২ হাজার কোটি টাকার পরিচালন মুনাফার ক্লাবে আরও চার ব্যাংক

সদ্য বিদায়ী ২০২৪ সালে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি পরিচালন মুনাফার তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে বেসরকারি খাতের আরও চার ব্যাংক। ব্যাংক চারটি হলো ব্র্যাক ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংক। এই তালিকায় আগে থেকেই ছিল ইসলামী ব্যাংক। তার সঙ্গে নতুন করে ২০২৪ সালে উল্লেখিত চার ব্যাংক যুক্ত হয়েছে। এসব ব্যাংক এখন নিরীক্ষা শেষে ১ হাজার কোটি টাকা নিট বা প্রকৃত মুনাফার আশা করছে। ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে সুদহার বৃদ্ধি। এ ছাড়া কমিশন আয়, ট্রেজারি ও ডলার ব্যবসা থেকেও ভালো মুনাফা করেছে ব্যাংকগুলো।

ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা প্রকৃত মুনাফা নয়। পরিচালন মুনাফা থেকে করপোরেট কর ও ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতিসহ অন্যান্য খরচ বাদ দেওয়ার পর প্রকৃত মুনাফার তথ্য পাওয়া যায়। এর আগে ২০২৩ সালে ইসলামী ব্যাংক ২ হাজার কোটি টাকা বেশি পরিচালন মুনাফা করেছিল। এবারও ব্যাংকটি সর্বোচ্চ পরিচালন মুনাফা করেছে। তবে শেষ পর্যন্ত প্রকৃত মুনাফা কোথায় দাঁড়াবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ, ব্যাংকটির বিপুল ঋণ এরই মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে।

ইসলামী ব্যাংক

২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশি পরিচালন মুনাফা করেছে ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটি সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। ২০২৩ সালে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। তবে ওই বছর প্রকৃত মুনাফা কমে দাঁড়ায় ৬১০ কোটি টাকায়। ২০২২ সালে ব্যাংকটি ২ হাজার ২১৫ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফার বিপরীতে নিট মুনাফা করেছিল ৫৯২ কোটি টাকা।

এবারও রেকর্ড পরিচালন মুনাফা করলেও শেষ পর্যন্ত প্রকৃত মুনাফা অনেক কমে যেতে পারে। কারণ, এস আলমের নেওয়া ব্যাংকটির অর্ধেক ঋণই আদায় হচ্ছে না। গত জুনে ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৭ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা, যা সেপ্টেম্বর শেষে বেড়ে হয়েছে ১৭ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা।

ব্র্যাক ব্যাংক

ইসলামী ব্যাংকের পর বিদায়ী বছরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পরিচালন মুনাফা করেছে ব্র্যাক ব্যাংক। ব্যাংকটি পরিচালন মুনাফা করেছে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে যা ছিল ১ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। আর গত বছর নিট মুনাফা ছিল ৭৩০ কোটি টাকা। ২০২৪ সালে পরিচালন মুনাফায় ৭২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হওয়া ব্যাংকটির প্রকৃত মুনাফা হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পূবালী ব্যাংক

দেশীয় উদ্যোক্তাদের গড়া সবচেয়ে পুরোনো পূবালী ব্যাংক বিদায়ী ২০২৪ সালে পরিচালন মুনাফা করেছে ২ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা। আগের বছরের চেয়ে যা ৫৫ শতাংশ বেশি। ২০২৩ সালে ব্যাংকটি ১ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছিল। তার বিপরীতে নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছিল ৬৭৯ কোটি টাকা।

পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক ব্যাংক খারাপ হয়ে যাওয়ায় আমরা ভালো আমানত পেয়েছি। পাশাপাশি ভালো গ্রাহকেরাও আমাদের ব্যাংকে যুক্ত হয়েছে। তাই বছর শেষে ভালো মুনাফা করতে পেরেছি। তবে বছর শেষে প্রকৃত মুনাফা কত হবে, তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনের ওপর নির্ভর করছে। আশা করছি, তা হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।’

সিটি ব্যাংক

দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ভোক্তা ঋণে বেশ এগিয়ে রয়েছে সিটি ব্যাংক। ব্যাংকটিতে গ্রাহক হিসেবে রয়েছে ভালো অনেক করপোরেট ও এসএমই প্রতিষ্ঠান। ফলে বিদায়ী বছরে ব্যাংকটি প্রথমবারের মতো ২ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। ওই বছর ব্যাংকটি ৬১৫ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছিল। ব্যাংকটি জানিয়েছে, তাদের মোট আয়ের ৬৪ শতাংশ এসেছে ঋণের সুদ আয় থেকে। আর ঋণপত্র কমিশন ও মাশুল থেকে ১২ শতাংশ। সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ থেকে এসেছে ১৯ শতাংশ। ভালো মুনাফা হওয়ার আরেক বড় কারণ এক বছরে ব্যাংকটির আমানত বেড়েছে ১২ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, সিটি ব্যাংকের ওপর ভরসা করে মানুষ টাকা রেখেছে। পাশাপাশি আয়-ব্যয়ের অনুপাত ৬০ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে মাত্র ৪২ শতাংশে। ফলে গত বছর রেকর্ড পরিচালন মুনাফা হয়েছে। ব্যাংকের কর্মীদের বেতন বাড়িয়ে বেতন খাতে ৩০০ কোটি টাকা খরচ বাড়ানো হয়েছে। এতে কর্মীরা উজ্জীবিত এবং এই ব্যাংকে কাজ করে গর্বিত। পরিচালনা পর্ষদ সৎ, শিক্ষিত এবং ব্যাংকটির ভালোর জন্য নিবেদিতপ্রাণ। এসবও মুনাফা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ। সামনে প্রকৃত মুনাফায় ব্যাংক একটি বিশেষ মাইলফলক অর্জন করবে।

ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংক

ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংক বিদায়ী বছরে ২ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। ওই বছর শেষে ব্যাংকটির নিট মুনাফা ছিল ৮৫৪ কোটি টাকা। যা ছিল দেশীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। এই ব্যাংকটির তহবিল খরচ সবচেয়ে কম।

ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংকের এমডি আবুল কাশেম মো. শিরিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের খেলাপি ঋণ ১ শতাংশ কমে এসেছে। বিদায়ী বছরে এসএমই ও ভোক্তাঋণ আমরা বেশ বাড়িয়েছি। আমাদের তহবিল খরচও সবচেয়ে কম। ফলে এত মুনাফা করা সম্ভব হয়েছে। নতুন বছরে করপোরেট ঋণ আরও কমিয়ে এসএমই ও ভোক্তাঋণ বাড়ানো হবে। পাশাপাশি পোশাক খাত থেকে বের হয়ে অন্য খাতে ঋণ বাড়ানো হবে।’