কোরবানির ঈদে চামড়া সংরক্ষণের জন্য লবণের প্রয়োজন হয়। এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা যাতে দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করতে না পারেন, সে জন্য বাজারে তদারকি বাড়াবে বলে জানিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সংস্থাটি বলছে, ঈদুল আজহা সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা লবণের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আবার কারও বিরুদ্ধে দাম নিয়ে কারসাজির অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা, জরিমানার পাশাপাশি দোকান বন্ধ করে দেওয়া হবে।
ভোক্তা অধিদপ্তরের কারওয়ান বাজার কার্যালয়ে গতকাল বুধবার আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলা হয়। কাঁচা চামড়ার গুণগত মান ঠিক রাখা, লবণের সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সভায় লবণ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাজারে এবার লবণের কোনো সংকট নেই। সরকার কিছু লবণ আমদানির অনুমতিও দিতে যাচ্ছে। সুতরাং বাজারে লবণের সংকট হবে না। তবে মৌসুমি লবণ ব্যবসায়ীদের নজরদারিতে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
লবণের বাজার স্থিতিশীল রাখতে বাজারে অভিযান চালানো হবে বলে জানান ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, সারা বছরের চামড়ার অর্ধেক এই ঈদে পাওয়া যায় এবং এটা জাতীয় সম্পদ। তাই এটি সংরক্ষণে সবাইকে সচেতন হতে হবে। লবণের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকায়। বলা হচ্ছে, এই দাম যৌক্তিক। চাষিদের সুরক্ষারও প্রয়োজন আছে। তবে ঈদকে কেন্দ্র করে দাম বাড়ানোর অভিযোগ এলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংস্থাটির পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ‘এবারের ঈদে লবণ নিয়ে কারসাজি চলবে না। হঠাৎ করে কেউ বাড়তি দাম রাখলে তাঁদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক দোকান বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক মাস দোকান খুলতে দেওয়া হবে না। জরিমানা তো হবেই, মামলাও করা হবে। ঈদের দিন বেলা তিনটা থেকে আমরা সক্রিয় থাকব।’
বাজারে লবণের সংকট নেই উল্লেখ করে বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির বলেন, ‘আমাদের হাতে এখন তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টন লবণ মজুত আছে। সেখানে এই ঈদে লবণের প্রয়োজন হবে ৫৫ থেকে ৫৬ হাজার টন। তাই চামড়া সংরক্ষণের জন্য লবণের কোনো সংকট হওয়ার কথা নয়। আবার সরকার লক্ষাধিক টন লবণ আমদানির অনুমতি দিতে যাচ্ছে। সেটা ঈদের পরপরই বাজারে আসবে। তাই সরবরাহ নিয়ে চিন্তা নেই।’
গরম আবহাওয়ার কারণে পশু জবাইয়ের পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টার মধ্যে কোরবানিদাতাদের চামড়ায় লবণ লাগানোর আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আফতাব খান বলেন, ‘২০১০ সালের আগে চামড়ায় এখনকার চেয়ে চার গুণ বেশি দাম পাওয়া যেত। এরপর দাম কমতে থাকে। তবে এবার চামড়ার দাম একটু বাড়বে। কিন্তু মৌসুমি লবণ ব্যবসায়ীরা যাতে দাম বাড়াতে না পারেন, তা নিয়ে সজাগ থাকতে হবে। যেহেতু গরমকাল, চামড়া দ্রুত সংরক্ষণও করতে হবে। তাতে সবাই লাভবান হবেন।’