন্যের কণ্ঠে রেকর্ড করে তা উপস্থাপন করা হয়।
এর আগে গতকাল দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়। বেলা আড়াইটার দিকে সংসদ ভবনে যান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সংসদ ভবনে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে বেলা পৌনে তিনটার দিকে প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে পেশ করার সম্মতি দেন রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতি হিসেবে জাতীয় সংসদে এটাই তাঁর প্রথম বাজেট অধিবেশনে যোগদান।
বেলা তিনটার দিকে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে অর্থমন্ত্রীর বাজেট উপস্থাপনা শেষ হয়। এরপর তিনি অর্থ বিল–২০২৩ জাতীয় সংসদে তোলেন।
সম্পূরক বাজেট পাসের পর অধিবেশনজুড়ে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সংসদে আলোচনা করবেন সরকারি দল ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। ২৫ জুন অর্থ বিল ও ২৬ জুন প্রস্তাবিত বাজেট পাস করা হবে।