দেশে ডলারের দাম ১২৭ টাকা ছাড়িয়েছে
বাংলাদেশের মুদ্রাবাজারে মার্কিন ডলারের দাম আবারও ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে। ব্যাংকগুলো বেশি দামে প্রবাসী আয় কিনছে। ফলে ব্যবসায়ীদের পণ্য আমদানিতে ডলারের দাম বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে। এদিকে খোলাবাজারেও ডলারের দাম বেড়ে ১২৭ টাকা ছাড়িয়েছে। দুটো মিলিয়ে ডলারের বাজার আবারও অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকগুলোকে চলতি মাসের মধ্যে পুরোনো আমদানি দায় পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ কারণে ব্যাংকগুলো বেশি দামে ডলার কিনছে। এতে অবশ্য আগের চেয়ে বেশি প্রবাসী আয় আসছে।
জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কিনছে। ফলে এক সপ্তাহে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৯ কোটি ডলার বেড়েছে। তাতে গত বুধবার মোট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৯৪ কোটি ডলার, যা আগের বুধবার ছিল ২ হাজার ৪৭৫ কোটি ডলার।
যে কারণে ব্যাংকে চড়া ডলারের দাম
জানা গেছে, ডিসেম্বরের শুরুতে পুরোনো আমদানি দায় পরিশোধের জন্য সরকারি খাতের কয়েকটি ও বেসরকারি খাতের একটি ব্যাংক বেশি দামে প্রবাসী আয়ের ডলার কিনতে শুরু করে। এতে অন্য ব্যাংকগুলোও বেশি দামে ডলার কিনতে বাধ্য হয়। ডিসেম্বরের আগে তারা প্রবাসীদের কাছ থেকে প্রতি ডলার কিনত ১২১-১২২ টাকায়। এখন তা বেড়ে ১২৭ টাকা ৫০ পয়সায় উঠেছে। ব্যাংকে নগদ ডলার এখনো ১২৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ক্রেডিট কার্ডসহ অন্যান্য কার্ডে ডলারের দাম ১২৩ টাকা রাখা হচ্ছে।
মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধি সাময়িক। এই বাড়তি দাম বেশি দিন স্থায়ী হবে না। আশা করছি, আগামী জানুয়ারি মাসেই ডলারের দাম কমে আসবে।সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক।
প্রবাসী রেমিট্যান্স হাউসগুলোর সূত্রে জানা গেছে, সোনালী এক্সচেঞ্জ কোম্পানি ১২৪ টাকায়, রিয়া মানি এক্সচেঞ্জ ১২৪ টাকা ১৮ পয়সায়, টেপটেপ সেন্ড ১২৪ টাকা ৭০ পয়সায় ও ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ১২৫ টাকা ৬০ পয়সায় ডলার কিনেছে। ফলে এর চেয়ে বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে।
মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় অবশ্য প্রবাসী আয় বাড়ছে। চলতি ডিসেম্বরের প্রথম ১৪ দিনে ১৩৮ কোটি ১৩ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। দৈনিক গড়ে এসেছে প্রায় ৯ কোটি ৮৬ লাখ ৬৯ হাজার ডলার। গত বছর পুরো ডিসেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৯৯ কোটি ১২ লাখ ৬০ হাজার ডলার। তখন দৈনিক গড়ে প্রবাসী আয় এসেছিল ৬ কোটি ৪২ লাখ ৩৪ হাজার ডলার। গত নভেম্বরে প্রবাসী আয় আসে ২২০ কোটি ডলার।
প্রবাসী আয় হলো দেশের ডলার জোগানের একমাত্র দায়বিহীন উৎস। কারণ, এই আয়ের বিপরীতে কোনো বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে হয় না অথবা কোনো দায় পরিশোধ করতে হয় না। রপ্তানি আয়ের বিপরীতে ডলার এলেও আবার কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি করতে ডলার খরচ করতে হয়। বিদেশি ঋণও শোধ করতে হয় ডলারে। সে জন্য প্রবাসী আয় যত বাড়বে, দেশে ডলারের সংকট তত কমবে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বছর শেষ হয়ে আসায় অনেক আমদানি বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। তেল, রাসায়নিক সার ও রমজানের পণ্য আমদানির জন্য বেশি ডলার প্রয়োজন। এই কারণে ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। অন্যদিকে আগের মতো সব রেমিট্যান্স হাউস থেকে ডলার মিলছে না। কিছু কোম্পানি অন্য ছোট কোম্পানি থেকে ডলার কিনে নিচ্ছে। তাদের কাছ থেকে বেশি দামে আমাদের ডলার নিতে হয়। ফলে দাম বেড়ে যাচ্ছে। তবে সামনের মাসে দাম আবার কমবে।’
খোলাবাজারেও দাম ঊর্ধ্বমুখী
এদিকে খোলাবাজারেও মার্কিন ডলারের দাম অনেকটা বেড়ে গেছে। এক সপ্তাহের কিছু বেশি সময়ে কেনাবেচা উভয় ক্ষেত্রেই ডলারের দাম অন্তত ৪ টাকা বেড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর খোলাবাজারে প্রতি ডলার কেনা হচ্ছে ১২৬ টাকা ৭০ পয়সায়, আর বিক্রি হচ্ছে ১২৭ টাকা ৫০ পয়সায়। মাত্র ১০ দিন আগেও খোলাবাজারে ১২২ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার কেনা হয়েছে। তখন ডলার বিক্রি হয়েছে ১২৩ টাকায়।
মূলত দুটো কারণে খোলাবাজারে ডলারের দাম বেড়েছে বলে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান। প্রথমত, বিদেশগামী যাত্রীদের কাছে ডলারের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। কারণ, ডিসেম্বরে অনেকেই ছুটি কাটাতে বিদেশে যাচ্ছেন। তাঁদের বাড়তি চাহিদা মেটাতেও ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত দামে প্রবাসী আয় কিনছে।
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধি সাময়িক। এই বাড়তি দাম বেশি দিন স্থায়ী হবে না। আশা করছি, আগামী জানুয়ারি মাসেই ডলারের দাম কমে আসবে।