সাক্ষাৎকার
দেশে ডিজিটাল লেনদেনের কাঠামো তৈরি হয়ে গেছে
দেশের ব্যাংক খাতে ডিজিটাল লেনদেন, কার্ডের ব্যবসা ও নগদবিহীন লেনদেনসহ নানা বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন দেশীয় মালিকানার বেসরকারি দি সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন।
প্রথম আলো: কার্ড, এমএফএস, ইন্টারনেট ব্যাংকিং বা অ্যাপসসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বড় অঙ্কের ডিজিটাল লেনদেন হচ্ছে। এসব সেবার ভবিষ্যৎ কেমন দেখছেন?
মাসরুর আরেফিন: বর্তমান যেহেতু ভালো, ভবিষ্যৎ তাই আশাব্যঞ্জক। আমাদের সিটিটাচ ডিজিটাল ব্যাংকিং অ্যাপে গত বছর মানুষ ঘরে বসেই লেনদেন করেছেন প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চালু করা এনপিএসবি বা আরটিজিএস গেটওয়ের কথাই ধরেন। কোটি কোটি টাকা ব্যাংক থেকে ব্যাংকে চলে যাচ্ছে মুহূর্তের মধ্যে। আমাদের ব্যাংকের কার্ড দিয়ে অন্য ব্যাংকের এটিএম থেকে টাকা তোলা যাচ্ছে মুহূর্তেই। সামনে ট্যাপ অ্যান্ড গো আসবে, হাতে পরার ঘড়ির মধ্যে ভার্চ্যুয়াল কার্ড আসবে। আর বিকাশ-নগদ-রকেট এরা টাকা লেনদেন ও ইনস্ট্যান্ট পণ্য ক্রয়কে অ্যাপ-টু-অ্যাপ ট্রান্সফারভিত্তিক করে অন্য মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে।
প্রথম আলো: আপনাদের হাত ধরে এ দেশে ক্রেডিট কার্ড জনপ্রিয়তা পায়। ক্রেডিট কার্ডের ভবিষ্যৎ কেমন দেখছেন?
মাসরুর আরেফিন: ক্রেডিট কার্ড হলো প্লাস্টিকে ঢোকানো ‘পারসোনাল ওভারড্রাফট’ ধরনের ঋণ। সেটা পেতে হলে ঋণ পরিশোধের যোগ্যতার প্রমাণ লাগবে, আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণ লাগবে। আমাদের দেশে এখন রিটার্ন জমা দেন এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় ২৫-৩০ লাখ। এর মধ্যে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা ২১ লাখ। সুতরাং যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষের সংখ্যার বিচারে কার্ডসংখ্যা ঠিকই আছে। ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়ার নিয়মটা শিথিল করা হলে ক্রেডিট কার্ড অতি দ্রুত ১ কোটি ছোঁবে, নিম্ন আয়ের মানুষও ক্রেডিট কার্ড পাবেন। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বিচারে সেটা দরকার। ক্রেডিট কার্ড পুরোপুরি জামানতবিহীন ঋণ হলেও ঋণ শোধের হার খুব ভালো। রাজধানী ও বিভাগীয় শহরের বাইরে ক্রেডিট কার্ড না যাওয়ার প্রধান কারণ হলো পর্যাপ্ত পরিমাণ যোগ্যতাসম্পন্ন গ্রাহক সেখানে না থাকা।
প্রথম আলো: বিভিন্ন উৎসবে আপনারা গ্রাহকদের নানা ছাড় দিচ্ছেন। এতে ব্যবসা কতটা বাড়ে।
মাসরুর আরেফিন: গত বছর ঈদের সময় এসব ছাড়ে রোজার এক মাসে আমাদের ব্যাংকের কার্ডে কেনাকাটা হয়েছিল ৪০১ কোটি টাকা, যেটা এবার ৬০০ কোটি ছোঁবে। আর গত বছর এই এক মাসে আমাদের পিওএস মেশিনে লেনদেন হয় ৬৯৫ কোটি টাকা, যেটা এবার ৮৫০ কোটি পেরিয়ে যেতে পারে। ১৮ রোজা পর্যন্ত হিসাব তাই-ই বলছে। সব গ্রাহকের পকেটে নানা ব্যাংকের কার্ড। গ্রাহক কিন্তু পকেট থেকে এসব উৎসবের মাসে বের করেন অফারসম্পন্ন কার্ডই। যেসব ব্যাংক ভালো ২৪ ঘণ্টার সেবার ব্যবস্থা করে ও ভালো অফার দেয়, উৎসবের মাসে কার্ড ব্যবসা তারই হয়, নিঃসন্দেহে।