প্রণোদনার ঋণের ২৫% গেছে বড় ১৫ গ্রুপের কাছে
বড় গ্রাহকদের করোনাভাইরাসজনিত আর্থিক ক্ষতি মোকাবিলায় সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। শিল্প ও সেবা খাতের এই গ্রাহকদের বাকি সাড়ে ৪ শতাংশ সুদ ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। কম সুদের এই ঋণের সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়নি কেউই। দফায় দফায় খেলাপি হওয়া ও পুনর্গঠন–সুবিধা নেওয়া ব্যবসায়ীরা যেমন এই ঋণ নিয়েছেন, তেমনি ভালো ব্যবসায়ীরাও তা পেয়েছেন।
তবে এই প্রণোদনা ঋণের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হলো সরকারি প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ। লোকসানি এই সংস্থা সোনালী ব্যাংক থেকে এই ঋণ নিয়েছে। বিমানের ঋণে সরকার সুদ ভর্তুকি দেবে ৪৫ কোটি টাকা। ১৫টি শিল্প গ্রুপ ৭ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা নিয়েছে। অর্থাৎ মূল প্রণোদনা তহবিলের ২৫ শতাংশ অর্থই গেছে তাদের কাছে। সব মিলিয়ে বড়দের প্রণোদনা তহবিলের টাকা পেয়েছে প্রায় তিন হাজার প্রতিষ্ঠান।
এ নিয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, বিমানকে প্রণোদনার ঋণ দেওয়া ঠিক হয়নি। সরকার চাইলে বাজেট থেকেই টাকা দিতে পারত। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকেরা ঋণবঞ্চিত হয়েছে।
খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ আরও বলেন, নীতিমালায় থাকা উচিত ছিল যারা দফায় দফায় খেলাপি হয়েছিল, ঋণ পুনর্গঠন–সুবিধা নিয়েছিল, তারা এই ঋণ পাবে না। শুধু ভালো শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রণোদনার ঋণ পাবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বড় দুষ্ট গ্রাহক ও তথাকথিত ব্যাংক মালিকেরা কম সুদের টাকা ভাগাভাগি করছেন। এ জন্য কম পরিচিত গ্রাহকেরা ঋণ পাচ্ছে না।
দেখা যাচ্ছে, বড় দুষ্ট গ্রাহক ও তথাকথিত ব্যাংক মালিকেরা কম সুদের টাকা ভাগাভাগি করছেন। এ জন্য কম পরিচিত গ্রাহকেরা ঋণ পাচ্ছে না।
করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৭ এপ্রিল ৬৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেন। এর আগে তৈরি পোশাক খাতের বেতন-ভাতার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেন তিনি।
শিল্প ও সেবা খাতের প্রণোদনা প্যাকেজটিই সবচেয়ে বড়। এর আকার শুরুতে ছিল ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা পরবর্তী সময়ে বেড়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। নতুন করে বিদেশি ও দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য ৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বেসরকারি খাতের শিল্প গ্রুপগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ৯৬১ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছে আবুল খায়ের গ্রুপ। তারা রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, জনতা, রূপালীসহ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে এই ঋণ নিয়েছে। চট্টগ্রামভিত্তিক গ্রুপটিকে দেওয়া ঋণে সরকার সুদ ভর্তুকি দেবে ৪৩ কোটি টাকা।
ব্যবসায়ীদের সহায়তা করতে কম সুদের এই ঋণ দেওয়া হচ্ছে। তাই শর্ত পূরণ করলেই ব্যাংকগুলো দিতে পারছে। কে বেশি পেল তা দেখা হচ্ছে না।
চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপও এই তহবিল থেকে ৮৫১ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। তাদের রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা, ইসলামীসহ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক প্রণোদনার ঋণ দিয়েছে। এস আলমের ঋণে সরকার সুদ ভর্তুকি দেবে ৩৮ কোটি টাকা।
ইস্পাত খাতের বিএসআরএম গ্রুপ সব মিলিয়ে ৬১৯ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছে। গ্রুপটির ঋণে সরকার সুদ ভর্তুকি দেবে ২৮ কোটি টাকা। আবাসন ও নিত্যব্যবহার্য পণ্য খাতের প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ ৬০০ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছে। তাদের ঋণে সরকার সুদ ভর্তুকি দেবে ২৭ কোটি টাকা। প্রাণ গ্রুপ ৫৪০ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছে, এতে সরকার সুদ ভর্তুকি দেবে ২৪ কোটি টাকা।
খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতের প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপ ৫০২ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছে, যেখানে সরকার ২৩ কোটি টাকা সুদ ভর্তুকি দেবে। অন্য উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ইস্পাত খাতের কেএসআরএম ৩২৫ কোটি টাকা ও জিপিএইচ ২৮৬ কোটি টাকা, এসিআই গ্রুপ পেয়েছে ৩০৪ কোটি টাকা ঋণ; নাভানা গ্রুপ ২৬৮ কোটি টাকা; বেক্সিমকো গ্রুপ ২৬০ কোটি টাকা; জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ২৩৫ কোটি টাকা; স্কয়ার গ্রুপ ২০২ কোটি টাকা এবং থারমেক্স গ্রুপ ১৯০ কোটি টাকার ঋণ পেয়েছে প্রণোদনা তহবিল থেকে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছিল, যেসব প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে ব্যাংক থেকে চলতি মূলধন সুবিধা নিয়েছে, তারা এই তহবিল থেকে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ চলতি মূলধন নিতে পারবে। শুধু ক্ষতিগ্রস্তরাই এ ঋণ পাবে। আর এ ঋণের মেয়াদ তিন বছর।
জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবসায়ীদের সহায়তা করতে কম সুদের এই ঋণ দেওয়া হচ্ছে। তাই শর্ত পূরণ করলেই ব্যাংকগুলো দিতে পারছে। কে বেশি পেল, তা দেখা হচ্ছে না।