টাকার সংকট, এক দিনে ২৫ হাজার কোটি টাকা ধার দিল বাংলাদেশ ব্যাংক
টানা পাঁচ দিন ব্যাংক বন্ধ, এটিএম বুথে টাকার স্বল্পতা এবং ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ ছিল। যে কারণে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে নগদ টাকার চাহিদা বেড়ে গেছে। ফলে গত বুধবার কার্যক্রম শুরুর প্রথম দিনেই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ধার দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো নিয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। বাকি টাকা নিয়েছে অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে টাকা ধার দেওয়ার এই তথ্য জানিয়েছে।
অবশ্য এভাবে টাকা ধার দেওয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ। ব্যাংকগুলো প্রতিদিনই বিল-বন্ড জমা দিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির কাছ থেকে টাকা ধার নেয়। এর বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদে নেয়, সেটাকে বলে সুদ আয়। এই আয় বাংলাদেশ ব্যাংকের মুনাফায় যুক্ত হয়।
ধার নেওয়া এই অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে থাকা হিসাবে ঘাটতি ও নগদ জমায় (সিআরআর) ঘাটতি হিসেবে ব্যবহার করে অনেক ব্যাংক। আবার অনেক ব্যাংক নগদ টাকা নিয়ে গ্রাহকের চাহিদা মেটায়। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক খাতে নগদ টাকার চাহিদা বেড়ে গেছে। ব্যাংকগুলোর শাখার পাশাপাশি এটিএমেও নগদ টাকার চাহিদা বেড়েছে।
১৮ জুলাই বৃহস্পতিবারের পর পাঁচ দিনের ছুটি শেষে গত বুধবার ব্যাংকগুলো খুলেছে। গত শুক্র-শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির পর রবি থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত টানা তিন দিন সাধারণ ছুটি ছিল। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া বিক্ষোভ সহিংস আকার ধারণ করায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।
এই সময়ে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় ব্যাংকের ডিজিটাল লেনদেন প্রায় শূন্যে নেমে আসে। ব্যাংক বন্ধ ও কারফিউয়ের কারণে অনেক এটিএম টাকার সংকটে অকার্যকর হয়ে যায়। ব্যাংকগুলো বন্ধ থাকায় ইলেকট্রনিক মানি তৈরি বন্ধ হয়ে যায়। যে কারণে সারা দেশে বিকাশ, নগদ ও রকেটের মতো মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর (এমএফএস) এজেন্ট কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ে। গ্রাহকেরাও সেবা নিতে ভোগান্তিতে পড়েন। সব মিলিয়ে নগদ টাকার চাহিদা বেড়ে যায়।
বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য গত বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকে রেপো, অ্যাসিউরড রেপো, অ্যাসিউরড লিকুইডিটি সাপোর্ট (এএলএস) এবং শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর জন্য ইসলামিক ব্যাংকস লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটির (আইবিএলএফ) নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। এই নিলামে ৭ দিন মেয়াদি রেপো সুবিধার আওতায় ১৪টি ব্যাংক ও ২টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ৫ হাজার ৭ কোটি টাকা, ১৪ দিন মেয়াদি রেপো সুবিধায় ৯টি ব্যাংককে ২ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, ২৮ দিন মেয়াদি রেপোতে ১২টি ব্যাংক ও ২টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ৭ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা দেওয়া হয়।
বুধবার ১৮০ দিন মেয়াদি অ্যাসিউরড রেপোর আওতায় ৩টি ব্যাংককে ৫ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা এবং ১ দিন মেয়াদি অ্যাসিউরড লিকুইডিটি সাপোর্টের আওতায় ১১টি প্রাইমারি ডিলার ব্যাংককে ৩ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা দেওয়া হয়। পাশাপাশি ১৪ দিন মেয়াদি ইসলামিক ব্যাংকস লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটির আওতায় ১টি ব্যাংককে ৪৯৭ কোটি টাকা ও ২৮ দিন মেয়াদে ৫টি ইসলামি ধারার ব্যাংককে ৯৮৪ কোটি টাকা দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে এদিন ২৫ হাজার ৫২১ কোটি টাকা ধার দেওয়া হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ৭ দিন মেয়াদে টাকা ধারের সুদহার ছিল ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ, যা ১৪ দিন মেয়াদে ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ ও ২৮ দিন মেয়াদে ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ ছিল। এ ছাড়া অ্যাসিউরড রেপো ও অ্যাসিউরড লিকুইডিটির সুদহার ছিল সাড়ে ৮ শতাংশ, যা ইসলামি ধারার ব্যাংকের জন্য ছিল সাড়ে ৫ শতাংশ। ২৮ দিন মেয়াদি ইসলামি ধারার ব্যাংকের জন্য মুনাফার হার ছিল ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে সাড়ে ৬ শতাংশ।
জানা গেছে, গত মে মাসে ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৭০ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। চলতি মাসে নগদ টাকার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকের বাইরে আবার নগদ টাকার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।