সঞ্চয়পত্রে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের সুযোগ শিশু পরিবারের
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সঞ্চয় কর্মসূচিগুলোর অন্যতম হচ্ছে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র। ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী যেকোনো শ্রেণি-পেশার মানুষ একক নামে ৩০ লাখ বা যুগ্ম নামে ৬০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন এ সঞ্চয়পত্রে।
তবে দেশের অটিস্টিক সহায়ক প্রতিষ্ঠান, অনাথ আশ্রম, শিশু পরিবার ও প্রবীণনিবাস কেন্দ্রগুলোর জন্য এ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সুযোগটা বেশি। এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের ২০২২ সালের খসড়া বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। এটি গত ২২ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়। এতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেছেন, প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিল, প্রবীণ আশ্রয়কেন্দ্র, অনাথ আশ্রম, শিশু পরিবার, এতিম খানা ও অটিস্টিক শিক্ষাসহায়ক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে সমাজের অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় আনার ক্ষেত্রে সঞ্চয় অধিদপ্তর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে বেসরকারিভাবে পরিচালিত প্রতিবন্ধীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ রয়েছে। তাতে দেখা যায়, সুইড বাংলাদেশ পরিচালিত ৪৮টি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন পরিচালিত ৭টি ইনক্লুসিভ বিদ্যালয় ও বেসরকারি সংস্থা প্রয়াস পরিচালিত অটিস্টিক শিশুদের একটি বিদ্যালয় রয়েছে।
এদিকে সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের জেলা সদর ও উপজেলায় অবস্থিত ৪২টি বালক, ৪২টি বালিকা, ১টি মিশ্র, অর্থাৎ ৮৫টি সরকারি শিশু পরিবার রয়েছে। অধিদপ্তরের নিবন্ধন পাওয়া বেসরকারি শিশু পরিবার ও এতিমখানা রয়েছে ৪ হাজার ৭৪টি। আর ফরিদপুরে ‘শান্তি নিবাস’ নামে দেশের একমাত্র সরকারি পর্যায়ের প্রবীণনিবাস কেন্দ্র রয়েছে একটি।
এসব প্রতিষ্ঠান জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ তফসিলি ব্যাংক ও ডাকঘর থেকে এ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবে। বিনিয়োগ পাঁচ বছর পর্যন্ত রাখলে মুনাফা পাওয়া যাবে ৯ দশমিক ৩০ শতাংশ হারে। বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের বাইরে আরও তিন ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্র। পেনশনার সঞ্চয়পত্রে শুধু পেনশনধারীদের বিনিয়োগের সুযোগ থাকে।
ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পরিবার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেও পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারেন। সব মিলিয়ে বিনিয়োগ অবশ্য একক নামে ৫০ লাখ বা যৌথ নামে ১ কোটি টাকার বেশি হতে পারবে না।
৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে যে মুনাফা পাওয়া যায়, ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সে মুনাফার ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশ। তবে বিনিয়োগ ৫ লাখ টাকার বেশি হলেই মুনাফার ওপর উৎসে কর ১০ শতাংশ।
আয়কর বিধিমালা ১৯৮৪ (অংশ ২)-এর বিধি ৪৯-এর উপবিধি (২)-এ সংজ্ঞায়িত স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিল এবং ভবিষ্য তহবিল আইন, ১৯২৫ অনুযায়ী পরিচালিত ভবিষ্য তহবিলের টাকাও বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা যায়। প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ভবিষ্য তহবিলের মোট স্থিতির ৫০ শতাংশ, তবে সর্বোচ্চ ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশের ষষ্ঠ তফসিলের অংশ এ-এর অনুচ্ছেদ ৩৪ অনুযায়ী, মৎস্য খামার, হাঁস-মুরগির খামার, বীজ উৎপাদন, দুগ্ধ খামার, গবাদিপশুর খামার ইত্যাদি থেকে অর্জিত আয়ও এ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট উপকর কমিশনার আয়ের টাকা প্রত্যয়ন করে দেবেন। এ সব ফার্ম বিনিয়োগ করতে পারে সর্বোচ্চ দুই কোটি টাকা।
১৯৭৭ সাল থেকে দেশে বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র চালু হয়। ১০, ৫০, ১০০, ৫০০, ১ হাজার, ৫ হাজার, ১০ হাজার, ২৫ হাজার, ৫০ হাজার, ১ লাখ, ৫ লাখ, ১০ লাখ ও ২৫ লাখ টাকা মূল্যমানের সঞ্চয়পত্র এটি। কম টাকার সংগতিসম্পন্ন ব্যক্তিরা কম মূল্যমানের সঞ্চয়পত্র কিনেও যাতে বিনিয়োগ করতে পারেন, সে কারণে এ পদ্ধতি রাখা হয়েছে।
ব্যাংক, সঞ্চয় ব্যুরো ও ডাকঘরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এ সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয় ব্যাংকের মাধ্যমে। সঞ্চয় ব্যুরোর তুলনায় ব্যাংকের মাধ্যমে বিক্রি হয় অন্তত ছয় গুণ বেশি।