এবার যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্বঘাটতি নিয়ে সতর্কবার্তা দিল আইএমএফ
উন্নয়নশীল দেশের রাজস্বঘাটতি নিয়ে প্রায়ই আলোচনা-সমালোচনা হয়, তবে এবার খোদ যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্বঘাটতি নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তারা বলেছে, এখনই রাজস্বঘাটতির রাশ টানা না গেলে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সংকট আরও ঘনীভূত হবে।
এ ছাড়া দেশের জাতীয় ঋণ নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করে যাওয়া, উচ্চ নীতি সুদহার ও মূল্যস্ফীতির কারণেও চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে মার্কিন অর্থনীতি। এমন পরিস্থিতিতে ঋণ নিয়ে ব্যয় মেটানোর প্রবণতা বাড়ছে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
মার্কিন অর্থনীতি এখন খুব একটা খারাপ অবস্থায় নেই। উচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় নীতি সুদহার বাড়ানো হলেও দেশটির প্রবৃদ্ধির গতি এখনো সচল। সেই সঙ্গে বেকারত্বের হারও অনেক কম। আইএমএফ মনে করে, শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সংগতি রেখে ব্যয় কমানো ও রাজস্ব বাড়ানোর সুযোগ আছে। আয় বাড়িয়ে ও অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে ঋণের এই বোঝা কমানো সম্ভব।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, আর্থিক খাত সংস্কারে সতর্ক পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের পাশাপাশি কঠিন নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। সম্প্রতি আইএমএফের প্রথম উপব্যবস্থাপনা পরিচালক গীতা গোপীনাথ ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, সময় এসেছে, উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোতে এ ধরনের কঠোর পরিকল্পনায় মন দিতে হবে। ঋণের বোঝা কীভাবে প্রাক্–মহামারি পর্যায়ে ফিরিয়ে নেওয়া যায়, সে পরিকল্পনাও করতে হবে।
গীতা গোপীনাথ আরও বলেন, ‘মার্কিন অর্থনীতি শক্তিশালী অবস্থানে আছে; এই বাস্তবতায় দেশটির রাজস্বঘাটতি কমানোর যথেষ্ট সুযোগ আছে বলেই আমরা দেখতে পাচ্ছি’।
মার্কিন অর্থনীতি নিয়ে আইএমএফের বার্ষিক পর্যালোচনা চলতি মাসের শেষের দিকে প্রকাশিত হবে। তার আগেই দেশটি নিয়ে এই সতর্কবার্তা দিলেন গীতা গোপীনাথ। তিনি আরও বলেন, উন্নত অর্থনীতিগুলোর পক্ষে কিছু বিষয়ে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। বয়স্ক জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে পেনশনের ব্যবস্থা ও চিকিৎসা ব্যয়ে মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন, বিষয়টি খুবই জটিল আকার ধারণ করতে চলেছে।
গত এপ্রিলে প্রকাশিত আইএমএফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্বঘাটতি ৭ দশমিক ১ শতাংশের রেকর্ড গড়বে। যদিও উন্নত দেশগুলোর রাজস্বঘাটতির গড় হার ২ শতাংশ। এর অর্থ হলো, যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্বঘাটতি উন্নত দেশগুলোর গড় হারের তিন গুণ। আইএমএফের সতর্কবার্তা হলো, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন দুই দেশই বড় ধরনের রাজস্বঘাটতি আছে; এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতির বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়ার সম্ভাবনা আছে।
আইএমএফ বলেছে, ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান—উভয় সরকারই গত কয়েক দশকে যথাযথ রাজস্ব নীতি করতে পারেনি। সে কারণে অনেক দিন ধরে জমে থাকা আর্থিক সমস্যা এখন ঘনীভূত রূপ নিচ্ছে।
মার্কিন সরকারের আর্থিক বিষয় তদারকি করে কংগ্রেশনাল বাজেট অফিস। সংস্থাটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, কংগ্রেসের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার চলমান ধারা বজায় থাকলে ২০২৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ নতুন উচ্চতায় উঠবে। এ ছাড়া রাজস্বঘাটতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ঘাটতিকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
২০২৫ সাল মার্কিন আর্থিক খাতের জন্য সংকটজনক হতে পারে। ডোনাল্ড ট্রাম্প করহার কমানোর পক্ষপাতী। পুনর্নির্বাচিত হলে আবারও কর কমানোর পথে হাঁটতে পারেন তিনি। এদিকে জো বাইডেন সরকার ব্যয়ের রাশ টানতে ব্যর্থ হওয়ায় রাজস্বঘাটতি রেকর্ড স্তরে উঠে গেছে। এই পরিস্থিতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হয়ে করহার কমালে বিপদেই পড়বে যুক্তরাষ্ট্র।
বাইডেন প্রশাসনের ব্যয় বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। নিজেদের ভূরাজনৈতিক আধিপত্য বজায় রাখার যে আর্থিক ব্যয়, তা মেটাতে গলদঘর্ম হয়ে যাচ্ছে বাইডেন প্রশাসন। সবশেষ এপ্রিলে ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য ৬ হাজার ১০০ কোটি ডলারের সহায়তা প্যাকেজ পাস করে দেশটির কংগ্রেস। সেই সঙ্গে ইসরায়েলের জন্য ২ হাজার ৬৪০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা, গাজার জন্য ৯১০ কোটি ডলারের মানবিক সহায়তা ও ‘কমিউনিস্ট চীনকে জবাব দিতে’ তাইওয়ানসহ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সহযোগীদের জন্য ৮১০ কোটি ডলারের সহায়তা প্যাকেজ পাস হয়েছে মার্কিন কংগ্রেসে।
যুদ্ধ বাবদ ব্যয় অব্যাহত রাখলেও স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করেছে জো বাইডেন প্রশাসন। সেদিকে ইঙ্গিত করে গীতা গোপীনাথ বলেন, ধনী আমেরিকানদের ওপর আরও করারোপ করতে হোয়াইট হাউসের যে প্রচেষ্টা, আইএমএফ তা সমর্থন করে।
গীতা গোপীনাথ আরও বলেন, কর সংগ্রহ ব্যবস্থাকে আরও প্রগতিশীল ভূমিকায় যেতে হবে। তাঁর পরামর্শ, বিভিন্ন ধরনের সম্পদ থেকে অর্জিত আয় ও উত্তরাধিকার কর আরও কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে।