কালোটাকা সাদা করেছেন যাঁরা, আইনি সুরক্ষা পাবেন তাঁরা
গত ২ সেপ্টেম্বরের আগে যাঁরা কালোটাকা সাদা করেছেন, তাঁদের জন্য আইনি সুরক্ষা থাকবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেদিন এই আইন বাতিল হলো, তার আগে যদি কেউ সুযোগ নেন এবং সরকারি কোষাগারে অর্থ জমা পড়ে, তাহলে ওই করদাতা আইনি সুরক্ষা পাবেন।
আজ সোমবার করদাতাদের জন্য অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের ই-রিটার্ন সার্ভিস সেন্টারের উদ্বোধনকালে এনবিআর চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় কালোটাকা সাদা করার এই সুযোগ দিয়েছিলেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তিনি গত ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এক বছরের জন্য এই সুযোগ দেন। এতে ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত নগদ টাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ ১৫ শতাংশ কর দিয়ে সাদা করার সুযোগ ছিল। ২ সেপ্টেম্বর সুযোগটি বাতিল করে দেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
এনবিআরের ই-রিটার্ন সার্ভিস সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) হেড অব কো-অপারেশন মিশেল ক্রেজা। এ সময় এনবিআরের সব সদস্য ও অন্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এনবিআর জানায়, নতুন এই সার্ভিস সেন্টার ই-রিটার্ন সিস্টেম ব্যবহার করে করদাতাদের রিটার্ন দাখিল ও কর পরিপালন সহজ করবে। ইইউর পাবলিক ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামের সহায়তায় সার্ভিস সেন্টারটি পরিচালিত হচ্ছে।
অনলাইনে ই-রিটার্ন জমার ব্যবস্থাটি সব করদাতার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়ার ঠিকানা হলো www.etaxnbr.gov.bd। সার্ভিস সেন্টারটিতে সব কর্মদিবসে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ০৯ ৬৪৩ ৭১ ৭১ ৭১ নম্বরে ফোন করে করদাতারা ই-রিটার্নসংক্রান্ত প্রশ্নের তাৎক্ষণিক সমাধান পাওয়া যাবে। এ ছাড়া www.etaxnbr.gov.bd এর eTax Service অপশন থেকে করদাতারা ই-রিটার্ন–সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা লিখিতভাবে জানাতে পারবেন ও সমাধানও পাবেন।
এই সিস্টেম থেকে করদাতারা অনলাইনে রিটার্ন তৈরি ও জমা দেওয়ার পাশাপাশি ইন্টারনেট ব্যাংকিং, কার্ডে পেমেন্ট (ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড) এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কর পরিশোধ করতে পারবেন। এ ছাড়া দাখিল করা রিটার্নের কপি, প্রাপ্তি স্বীকারপত্র, আয়কর সনদ, কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ডাউনলোড ও প্রিন্ট করা যাবে।
অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, অনলাইনে ই-রিটার্ন জমার বিষয়ে বায়োমেট্রিকস কিছুটা সমস্যা করছে। কোনো করদাতা যদি অনলাইনে ই-রিটার্নের নিবন্ধন নিতে যান, তাহলে ফোনটি হতে হবে তাঁর নামে। কারণ, ফোনের বায়োমেট্রিকস করা থাকতে হবে। কোনো করদাতা হয়তো ৩০ বছর ধরে ফোন ব্যবহার করছেন। তাঁদের হয়তো বায়োমেট্রিকস করা নেই। বায়োমেট্রিকস অপশন বাদ দিয়ে ই-রিটার্নের জন্য নিবন্ধন করা যায় কি না-তা দেখতে হবে। বায়োমেট্রিকস করা না থাকায় দুই বছর ধরে তিনি অনলাইনে রিটার্ন দিতে পারছেন না বলে জানান।
আবদুর রহমান খান আরও বলেন, করদাতারা যাতে দ্রুত ও মানসম্মতভাবে সেবা পেতে পারেন, সে উদ্দেশ্যে এনবিআরের সব লেনদেন ডিজিটাল ফর্মে রূপান্তরিত করা হবে। জাতিসংঘের ই-গভর্নমেন্ট ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস ইনডেক্স অনুযায়ী, সম্প্রতি বাংলাদেশ ১১ ধাপ এগিয়ে দক্ষিণ এশিয়া এবং বৈশ্বিক গড়কেও ছাড়িয়ে গেছে।
ইইউর হেড অব কো-অপারেশন মিশেল ক্রেজা এনবিআরকে ই-রিটার্ন সিস্টেমের সফল বাস্তবায়ন এবং এই সার্ভিস সেন্টার প্রতিষ্ঠার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং তাঁদের সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।