বাংলাদেশ থেকে লাইসেন্স পাওয়া কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি কোনো কারণে দেউলিয়া হয়ে যায়, তাহলে ওই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীরা দুই লাখ টাকা পর্যন্ত বিমা সুরক্ষা পাবেন। এ সুরক্ষা ‘ক্ষতিপূরণ’ হিসেবে দেওয়া হবে। এত দিন এ ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ছিল এক লাখ টাকা। অধ্যাদেশটি পাস হলে বিদ্যমান ব্যাংক আমানত বিমা আইন-২০০০ বাতিল হয়ে যাবে।
গ্রাহকদের আমানতের টাকার সুরক্ষা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে সরকার ‘আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ নামে একটি অধ্যাদেশ জারি করতে যাচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ অধ্যাদেশের একটি খসড়া তৈরি করে জনগণের কাছ থেকে মতামত চেয়েছে। মতামত দিতে হবে ds.cb@fid.gov.bd-এই ঠিকানায়। তবে মতামত দেওয়ার জন্য কোনো সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, দেশে বর্তমানে ১৫ কোটি ৭১ লাখ ২০ হাজার ২২৭টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। এর মধ্যে ২ লাখ বা তার নিচে অর্থ আছে—এমন হিসাবের সংখ্যা ১৪ কোটি ৭১ লাখ ৩৩ হাজার ৭৩৩টি। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশ পাস হলে ৯৫ শতাংশ আমানতকারী তাঁদের আমানতের নিরাপত্তা পাবেন। ব্যাংক দেউলিয়া হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন মূলত বেশি টাকা জমা রাখা আমানতকারীরা। দেউলিয়া ব্যাংকের বড় আমানতকারীদের সরকারের পক্ষ থেকে শেয়ার দিয়ে বা অন্য কোনোভাবে ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার উদাহরণ রয়েছে।
এ নিয়ে জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে খসড়া হয়েছে তার ওপর মতামত চাওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে নিয়ে আমরা একটা বৈঠকও করেছি। আগামী ঈদের পর আরেকটা বৈঠক আছে। খসড়া চূড়ান্ত করা হবে আরও পরে।’
খসড়ায় বলা হয়েছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা থাকা আমানতের সুরক্ষায় ‘আমানত সুরক্ষা তহবিল’ গঠন করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আলাদা হিসাবের মাধ্যমে তা পরিচালিত হবে। বর্তমানে আমানত বিমা ট্রাস্ট তহবিলে অর্থ জমা করার বিধান আছে। এ তহবিলের অর্থই আমানত সুরক্ষা তহবিলে প্রারম্ভিক জমা হিসেবে স্থানান্তরিত হবে। আমানতকারীরা সুরক্ষা পাবেন আমানত সুরক্ষা তহবিল থেকে। তিন বছর পরপর এর পরিমাণ পর্যালোচনা করা হবে।
নতুন অধ্যাদেশ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক আমানত সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ গঠন করবে। এই কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মিত দায়িত্ব যেমন রেগুলেটরি, সুপারভাইজরি ও রেজল্যুশন সম্পর্কিত কার্যক্রম থেকে আলাদা ও স্বতন্ত্র হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ‘ডিপোজিট প্রোটেকশন ডিভিশন’ নামে একটি আলাদা বিভাগও গঠন করবে।
সরকারের, সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান-স্বশাসিত সংস্থা ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের, বিদেশি সরকারের, বিদেশি সরকারের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আমানত ইত্যাদি এ অধ্যাদেশের আওতামুক্ত থাকবে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।
বলা হয়েছে প্রিমিয়াম সময়মতো পরিশোধ না করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিষ্ঠানের চলতি হিসাব থেকে টাকা কেটে আমানত সুরক্ষা তহবিলের হিসাবে জমা করবে। বাংলাদেশ ব্যাংক বিলম্বিত প্রিমিয়ামের ওপর জরিমানাও আরোপ করতে পারবে।
আমানত সুরক্ষা ব্যবস্থার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সাত সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ। এ পর্ষদের চেয়ারম্যান হবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। পরিচালনা পর্ষদ তিন বছর অন্তর কমপক্ষে একবার সুরক্ষিত আমানতের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করবে।
জানতে চাইলে ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘খসড়া পেয়েছি। আমরা এর ওপর কাজ করছি। দুই লাখ টাকার বিষয়টিকে আমরা স্বাগত জানাই। আরও বেশি হলে ভালো হতো। ভবিষ্যতে বেশি করা হবে বলে আমরা আশাবাদী।’
কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কারও যদি এক কোটি টাকা আমানত থাকে তখন কী হতে পারে—এমন প্রশ্নের জবাবে সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, সে ক্ষেত্রেও আমানতকারী দুই লাখ টাকাই পাবেন। বাকি টাকা মার যাবে। বিশ্বজুড়েই এই চর্চা। টাকা মার যাওয়া থেকে রক্ষা পেতে হলে আমানতকারীদের উচিত হবে ব্যাংকের পর্ষদে কারা আছেন, এর আর্থিক সক্ষমতা কেমন, সুশাসন কেমন, ঋণমান কেমন—এসব দেখে আমানত জমা রাখা।