বৈশ্বিক তালিকায় তিন ধাপ এগিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর
কনটেইনার পরিবহনের বৈশ্বিক তালিকায় তিন ধাপ এগিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। চট্টগ্রাম বন্দর এখন বিশ্বের ৬৪তম ব্যস্ততম বন্দর। এক বছর আগের তালিকায় ৬৭তম অবস্থানে ছিল এই বন্দর।
২০২১ সালে বন্দরগুলোর কনটেইনার পরিবহনের সংখ্যা হিসাব করে সেরা ১০০ বন্দরের এই তালিকা প্রকাশ করেছে লন্ডনভিত্তিক শিপিংবিষয়ক বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো সংবাদমাধ্যম লয়েডস লিস্ট। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তালিকাটি প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
২০১৯ সালে কনটেইনার পরিবহনের সংখ্যা হিসাব করে লয়েডস লিস্ট ২০২০ সালে যে বৈশ্বিক তালিকা প্রকাশ করেছিল, সেখানে চট্টগ্রাম বন্দর সবচেয়ে ভালো অবস্থানে ছিল। ওই তালিকায় বন্দরের অবস্থান ছিল ৫৮তম। এরপর করোনার সময়ে কনটেইনার পরিবহনে হোঁচট খায় এ বন্দর। এক লাফে ৯ ধাপ পিছিয়ে ৬৭তম অবস্থানে চলে যায় চট্টগ্রাম বন্দর। আগের অবস্থানে ফিরে না এলেও এবার এগিয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে প্রকাশিত লয়েডস লিস্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৩২ লাখ ১৪ হাজার একক কনটেইনার পরিবহন হয়েছে। বন্দরের মূল স্থাপনা, কমলাপুর কনটেইনার ডিপো ও পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনাল মিলে এসব কনটেইনার পরিবহন করে চট্টগ্রাম বন্দর। ২০২০ সালে এই সংখ্যা ছিল ২৮ লাখ ৩৯ হাজার একক কনটেইনার। এই হিসাবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় চট্টগ্রাম বন্দর ক্রমতালিকায় এগিয়েছে। করোনা কাটিয়ে ওঠার পর ২০২১ সালে বিশ্বজুড়ে বড় বন্দরগুলোতে জাহাজজট হলেও এই বন্দরে ছিল না। এর অর্থ, পণ্য পরিবহনে সেবার মানও বেড়েছে। তিনি বলেন, সামনে পতেঙ্গা টার্মিনাল চালু হবে। বে টার্মিনাল নির্মাণ হবে। তাতে ভবিষ্যতে এই বন্দর বৈশ্বিক ক্রমতালিকায় আরও এগিয়ে যাবে।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে যত পণ্য পরিবহন হয়, তার ২৭ শতাংশ কনটেইনারে আনা-নেওয়া হয়। বাকি ৭৩ শতাংশই আনা-নেওয়া হয় কনটেইনারবিহীন সাধারণ জাহাজে। সাধারণ জাহাজের (বাল্ক, ব্রেক বাল্ক ও ট্যাংকার) খোলে আমদানি হয় মূলত সিমেন্ট, ইস্পাত ও সিরামিক কারখানার কাঁচামাল এবং পাথর, কয়লা, ভোগ্যপণ্য ও জ্বালানি তেল। আর কনটেইনারে বেশির ভাগ আমদানি হয় শিল্পের কাঁচামাল, বাণিজ্যিক পণ্য ও ভোগ্যপণ্য। আবার সমুদ্রপথে রপ্তানির পুরোটাই যায় কনটেইনারে। কনটেইনারে পণ্য পরিবহন বাড়ার সঙ্গে বৈদেশিক বাণিজ্যের ইতিবাচক অগ্রগতি হচ্ছে।
লয়েডস লিস্টের তালিকায় চীন, ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশের একাধিক বন্দর থাকলেও বাংলাদেশে শুধু চট্টগ্রাম বন্দর ঠাঁই পেয়েছে। এর কারণ হলো, দেশে দুটি বন্দর দিয়ে কনটেইনার পরিবহন হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পরিবহন হয় ৯৮ শতাংশ। মোংলা বন্দর দিয়ে পরিবহন হয় ২ শতাংশের কাছাকাছি।
লয়েডস লিস্ট ২০১৩ সাল থেকে কনটেইনার পরিবহনের সংখ্যা হিসাব করে বৈশ্বিক ক্রমতালিকা প্রকাশ করে আসছে। ২০১৩ সালে কনটেইনার পরিবহনে বিশ্বে চট্টগ্রামের অবস্থান ছিল ৮৬তম। এরপর দুই দফা পিছিয়ে গেলেও ধীরে ধীরে বৈশ্বিক ক্রমতালিকায় এগিয়ে যাচ্ছে এই বন্দর।
কনটেইনারে পণ্য পরিবহনে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে তৈরি পোশাকশিল্প। পোশাকশিল্পের কাঁচামাল আমদানি ও রপ্তানি হয় কনটেইনারে। জানতে চাইলে পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনা কাটিয়ে ব্যবসা–বাণিজ্য গতিশীল করতে সরকার প্রণোদনা দিয়েছিল। তাতে ২০২১ সালে বৈদেশিক বাণিজ্য বেড়েছে। ক্রমতালিকায়ও এগিয়েছি আমরা।’
সৈয়দ নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘বর্তমানে বৈশ্বিক সংকট চলছে। একই সঙ্গে আমাদের জন্য সামনে সুযোগও আসছে। এই সুযোগ ধরার জন্য বন্দর সম্প্রসারণ জরুরি হয়ে পড়েছে। পতেঙ্গা টার্মিনাল দ্রুত চালু করা, বে টার্মিনাল দ্রুত নির্মাণের মতো বন্দর সম্প্রসারণের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে জোর দিতে হবে। এসব প্রকল্প দ্রুত করা গেলে সামনে বৈশ্বিক তালিকায় আরও এগোতে পারবে বন্দর। না হলে পিছিয়ে যাওয়ারও শঙ্কা থাকবে।’