বাজেট বৃহৎ ব্যবসাবান্ধব-সানেম
আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটকে বৃহৎ ব্যবসা-বান্ধব বলে মন্তব্য করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, এ বাজেট বৃহৎ ব্যবসা-বান্ধব। প্রস্তাবিত বাজেটে করপোরেট করে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এ সুবিধা বড় বড় ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু গত দুই বছরে করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র, অতি ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত। করোনার ক্ষতিগ্রস্ত এসব খাত কভিড পুনরুদ্ধারেও খুব বেশি সহায়তা পায়নি। আবার বাজেটে করপোরেট করে যে ছাড় দেওয়া হয়েছে তা এসব খাতের জন্য প্রযোজ্য না।
আজ সোমবার বাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেছে সানেম। রাজধানীর মহাখালী ব্র্যাক সেন্টার ইনে বাজেট-উত্তর এ পর্যালোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বাজেটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান ও গবেষণা পরিচালক সায়েমা হক।
সেলিম রায়হান বলেন, এ বছরের বাজেট পরবর্তী সময়ে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা নিয়ে যত আলোচনা হচ্ছে, বাজেটের মূল কাঠামো নিয়ে তত আলোচনা হচ্ছে না। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ সব দিক থেকেই অনৈতিক। সানেম এই নীতি সমর্থন করে না। টাকা ফেরত আনার উদ্যোগের বদলে কীভাবে টাকা পাচার হলো-তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত।
অনুষ্ঠানে বাজেট পর্যালোচনা তুলে ধরে সায়েমা হক বলেন, দেশে এখন উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে। এ বাস্তবতায় সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার ছিল। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে প্রকৃত বরাদ্দ বাড়ানোর পরিবর্তে উল্টো কমেছে। এটি সরকারের ঘোষিত নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে জিডিপির ২ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হবে। কিন্তু এ বছর পেনশন, বৃত্তি ও সুদ বাদে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে প্রকৃত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) এক শতাংশের মতো। এ বরাদ্দ গত বছরের চেয়েও কম।
সানেমের বাজেট পর্যালোচনায় বলা হয়, এখনকার বাস্তবতায় মাথাপিছু সামাজিক ভাতা বাড়ানো দরকার ছিল। আমাদের প্রস্তাব ছিল, ওপেন মার্কেট সেল বা ওএমএসে বরাদ্দ বাড়ানোর। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, ওএমএসে বরাদ্দ কমানো হয়েছে।
বৈষম্য প্রসঙ্গে সায়েমা হক বলেন, ২০১৬ সালের পর সরকারি কোনো পরিসংখ্যান নেই। ২০১৬ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশের মোট সম্পদের ৩৮ শতাংশ দেশের ১০ শতাংশ শীর্ষ ধনীর হাতে পুঞ্জীভূত। কোভিডকালে এ বৈষম্য আরও বেড়েছে। বৈষম্য কমাতে তিনি কর কাঠামো সংস্কারের পরামর্শ দেন। অর্থাৎ যার যত বেশি সম্পদ, তার ওপর তত বেশি হারে করারোপের প্রস্তাব করেন তিনি।
এদিকে, দেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার জরিপ নিয়ে সম্মেলন আয়োজনের কথা বলেছেন সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার জরিপ নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। এ অবস্থায় এসব জরিপ নিয়ে সরকার ও সরকারি গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) সম্মেলন আয়োজনের উদ্যোগ নিতে পারে। সেখানে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের জরিপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য প্রস্তুত। তিনি বলেন, জরিপের পদ্ধতি নিয়ে তর্ক-বিতর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু দারিদ্র্য, বৈষম্য, শ্রমবাজার-এসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে। সেরকম অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আমরা অত্যন্ত উৎসাহী।
অনুষ্ঠানে সানেমের অন্যান্য গবেষক উপস্থিত ছিলেন।