ছোট–বড় আমদানিতে ডলারের এক দাম

মার্কিন ডলারছবি: সংগৃহীত

ডলারের বাজারকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে এবার কেনা ও বিক্রিতে সর্বোচ্চ এক টাকা পার্থক্য নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া ছোট–বড় সব আমদানিকারকের কাছে একই দামে ডলার বিক্রি করতে হবে। একইভাবে প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয়ের ডলার একই দাম দিয়ে কিনতে হবে। প্রতিদিন এক দামে ডলার কেনা ও বিক্রি করতে হবে। ডলারের সব ধরনের দাম ব্যাংকের শাখাগুলোতে ডিজিটাল বোর্ডে প্রদর্শন করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল বৃহস্পতিবার এ নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

ডলারের দাম বাজারমুখী করার উদ্যোগের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এদিকে ব্যাংকগুলো গতকাল নিজেদের মধ্যে ১২২ টাকা দরে ২২ লাখ ৫০ হাজার ডলার কেনাবেচা করেছে, যা বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। ফলে আমদানিতে ডলারের দাম পড়ছে ১২৩ টাকা। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ডলারের দাম ১২২-১২৩ টাকায় মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে। মাঝখানে ১২৬-১২৭ টাকায় উঠে আবার দাম আগের পর্যায়ে ফিরে এসেছে। প্রবাসী আয় বাড়ায় রিজার্ভ বেড়েছে, কমেছে বকেয়া আমদানি দায়।

এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছিলেন, ১১৯ টাকার সঙ্গে সর্বোচ্চ আড়াই শতাংশ ডলারের দাম বাড়তে পারবে। ফলে ডলারের কেনা দাম ১২২ টাকা পর্যন্ত উঠতে পারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ডলার কেনা ও বিক্রিতে এক টাকা পার্থক্য হতে পারবে। এক দিনে সব ধরনের ডলার কেনার ক্ষেত্রে একই দাম দিতে হবে। ব্যাংকগুলো প্রবাসী ও রপ্তানি আয় থেকে বড় পরিমাণ ডলার সংগ্রহ করে। এ ছাড়া ফ্রিল্যান্সারদের কাছ থেকেও ডলার পায় ব্যাংক। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সব ধরনের আমদানিকারকের কাছে একই দামে ডলার বিক্রি করতে হবে।

সব শাখাকে এই নির্দেশনা মানার কথা জানিয়ে দিয়ে ডলার কেনাবেচার তথ্য নিয়মিত কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবগত করতে বলা হয়েছে। এই নির্দেশনা পরিপালনে কোনো বিচ্যুতি ঘটলে আর্থিক জরিমানাসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, ব্যাংক কোম্পানি আইন ও বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনের বিধানে যে শাস্তির কথা বলা আছে, এ ক্ষেত্রে তার অতিরিক্ত শাস্তি হতে পারে।

গত মঙ্গলবার এক প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, এখন থেকে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের অনুমোদিত ব্যাংক শাখাগুলো (এডি ব্রাঞ্চ) আলোচনার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার দাম নির্ধারণ করতে পারবে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ৫ জানুয়ারি থেকে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের অনুমোদিত শাখাগুলো থেকে প্রতিদিন দুইবার বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচার তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংককে সরবরাহ করবে। এক লাখ ডলারের বেশি কেনাবেচার তথ্য বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে। এ ছাড়া বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচার তথ্য বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, ১২ জানুয়ারি থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার কেনাবেচার তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিদিনের একটি ভিত্তিমূল্য বা রেফারেন্স প্রাইস প্রকাশ করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এই ভিত্তিমূল্য প্রকাশ করা হবে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বিদায়ী ২০২৪ সালের মধ্যে ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করার পরামর্শ দিয়েছিল। এর অংশ হিসেবে সম্প্রতি বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী শীর্ষ ২৫ ব্যাংকের সঙ্গে সভা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা জানানো হয়, যা পরে প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়। ওই সভায় গভর্নর জানিয়ে দেন, যাঁরা ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে ডলার কেনাবেচা করছেন, তাঁদের শাস্তি হওয়া উচিত। প্রবাসী ও রপ্তানি আয়ের ডলার একই দামে কিনতে হবে।