অর্থনীতি একেবারে লাইনচ্যুত হয়নি, গতি হারিয়েছে

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ

আর্থিক খাতে যাঁরা কেলেঙ্কারি করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তবে এ জন্য সঠিক তথ্য-উপাত্ত প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। দেশ থেকে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে হবে বলেও মন্তব্য করেন নতুন এ উপদেষ্টা।

অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে গত বৃহস্পতিবার শপথ নিয়ে আজ শনিবার সচিবালয়ে প্রথম অফিস করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ। বিকেলে নিজ দপ্তরে ঢোকার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে কথা বলেন তিনি। প্রথম দিন তিনি তাঁর আওতাধীন দুই মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সচিব ও অন্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের পর আবার তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামষ্টিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চেষ্টা করার কথা জানিয়ে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশ কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। এ মুহূর্তে মূল কাজ হলো আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করা। আইনশৃঙ্খলা মানে শুধু রাস্তাঘাটের আইনশৃঙ্খলা নয়; বরং ব্যাংক, ব্যবসা-বাণিজ্য, বন্দর ইত্যাদি চালু করা।

এ সরকারের খুব বেশি দিন ক্ষমতায় থাকার ইচ্ছা নেই জানিয়ে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ভবিষ্যৎ সরকারের জন্য আমরা মসৃণ পথ তৈরি করে যেতে চাই।’ ভুলত্রুটি হলে সমালোচনা করার আহ্বানও জানান তিনি।

লাইনচ্যুত অর্থনীতিকে লাইনে আনতে কত সময় লাগবে, এমন এক প্রশ্নের জবাবে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অর্থনীতি একেবারে লাইনচ্যুত হয়ে যায়নি। মন্থর হয়েছে ও গতি হারিয়েছে। আমরা গতি বৃদ্ধি করব। সুবিধা হলো, বাংলাদেশের মানুষের অফুরন্ত কর্মস্পৃহা আছে।’

ব্যাংক কমিশন গঠন করা হবে কি না, জানতে চাইলে অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রম পুরোপুরি চালু হোক; এরপর সংস্কারের প্রসঙ্গ আসবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ে তিনি বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতি ছাড়াও উন্নয়ন কৌশলে অনেক ভুল ছিল। মানুষ সামগ্রিকভাবে উন্নয়নের সুফল পাননি। প্রবৃদ্ধি হয়েছে, কিন্তু তার ফল কে পেয়েছেন, কাদের কাছে টাকা গেছে, সেটাই মূল বিষয়। এ সরকার চায়, সমতাভিত্তিক ও ন্যায্য প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা।

সদ্য পদত্যাগী গভর্নরের আমলে দেশের অনেক ব্যাংকে কেলেঙ্কারি হয়েছে, তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হলেই কি তিনি জবাবদিহির আওতার বাইরে থেকে যাবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, গভর্নরের পদটি সংবেদনশীল। তিনি পদত্যাগপত্র দিয়েছেন, এ বিষয়ে আগামীকালের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে।

সচিবদের সঙ্গে বৈঠকের পর এই উপদেষ্টা বলেন, অর্থনীতির কাজ হবে স্বাভাবিকভাবে। অতীতে কেউ কিছু করে থাকলে যথাবিহিত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জোর করে কারও বিরুদ্ধে কিছু করা যাবে না।

রাষ্ট্রীয় প্রভাব খাটিয়ে আওয়ামী লীগের যাঁরা বিপুল বিত্তের মালিক হয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন কি না, জানতে চাইলে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এটা দীর্ঘ মেয়াদি বিষয়। আজ শুধু আশু বিষয় নিয়ে আলাপ হয়েছে।

এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমাতুল মুনিমের পদত্যাগের গুঞ্জন নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘না, না। এগুলো…(বাক্য শেষ করেননি)।’