লোনে জমি বা ফ্ল্যাট কিনতে চাইলে
জমি বা ফ্ল্যাট কেনার জন্য আপনার দরকার লোন। লোন নেওয়ার জন্য খুঁজছেন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে যাঁদের কাছ থেকে লোন নেবেন, তাঁরাও খুঁজছেন আপনাকেই। মানে ফ্ল্যাট বা জমি কেনার জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও ঋণ দিতে আগ্রহী।
এখন দুইয়ে দুইয়ে চার হলেই আপনি পাবেন লোন। লোন নিয়ে রামপুরার মহানগরের ৬ নম্বর রোডে ফ্ল্যাট কিনেছেন ইব্রাহিম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ফ্ল্যাট কেনার জন্য একসঙ্গে অনেক টাকার প্রয়োজন। এতগুলো টাকা একসঙ্গে জোগাড় করা আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য। তাই ফ্ল্যাট কেনার জন্য ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছি।’
ইব্রাহিম চৌধুরীর মতো অনেকেই রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরে স্বপ্নের ফ্ল্যাট কেনার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন মেয়াদে লোন নিয়ে থাকেন।
লংকাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেডের রিটেইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ডিভিশনের ডেপুটি টিম লিডার মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘নিজেদের একটি ফ্ল্যাট কেনা প্রায় প্রতিটি মধ্যবিত্ত পরিবারের স্বপ্ন। ভাড়া বাসায় মাসে মাসে বাড়িভাড়া গোনার সঙ্গে আছে নানা ঝামেলাও। এ জন্য একটু কষ্ট করে হলেও অনেকেই টাকা জমিয়ে বা ঋণ নিয়ে ফ্ল্যাট কিনছেন। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন আবাসন খাতে আগের চেয়ে বেশি ঋণ দিচ্ছে।’
আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়াটা অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ। ঋণ পাওয়াও তুলনামূলক সহজ। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত রয়েছে। শর্তগুলো মানলে সহজেই পেয়ে যাবেন প্রয়োজনীয় ঋণ। মো. কামরুজ্জামান জানান, বর্তমানে ফ্ল্যাট কেনার জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে সুদের হার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। তবে ব্যাংকভেদে এই সুদ ৭ থেকে ৯ শতাংশ। আবার কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এ সুদের হার বেশি।
ফ্ল্যাট বা জমি কেনার জন্য ঋণ গ্রহণের শর্ত ৭০ বনাম ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ আপনি যদি এক কোটি টাকার একটি ফ্ল্যাট কিনবেন বলে মনস্থির করেন, তাহলে ব্যাংক আপনাকে ঋণ দেবে ৭০ লাখ, বাকি ৩০ লাখ টাকা দিতে হবে আপনাকে। তবে ব্যাংক থেকে আপনি কত টাকা ঋণ পাবেন, সেটি নির্ভর করে আপনার মাসিক বেতন ও আয়ের ওপর।
গ্রাহকেরা সবচেয়ে বেশি আবাসন ঋণ নেন ব্যাংক থেকে। আইএফআইসি ব্যাংকের ‘আমার বাড়ি’ নামে আলাদা একটি স্কিম রয়েছে। আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেডের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘যাঁরা নিজের একটি বাড়ির স্বপ্ন দেখেন, তাঁদের জন্য আইএফআইসি ‘‘আমার বাড়ি’’ একটি নিখুঁত আর্থিক সমাধান। এটি বাংলাদেশের সব ঋণযোগ্য ব্যক্তির জন্য একটি আকর্ষণীয় লোন–সুবিধা। আইএফআইসি ‘‘আমার বাড়ি’’ ঋণ প্রজেক্টের আওতায় গ্রাহকদের কয়েকটি শর্তে দুই কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকে। লোন টেকওভারের জন্য কোনো প্রসেসিং ফি নেই।’
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অল্প সুদে গৃহনির্মাণ–ঋণ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন ছাড়াও ইসলামী ব্যাংকসহ বেসরকারি খাতের পাঁচটি ব্যাংক থেকেও গৃহনির্মাণ–ঋণ নিতে পারবেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন থেকে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, পূবালী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক থেকেও গৃহনির্মাণ–ঋণ নিতে পারবেন। চাকরি স্থায়ী হওয়ার পাঁচ বছর পর থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা এ ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন।
নীতিমালায় সর্বোচ্চ ঋণসীমা ৭৫ লাখ টাকা ও সর্বনিম্ন ঋণ ২০ লাখ টাকা করা হয়েছে। ঋণের বিপরীতে সুদের ওপর সুদ, অর্থাৎ চক্রবৃদ্ধি সুদ নেওয়া হবে না। এ ছাড়া কোনো ‘প্রসেসিং ফি’ বা আগাম ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে কোনো ‘অতিরিক্ত ফি’ দিতে হবে না। ঋণ পরিশোধের মেয়াদকাল সর্বোচ্চ ২০ বছর। সরকারি চাকরিতে চুক্তিভিত্তিক, খণ্ডকালীন ও অস্থায়ী ভিত্তিতে নিযুক্ত কেউ এ ঋণ পাবেন না।