সুপারশপে কেনাকাটায় বাড়তি ভ্যাট দিতে হবে না
সুপারশপে কেনাকাটার ক্ষেত্রে ক্রেতাদের আর বাড়তি মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) দিতে হবে না। পণ্যের খুচরা মূল্য হিসেবে যে দাম লেখা থাকবে, তা দিলেই চলবে। এ নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও সুপারশপের মালিকদের মধ্যে একধরনের সমঝোতা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। শিগগিরই এনবিআরের ভ্যাট বিভাগ এ–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে।
এত দিন ধরে সুপারশপে কেনাকাটা করার সময় কখনো দেড় শতাংশ, কখনো ২ শতাংশ, কখনোবা ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা ছিল। সর্বশেষ বাজেটের সময় সুপারশপের কেনাকাটার ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট ধার্য করা হয়।
এ নিয়ে কিছুদিন ধরে চেইন সুপারশপের মালিকেরা আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক দফায় আলোচনা করেন তাঁরা।
এনবিআরের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, সুপারশপের কেনাকাটার ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আছে, এর ফলে ভোক্তাদের ওপর বাড়তি ভ্যাটের চাপ পড়ে। ব্যবসায়ীরাও ভ্যাট রেয়াত নিতে পারেন না। তবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট থাকলে ব্যবসায়ীরা রেয়াত নিতে পারেন এবং পণ্যের গায়ের লেখা খুচরা দামের মধ্যেই ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত থাকে। এতে ভোক্তাকে বাড়তি কোনো ভ্যাট দিতে হয় না। এ বিষয়ে ব্যবসায়ী ও এনবিআরের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে।
নতুন নিয়মে সুপারশপের মালিকদের পণ্যের গায়ে লেখা খুচরা মূল্যে বিক্রি করতে হবে। আর খুচরা মূল্যে (এমআরপি) ১৫ শতাংশ ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সুপারশপের মালিকেরা নিজেদের মূল্য সংযোজনের অংশের ভ্যাট দেবেন। আগের পর্যায় থেকে ভ্যাট রেয়াত নেবেন।
জানা গেছে, উৎপাদন পর্যায়ে যেসব নিত্যপণ্যে ভ্যাট নেই, তবে ব্যবসা পর্যায়ে ভ্যাট আছে এমন পণ্যের তালিকা পর্যালোচনা করছে এনবিআর। যাতে করে ভোক্তার ওপর বাড়তি ভ্যাটের চাপ না পড়ে। ময়দা, আদা ইত্যাদি পণ্যে উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট নেই।
এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, ১৫ শতাংশ ভ্যাট হলে তা খুচরা মূল্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সুপারশপের মালিকদের ভ্যাট রেয়াত নেওয়া সহজ হবে। তবে এ জন্য সুপারশপের মালিকদের ভ্যাটের চালান দেয় এমন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পণ্য কিনতে হবে।
কেন জটিলতা
চেইন সুপারশপের মালিকদের হিসাব অনুসারে, সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হলে ৫০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করতে হয়। আর ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের ক্ষেত্রে পণ্যের ওপর ৩৩ শতাংশ মূল্য সংযোজন হয়। কিন্তু সুপারশপে বিক্রি করা মুদি পণ্যে ১৫-২০ শতাংশের বেশি মূল্য সংযোজন হয় না।
এসিআই লজিস্টিকের (স্বপ্ন) এমডি সাব্বির হাসান নাসির বলেন, আধুনিক বাণিজ্য ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সুপারশপকেন্দ্রিক বেচাকেনা অপরিহার্য। কারণ, এতে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে (ই-ট্রান্সজেকশন) সম্ভব হয়। খাদ্যের মান নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। নারীর ক্ষমতায়ন হয়। তিনি বলেন, সুপারশপে বৈষম্যমূলক ভ্যাট আরোপ হয়েছে। এই ভ্যাট প্রত্যাহার করা উচিত।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর সুপারশপ খাত থেকে ১৫৫ কোটি টাকার ভ্যাট পায় এনবিআর। সুপারশপের মালিকদের দাবি, খুচরা মূল্যের মধ্যে ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত থাকলে এবং সঠিকভাবে যথানিয়মে বেচাকেনা হলে সুপারশপ থেকে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার মতো ভ্যাট আদায় করা সম্ভব।
সুপারশপের বাজার বাড়ছে
বাংলাদেশ সুপারমার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মতে, বর্তমানে দেশে নিত্যপণ্যের খুচরা বাজারের আকার প্রায় দেড় হাজার কোটি মার্কিন ডলারের। তিন বছর আগে এ ক্ষেত্রে সুপারশপের অংশ ছিল দেড় শতাংশের কম। এখন তা বেড়ে ৩ শতাংশের মতো হয়েছে। সুপারশপের ব্যবসার দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে সারা দেশে দেড় হাজারের বেশি সুপারশপ রয়েছে। এর মধ্যে চেইন সুপারশপ আছে প্রায় ছয় শ। পাঁচ বছর আগেও সুপারশপের সংখ্যা ছিল কয়েক শ। দেশের বড় চেইন সুপারশপগুলোর মধ্যে রয়েছে আগোরা, স্বপ্ন, মীনা বাজার, ডেইলি শপিং, ইউনিমার্ট, আলমাস, প্রিন্স বাজার, ডেইলি সুপারশপ প্রভৃতি।
সুপারশপগুলোর মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে স্বপ্ন। সারা দেশে প্রতিষ্ঠানটির ৪৪০টি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে।