সাড়ে ৫ লাখ টন খাদ্য আমদানির জন্য শর্ত শিথিল
আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে আমদানির দরপত্র দাখিলের সময়সীমা কমিয়ে ১০ দিন করা হয়েছে। এত দিন এই নিয়ম ছিল পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের তারিখ থেকে ৪২ দিন। এ দফায় চাল আমদানির জন্য সময়সীমা কমানোর একটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে আজ বুধবার এই অনুমোদন দেওয়া হয়। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন খাদ্য অধিদপ্তর রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৫ লাখ ৫০ হাজার টন চাল আমদানির করার জন্য গণখাতে ক্রয় বিধিমালা (পিপিআর) শিথিল করা হয়।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে গত বছর ধান উৎপাদন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ জন্য উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয় অবশ্য বলেছে, বেশি যাতে আমদানি না করা হয়। কারণ, আমদানি বেশি হয়ে গেলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন। তবে উৎপাদন কম হলেও দেশে খাদ্যের কোনো অভাব নেই।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে খাদ্যের মজুত ছিল ৬ লাখ ৪৪ হাজার টন। এর মধ্যে চাল ৫ লাখ ৩৪ হাজার টন, বাকিটা গম। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সাধারণ প্রক্ষেপণ হচ্ছে, নিরাপদ মজুত থাকা উচিত অন্তত ১০ লাখ টন খাদ্য।
শুধু চাল নয়, রাষ্ট্রের জরুরি প্রয়োজনে হঠাৎ সার ও তেল আমদানির প্রয়োজন হলেও ১০ দিনের এই নিয়ম কার্যকর করা যাবে। গণখাতে ক্রয় বিধিমালা (পিপিআর) ৮৩(১)ক-তে আগে বলা ছিল, আন্তর্জাতিক দরপত্র দাখিলের সময়সীমা এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে, যাতে সব দরপত্রদাতার কাছে দরপত্র দাখিলের আহ্বান পৌঁছায়। ঠিকাদার দরপত্রে অংশ নেবেন। সে জন্য ৪২ দিন সময় পাবেন একজন দরপত্রদাতা।
কিন্তু বিধিমালার এই ধারা অনুসরণ করতে গিয়ে সরকারকে সমস্যায় পড়তে হয় বলে জানান পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) কর্মকর্তারা। এ কারণেই ধারাটি সংশোধন করা হয়েছে। গতকালের নীতিগত সিদ্ধান্তের আগে গণখাতে ক্রয় আইন, ২০০৬-এর ৭০ ধারায় দেওয়া ক্ষমতাবলে সরকার গত সপ্তাহে সরকার পিপিআর সংশোধন করে প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে খাদ্যের মজুত ছিল ৬ লাখ ৪৪ হাজার টন। এর মধ্যে চাল ৫ লাখ ৩৪ হাজার টন, বাকিটা গম। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সাধারণ প্রক্ষেপণ হচ্ছে, নিরাপদ মজুত থাকা উচিত অন্তত ১০ লাখ টন খাদ্য।
সিপিটিইউর মহাপরিচালক শোহেলের রহমান চৌধুরী এর আগে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে আন্তর্জাতিকভাবে জরুরি কোনো কেনাকাটা করতে গেলে অনেক সময় চলে যায়। সে জন্য জরুরি পরিস্থিতি সামাল দিতে সময়সীমা কমানো হয়েছে।
আজকের বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শাহিদা আকতার সাংবাদিকদের আরও জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতায় চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে ‘বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠার জন্য বেজা ও বেপজার মধ্যে উন্নয়ন চুক্তি স্বাক্ষরের একটি প্রস্তাবেরও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপিত তিন প্রস্তাবের মধ্যে বাকিটি হচ্ছে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) পদ্ধতিতে ‘ইকুইপ, অপারেট অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স অব পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল অন পিপিপি মডেল’ প্রকল্প গ্রহণের নীতিগত অনুমোদন। এটি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষে আন্তর্জাতিক মানের বেসরকারি অপারেটর নিয়োগের জন্য এ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়।
ক্রয় কমিটি
পাশাপাশি অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের একটি এবং বিদ্যুৎ বিভাগের একটি—মোট দুটি প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। এতে মোট অর্থের পরিমাণ ১৯৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা। পুরো অর্থই সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে।
এর মধ্যে একটি হচ্ছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড কর্তৃক ‘শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ)’ প্রকল্পের আওতায় ১৩০ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড কেব্ল কেনার প্রস্তাব। ৭৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ের এ কাজ পেয়েছে পলি ক্যাবল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
অন্যটি হচ্ছে, ‘শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) মাধ্যমে বিসিক কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, মুন্সিগঞ্জ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের মাটি ভরাট। সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের জন্য ১২৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ের এ কাজ পেয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ লিমিটেড।