ইউনিয়ন ও কমার্স ব্যাংক
গ্রাহকেরা টাকা না পেলেও নিজেদের সব টাকা তুলে নিয়েছেন দুই ব্যাংকের এমডি
জ্যেষ্ঠ নাগরিক কামরুন নাহার ইউনিয়ন ব্যাংকে তিন বছর আগে প্রায় এক কোটি টাকা স্থায়ী আমানত হিসেবে রাখেন। গত জুলাই থেকে তিনি সেই টাকা নগদে উত্তোলন ও অন্য ব্যাংকে স্থানান্তরের চেষ্টা করছেন। এখন পর্যন্ত কোনো টাকা তিনি তুলতে পারেননি। শুধু কামরুন নাহার নন, ব্যাংকটি কোনো গ্রাহকেরই টাকা ফেরত দিতে পারছে না। তবে মাঝেমধ্যে পরিচিত গ্রাহকদের ১০-১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দেয়।
একই অবস্থা বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকেরও। দুটি ব্যাংকই নিজ নিজ কর্মকর্তাদেরও বেতনের টাকা তোলার সীমা বেঁধে দিয়েছে। কেউ ১০ হাজার, আবার কেউ ২০ হাজার টাকা তুলতে পারেন। তবে ব্যাংক দুটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা (এমডি) তাঁদের বেতনের পুরো টাকা ঠিকই তুলে ফেলেছেন। এর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকের এমডি এ বি এম মোকাম্মেল হক চৌধুরী ২ ও ৩ অক্টোবর তুলে নিয়েছেন ১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। কমার্স ব্যাংকের এমডি তাজুল ইসলাম গত ২৬ সেপ্টেম্বর একবারে তুলেছেন ৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তাঁদের ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনায় এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্যাংক দুটি এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংক দুটির পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। স্বতন্ত্র পরিচালকেরা এখন দুই ব্যাংকের চেয়ারম্যান। এর মধ্যে কমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান হয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক আতাউর রহমান। তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অবসরের পর প্রায় পাঁচ বছর এস আলমের মালিকানাধীন ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন।
দেখা গেছে, কমার্স ব্যাংকের এমডি তাজুল ইসলামের হিসাবে ২৫ আগস্ট বেতনের ৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা জমা হয়। এরপর ২৯ আগস্ট তিনি আগের জমাসহ ১৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা অন্য ব্যাংকের হিসাবে নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে বিশেষ ব্যবস্থায় পয়লা সেপ্টেম্বর সেই টাকা অন্য হিসাবে নিতে সক্ষম হন। ২৫ সেপ্টেম্বর তাঁর হিসাবে ৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা বেতন বাবদ জমা হওয়ার পরদিনই তিনি পুরো টাকা তুলে ফেলেন।
জানতে চাইলে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আয়কর দেওয়ার জন্য পে-অর্ডার করেছিলাম। এ ছাড়া খরচের জন্য বেতনের টাকা তোলা হয়েছে। ব্যাংকে টাকার সংকট রয়েছে। এ জন্য অনেকে টাকা পাচ্ছেন না। ভবিষ্যতে এটি ঠিক হয়ে যাবে। আমরা ঋণ আদায়ের চেষ্টা করে যাচ্ছি। আজও ১০ কোটি টাকা আদায় হয়েছে।’
কমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কবে তারল্যসংকট মিটবে, এটা বলতে পারব না।’
ইউনিয়ন ব্যাংকের এমডি এ বি এম মোকাম্মেল হক চৌধুরী তাঁর ব্যাংক হিসাব থেকে পয়লা সেপ্টেম্বর ২ লাখ টাকা ও ৫ সেপ্টেম্বর ৪ লাখ ২৮ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। ২৫ সেপ্টেম্বর তাঁর হিসাবে ৫০ লাখ টাকা জমা হয়। একই দিন মাসের বেতনের ১০ লাখ ৮ হাজার ২৪২ টাকা জমা হয়। ২৬ সেপ্টেম্বর ওই হিসাবে জমা হয় ৪২ লাখ টাকা। এরপর তিনি ২৯ সেপ্টেম্বর ৫০ হাজার টাকা, ২ অক্টোবর ৫০ লাখ টাকা এবং ৩ অক্টোবর ৫০ লাখ ও ৫৩ লাখ টাকা তোলেন।
এ নিয়ে এ বি এম মোকাম্মেল হক চৌধুরীকে ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ফরীদ উদ্দীন আহমদকেও ফোনে পাওয়া যায়নি।