তিন দশকে এমন চিত্র দেখিনি
নানামুখী সংকটে এখন দেশের অর্থনীতি। এ সংকট যেমন সাধারণ মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস তুলেছে, তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্যকে কঠিন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি করেছে। শিল্পকারখানাগুলো এখন খাবি খাচ্ছে সংকট মোকাবিলায়। একদিকে বাড়ছে উৎপাদন খরচ, অন্যদিকে কমছে বিক্রি। গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট ও ডলারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এখন উদ্যোক্তাদের মাথাব্যথার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সময়ে প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে সংকট সামাল দিচ্ছে, কী ধরনের কৌশল নিচ্ছে এবং সরকারের কাছে তাদের প্রত্যাশা কি—ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেছেন শীর্ষপর্যায়ের পাঁচটি খাতের পাঁচজন উদ্যোক্তা। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন সুজয় মহাজন, মাসুদ মিলাদ ও শুভংকর কর্মকার।
প্রায় দুই মাস ধরে খাদ্যপণ্য আমদানির জন্য ব্যাংকে ঋণপত্র খোলার চেষ্টা করে যাচ্ছি। ডলার-সংকটের দোহাই দিয়ে ব্যাংক ঋণপত্র খুলছে না। পণ্য যা আমদানি করেছি, তা-ও প্রায় বিক্রি হয়ে গেছে। নতুন করে পণ্য আমদানি করতে না পারলে আমদানি ব্যবসা থেকেই সরে আসতে হবে।
প্রায় তিন দশক ধরে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে খাদ্যশস্যের ব্যবসা করে আসছি। কনটেইনারে করে মটরডাল, মাষকলাই ডাল, মুগডাল, শর্ষে বীজের মতো খাদ্যশস্য ছোট ছোট চালানে আমদানি করতে এত দিন সমস্যা হয়নি। আমদানিতে এবারই প্রথম ধাক্কা খেয়েছি ডলারের বিনিময়মূল্য বাড়ায়। মটরডালের একটি চালান আমদানি করে বিক্রির পর বেশি দামে ডলার কিনে শোধ করতে হয়েছে। ব্যবসায় লাভ-লোকসান দেখেছি। তবে আমদানি করতে পারিনি, আমদানি দায় মেটাতে বড় লোকসান করতে হয়েছে—এমন ঘটনা ঘটেনি।
একটা উদাহরণ দিই। তিন সপ্তাহ আগে তুরস্ক থেকে ৫০০ টন শর্ষে বীজ আমদানির জন্য রপ্তানিকারকের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ব্যাংকও সম্মতি দেয়। সাড়ে তিন লাখ ডলারের ঋণপত্র খোলার জন্য সব কাগজপত্র গুছিয়ে এনে যখন ব্যাংকে যাই, তখন তারা জানাল, ডলার-সংকট। অঙ্গীকার দিয়ে ব্যাংকও সরে আসে। এখন তুরস্কের ওই রপ্তানিকারকের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারালাম।
ঋণপত্র খোলার জন্য এখনো চেষ্টা করে যাচ্ছি। ব্যাংক এখন জানাচ্ছে, ডলারের সংস্থান করতে পারলে তারা ঋণপত্র খুলতে পারবে। যারা রপ্তানি করছে, তাদের জন্য ঋণপত্র খোলা সম্ভব হচ্ছে। আমরা কোথায় থেকে ডলারের সংস্থান করব? এমনিতেই এখন যারা ঋণপত্র খুলে পণ্য আমদানি করছে, তারা একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে। আমদানি দায় শোধ করার সময় যদি বাড়তি দরে ডলার কিনতে হয়, তাহলে আরেকবার ধাক্কা আসবে আমদানিকারকদের জন্য।
ছোট ছোট চালানের ঋণপত্র যদি খোলা না যায়, তাহলে সামনে এসব পণ্যের সরবরাহ কমে ঘাটতি তৈরি হবে। ঘাটতি হলে স্বাভাবিকভাবেই বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার শঙ্কা থাকে। এ জন্য অন্তত জরুরি নিত্যপণ্যের সরবরাহ যাতে ঠিক থাকে, সে জন্য ঋণপত্র খোলায় গুরুত্ব দেওয়া উচিত।