ক্রেতা ৭০ টাকায় লেবু খাবেন না, এর কমে বেচলে বিক্রেতার লাভ হবে না
ঈদের পরদিন আজ মঙ্গলবার স্বাভাবিকভাবেই বাজারে ক্রেতা এসেছেন হাতেগোনা। তার মানে, চাহিদা তেমন নেই। তা সত্ত্বেও লেবু ও শসা আগের মতোই বেশ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে আকারভেদে প্রতি হালি লেবু আজও ৭০ থেকে ১২০ টাকায় এবং প্রতি কেজি শসা ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। আজকের চেয়ে অবশ্য ঈদের আগের রাত তথা চাঁদরাতে লেবুর দাম হালিতে ১০ টাকা ও শসার দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা বেশি ছিল। আজ রাজধানীর আগারগাঁওয়ের তালতলা, কারওয়ানবাজার ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট এবং টাউন হল বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা জানান, ঈদের বন্ধের কারণে বাজারে অধিকাংশ সবজির সরবরাহ কম। বিশেষ করে লেবু ও শসার সরবরাহ আরও কম। এ কারণে তাঁরা দাম বেশি রাখছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের পরদিন সব কটি বাজারেই অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। অল্প কিছু দোকান খুললেও ক্রেতার সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। ক্রেতাদের বেশির ভাগই জানান, তাঁরা খুব জরুরি প্রয়োজনেই বাজারে এসেছেন। অনেক নিম্নবিত্ত পরিবারের লোকেদের মধ্য যাঁরা ঈদের আগে বাজার করার সুযোগ পাননি, তাঁদের অনেকেই আজ এসেছেন।
আজ বেলা আড়াইটার দিকে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে গিয়ে সেখানে ব্রয়লার মুরগি, গরুর মাংস ও মাছের তিনটি এবং চারটি মুদিদোকান খোলা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া রাস্তার পাশে সবজির পাঁচ-ছয়টি দোকান খোলা হয়েছে। তবে ক্রেতার উপস্থিতি ছিল একেবারেই হাতে গোনা।
মোহাম্মদপুরের শ্যামলী হাউজিংয়ের বাসিন্দা মাসুদা বেগম নামের একজন ক্রেতা জানান, তিনি তাজমহল রোডের একটি শিশুশিক্ষা বিদ্যালয়ে কাজ করেন। ঈদের আগে তাঁর কাছে নগদ টাকা ছিল না। এ জন্য মুরগির মাংস ও অন্যান্য বড় (বেশি টাকার) বাজার করার সুযোগ পাননি। আজ বাজার থেকে মুরগি, শসা, পুদিনা পাতা, টক দই এসব কিনেছেন। কিন্তু কৃষি মার্কেটে দোকান খোলা না থাকায় পেঁয়াজ, আলু, বেগুনসহ কয়েকটি পণ্য কিনতে পারেননি। এগুলোর জন্য আশপাশের ছোট বাজারে গিয়ে দেখবেন বলে জানান মাসুদা।
লেবুর হালি ৭০-১২০ টাকা
সরেজমিনে তিনটি বাজারে দেখা যায়, এক হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৭০ টাকায়। এগুলো ছোট আকারের। আর বড় আকারের লেবুর সর্বোচ্চ দাম ১২০ টাকা পর্যন্ত। বাজারে সব সবজির দোকানে লেবু পাওয়াও যাচ্ছে না। কারণ, সরবরাহ কম।
কৃষি মার্কেটে আজ দুপুরে লেবু কিনতে আসেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নুরে আলম। দোকানদার এক হালি লেবুর দাম চান ৭০ টাকা; কিন্তু ওই ক্রেতা ৫০ টাকা পর্যন্ত বলেন। এতে বিক্রেতা রাজি না হওয়ায় লেবু না কিনেই ফিরে যান নুরে আলম। এ সময় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছোট সাইজের (আকারের) এই লেবুর দাম ৩০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়; কিন্তু দাম চাইছে ৭০ টাকা। লেবুই খামু না।’ অন্যদিকে বিক্রেতা শাহাদাত হোসেনের দাবি, ৭০ টাকার নিচে লেবু বিক্রি করলে তাঁর মোটেও লাভ থাকবে না।
বাজারে শসার দামও চড়া। প্রতি কেজি শসা ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারে এ দাম ৬০-৮০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি কেজি বেগুন ৭০-৮০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০-১২০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৬০ টাকা ও পেঁপে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে পেঁপের দাম কেজিতে ২০ টাকার মতো বেড়েছে।
মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারের সবজি বিক্রেতা সাগর হাওলাদার বলেন, ঈদের বন্ধের মধ্যে ক্রেতা কম, আবার সবজির সরবরাহ কম। এ কারণে দাম কিছুটা বাড়তি। দু-তিন দিনের মধ্যে বাজার আগের অবস্থায় ফিরে যাবে।
গরুর মাংস ও মুরগির দাম কমেনি
আজ বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২২০ থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর সোনালি মুরগির কেজি রাখা হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকার মতো কমলেও ব্রয়লার মুরগির দাম ঈদের আগের দিনের মতোই রয়ে গেছে।
অন্যদিকে গরুর মাংসের দামও অপরিবর্তিত রয়েছে। আজ প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। ঈদের আগের দিনও এ দামেই গরুর মাংস বিক্রি হয়েছিল। তবে বাজারে গরুর মাংসের ক্রেতা ছিল খুবই কম।
টাউন হল বাজারের মাংস বিক্রেতা মঈনুদ্দিন আজ বেলা সাড়ে তিনটায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত মাত্র একটি গরুর মাংসই বিক্রি করছি।’
কৃষি মার্কেটের মুরগি বিক্রেতা আরশাদ নিয়াজি বলেন, সকাল থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ৩০টি মুরগি বিক্রি হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে এতক্ষণে অন্তত দেড় শ মুরগি বিক্রি হয়ে যেত।