নতুন বছরে প্রত্যাশা
মূল চ্যালেঞ্জ হবে ঋণ আদায়
করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খাত ছিল পর্যটন বাণিজ্য। ২০২০ সালে এ খাতের ব্যবসা বলতে গেলে শূন্যের কোঠায় নেমে গিয়েছিল। সেই অবস্থা থেকে কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে ’২১ সালে। নতুন বছরে কি পর্যটন ব্যবসা পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? আবার ভালো একটি বছর কাটানোর পর শেয়ারবাজার কি এ বছর নতুন উচ্চতায় উঠবে, নাকি হতাশ হতে হবে বিনিয়োগকারীদের? ’২১ সালে রেকর্ড মুনাফা করা ব্যাংক খাত ’২২ সালে কি আরও বেশি ব্যবসা করবে? আবার উদ্যোক্তাদের পরিকল্পনাই–বা কী? কথা বলেছেন সানাউল্লাহ সাকিব।
নতুন বছরের প্রত্যাশা ও চ্যালেঞ্জকে আমরা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করতে পারি। এর মধ্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, সামষ্টিক অর্থনীতি ও ব্যাংক খাত।
সামষ্টিক অর্থনীতিতে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে অনেক। উল্লেখযোগ্য প্রত্যাশাগুলো হলো মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির ধারা যেন অব্যাহত থাকে, ডলার ও টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা, মূল্যস্ফীতি যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং সিএমএসএমই ও কৃষি খাতে প্রণোদনা অব্যাহত রাখা।
এই প্রত্যাশাগুলোর বিপরীতে প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, সে অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেওয়া। অমিক্রনকে আমরা কীভাবে মোকাবিলা করছি, পুরো জনগোষ্ঠীকে আমরা টিকার আওতায় আনতে পারছি কি না—এগুলো হবে দেখার বিষয়।
আমাদের অর্থনীতির দুই মূল চালিকা শক্তি হলো তৈরি পোশাক রপ্তানি ও প্রবাসীদের পাঠানো আয় (রেমিট্যান্স)। জিডিপির প্রবৃদ্ধি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ—এ দুইয়ের ওপর নির্ভরশীল। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের ব্যাপক পরিমাণ মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি হচ্ছে। তার বিপরীতে যদি রপ্তানি তুলনামূলক না বাড়ে, সেটা হবে একটা বড় আঘাত। এ মুহূর্তে ডলার ও টাকার বিনিময় হারের ক্ষেত্রে ব্যাংক ও খোলা বাজারের মধ্যে বড় ব্যবধান বিরাজ করছে। এ ব্যবধান সাম্প্রতিক কালের সর্বোচ্চ। সুস্থ ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে এই ব্যবধান সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা উচিত।
কোভিড-১৯ প্রণোদনার ঋণের কারণে অর্থের সরবরাহ বৃদ্ধির ফলে বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ব্যাংকের সুদের হারের চেয়ে বেশি। ফলে মানুষের আর্থিক সম্পদ তার মূল্যমান হারাচ্ছে। এ অবস্থায় ২০২২ সালে মূল্যস্ফীতির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৫ শতাংশ ধরে রাখা সহজ হবে না। এ ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
ব্যাংক খাতের জন্য এ বছর আমাদের প্রত্যাশা থাকবে আমানত ও ঋণের প্রবৃদ্ধি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে রাখা। অন্যদিকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ, নিরাপত্তা সঞ্চিতি ও ব্যাংকের সার্বিক সুশাসনের গুণগত মানের উন্নয়ন করা। এ ক্ষেত্রে মূল চ্যালেঞ্জ দেখা দেবে ঋণের ‘পেমেন্ট হলিডে’ উঠে গেলে। তখন গ্রাহকেরা ঋণ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় পরিশোধ করতে পারছেন কি না, নাকি এসব ঋণ ব্যাংকের পোর্টফোলিওর গুণগত মানে আঘাত হানছে, সেটি বড় বিষয় হয়ে দেখা দেবে। যদিও ইতিমধ্যে অধিকাংশ বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। তবে কিছু ব্যবসায়ী বিশেষ করে সিএমএসএমই খাতের ব্যবসায়ীরা ক্ষেত্রবিশেষে এখনো কঠিন সময় পার করছেন।
ব্যাংকের জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জ হবে, একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কীভাবে সুদ আয়, মাশুল আয় ও আমানত ব্যয়ের কঠিন নিয়মকানুনের ভেতর থেকে শেয়ারধারীদের গ্রহণযোগ্য লভ্যাংশ দেওয়া যায়।
মাসরুর আরেফিন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সিটি ব্যাংক